দীর্ঘদিন ধরে জলাভূমিতে পরিণত হওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সংস্কারে নজর পরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির। তাদের নিজস্ব অর্থায়নেই আপাতত আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক খেলা না হলেও আপাতত ফাস্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন এবং প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলার আয়োজন করা হবে। বাকি কাজগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এনএসপি সম্পন্ন করবে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির পরিচালক মো. আকরাম ও তানভীর আহমেদ টিটু সরেজমিনে স্টেডিয়াম এবং সংস্কার কাজের পরিদর্শন করেন।
এসময় সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আকরাম খান বলেন, আমরা প্লেয়ারদের সুবিধা দিতে চাই। যারা ক্রিকেট খেলছে খেলবে তাদের খেলার সুযোগ দিয়ে থাকি। তার মধ্যে আমরা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মাঠ নেয়ার চিন্তা করছি। এই স্টেডিয়ামে আমাদের অনেক স্মৃতি আছে। অনেক বড় বড় খেলা খেলেছি। যে কোনো কারণেই মাঠটা আমরা প্রোপারলি পাচ্ছিলাম না খেলার উপযোগী ছিল না। এটা এনএসপি ঠিক করার কথা যেহেতু উনাদের সময় লাগবে, আমরা বিসিবির টাকায় কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। অনেকগুলো ভেন্যুর মধ্যে এটা অন্যতম ভেন্যু। মাঠটা যদি আমরা ভালোভাবে তৈরি করে দিতে পারি প্লেয়াররা পাবে। যা বাংলাদেশের টিকেটের জন্য অনেক উপকার হবে।
তিনি আরও বলেন, মাঠটা আমাদের অনেক উঁচু করতে হবে। যেহেতু বাহিরের ড্রেনিং সিস্টেমটা অনেক খারাপ। যতটুকু পারি মাঠটা উঁচু করে খেলার উপযোগী করবো। এই সিজনে পারবো না নেক্সট সিজেনে পারবো। আপাতত মাঠটা খেলার উপযোগী করা হবে। পরে এনএসপি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে। এখন কাজ শুরু হয়েছে বছর খানেক লাগতে পারে। তারপর ইন্টারন্যাশনাল খেলা দেয়ার মতো ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, ক্রিকেট বোর্ড নজর দিয়েছে জেলায় জেলায় খেলার মাঠ দরকার। তারই অংশ হিসেবে এই মাঠ দুটো খেলার অবস্থায় ছিল না। সেটাকে খেলার অবস্থায় ফিরে আনার জন্য বোর্ড সভাপতি বলেছেন। ক্রিকেট বোর্ড নিজস্ব অর্থায়নে বুয়েটের সাজেশন অনুযায়ী ৪ থেকে ৬ ফিট উঁচু করা হবে। যাতে পানি জমাট না বাধে। উঁচু করার পর প্রোপার গ্রাউন্ড হিসেবে তৈরি করা হবে। আপাতত ফাস্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন এবং প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলার উপযোগী করার জন্য মাঠটাকে খেলার উপযোগী করে তোলা এটাই হচ্ছে এখনকার সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, এই স্থাপনার মালিক এনএসপি। যেহেতু এনএসপি কোনো না কোনো কারণে সময়মতো করতে পারছে না, খেলাধুলা যেন পিছিয়ে না থেকে ক্রিকেট বোর্ডের অর্থায়নে এনএসসিকে সহযোগিতা করছি। এটা নিয়ে বাজেট হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানে ফেরানোর জন্য টেন্ডার কল করবে। সেটা কবে হবে সেটা এনএসপি বলতে পারবে। মাঠটিকে খেলার উপযোগী করে তুলছি যাতে সবগুলো খেলা পরিচালনা করার জন্য ঢাকার পার্শ্ববর্তী হিসেবে এটা গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কিছু মাঠও কেনা হচ্ছে মাঠের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ভেন্যুতে ফেরানোর জন্য ব্যাপক সংস্কার দরকার। আমরা এনএসসিকে চাপ দিচ্ছি। বুয়েটের লোক সম্পৃক্ত আছে এনএসসির লোকও সম্পৃক্ত এবং ক্রিকেট বোর্ড নিজস্ব অর্থায়ন করছে খেলাটাকে মাঠে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য।
ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ বনাম কেনিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি যাত্রা শুরু করে। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম ভারতের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয় একদিনের ম্যাচের ইতিহাস।
২০০৬ সালের ৯-১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় স্টেডিয়ামটির টেস্টের ইতিহাস। এরপর ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন বাংলাদেশ বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে শেষ হয় এই স্টেডিয়ামের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কখনও মাঠে গড়ায়নি। তারপর মাঠটিতে দু-একটি ক্লাবের খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হলেও মাঠের চারদিকে পানির কারণে সেটাও বন্ধ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :