নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ বলেছেন, বাচ্চাদের পেলে আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। কারণ আমি যখন ওদের মত ছিলাম, তখন আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। এখন আমার স্বপ্ন শেষ। এখন আমার ডাউনওয়ার্ডস (নিচের দিকে) আর ওরা আপওয়ার্ডস (উপরের দিকে)। ওদের কারো রোগ নাই, ব্যাধি নাই, চিন্তা নাই। সব চাইতে সুন্দরতম সময় কাটাচ্ছে ওরা। ওদের জীবন সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। আমরা সেজন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
রোববার (২২ জানুয়ারি) বিকালে শহরের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জাতীয় স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতি, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫১তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকার উপ-পরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) মো. আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া।
ডিসি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। পদ্মা ব্রিজ হয়ে গেছে। এদিক দিয়ে পদ্মা ব্রিজে যাওয়া রেলপথ তৈরি হচ্ছে। মেট্রোরেল তৈরি হচ্ছে। সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত বিশাল রাস্তা তৈরি হচ্ছে। নাসিম ওসমান সেতু হয়েছে। আরও বেশকিছু প্রজেক্ট এ নারায়ণগঞ্জে চলছে। পুরো বাংলাদেশে এমন কোন বাড়ি নাই, যেখানে বিদ্যুৎ নেই। এত উন্নয়ন কাদের জন্য? এই আমাদের সন্তানদের জন্য। আমাদের সন্তানরা যাতে মাথা উঁচু করে বলতে পারে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশের মানুষ। আমার বাংলাদেশ থেকে যেন আরও একজন মেসি হয়। আর মেসির দেশের মানুষ যেন বলে, ভাই তোমরা বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টেনা এসে খেলে যাও। এখন আমরা আর্জেন্টিনা ভাইদের বলি, ভাই আমাদের দেশে একটু এসে খেলে যাও, একটু তোমার চেহেরা দেখবো। এমন সময় আসবে আর্জেন্টিন ও ব্রাজিলও আমার দেশের সন্তানদের ডাকবে, বলবে ভাই দয়াকরে তোমরা আমাদের দেশে এসে খেলে যাও।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি বলি এ জেলা ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ কে? অনেকেই চিনবে না। তাই না? যদি বলি, মেসি কে? তাহলে সবাই চিনবে। তার মানে কি? একজন ডিসির চাইতে মেসি হওয়া অনেক দামী। এখানে মেসির অনেক ভক্তরা ড্রেস পড়া। তার মানে খেলাধুলা করেও দুনিয়া জয় করা যায়। এ জিনিসটা বুঝতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশটা সুন্দর একটা দেশ হবে।
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই স্মার্ট মোবাইল ফোন না। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট মানুষ। আমার কাছে স্মার্ট মোবাইল ফোন আছে। মোবাইলকে যা বলবো তাই হবে। যদি বলি শ্রীদেবীর নাচ দেখবো, শুরু হয়ে যাবে। যদি বলি পবিত্র কোরআন শরীফ ইংরেজিতে অনুবাদ চাই, তাও আসবে। তাহলে স্কুল কি দরকার? কারণ মোবাইল ফোনে সব থাকলে হয় না। এ জন্য বলে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।’ মানে বইতে থাকলে হবে না, এগুলো প্র্যাকটিক্যাল থাকতে হবে, মানুষের ভিতরে থাকতে হবে, মেধায় থাকতে হবে, চেতনায় থাকতে হবে। এগুলো থাকলে প্রকৃত মানুষ হয়।
বক্তব্য শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এছাড়াও পুরস্কার তুলে দেয়া হয় উপস্থিত সকল ক্রীড়া শিক্ষক ও শিক্ষিকাবৃন্দের।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকার উপ-পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন) সেলিনা জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হক খাঁন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকার সহকারী পরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) তামান্না মুস্তারী প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :