নারায়ণগঞ্জের সাতটি থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ১০টি মামলা। এর কোনটি নাশকতা, কোনটি কার্যালয় ভাঙচুরের। এসব মামলার কারণে জেলাজুড়ে খানিকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশি চালানোর অভিযোগ তুলছেন। কেউ কেউ মুঠোফোন বন্ধ করে চলে গেছেন লোক চক্ষুর আড়ালে। এরই মাঝে নতুন করে বার্তা পেয়েছেন কেউ কেউ। যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় চলে আসার জন্য পরামর্শ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে।
সূত্র বলছে, মামলা মোকাদ্দমা এবং গ্রেপ্তার এড়াতে আজ থেকেই ঢাকামুখী হতে শুরু করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারণ তাদের মতে, গত দুই রাত পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরতে। এমন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করাটাও তাদের জন্য বিপদজনক। একজন বড় ধরনের নেতা গ্রেপ্তার হলে তার অনুসারীদের ঢাকায় যাওয়া হবে না। এর চাইতে ঢাকায় বসে নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা বেশ সহজ। যে যার মত ঢাকায় চলে আসতে পারলে তা সবার জন্যেই সুবিধা হবে।
এদিকে সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে রবিবার থেকে বন্ধ থাকছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল। আগামী ৬ ডিসেম্বরের পরে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও অবাক হবেন না নেতাকর্মীরা। ফলে দুটো দিক চিন্তা করে আজ থেকেই ঢাকায় সরে যাবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেকে। তবে প্রথম দফায় নেতারাই নারায়ণগঞ্জ ছাড়বেন। এরপর ঢাকা থেকে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে কর্মীদের নিয়ে আসবেন ঢাকায়। প্রয়োজন বুঝে কর্মীদের যাতায়াত ভাড়া এবং থাকার ব্যবস্থাও করে দিবেন এই নেতারা।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব বেশি নয়। ফলে কর্মসূচির আগের দিন চাইলেও চলে আসা যাবে সমাবেশস্থলে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেসব নেতাদের নামে মামলা আছে এবং যাদের গ্রেপ্তার হবার সম্ভাবনা আছে, তাদেরকেই ঢাকায় সরে যাবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে মিছিল নিয়ে যাবার চাইতে ঢাকায় একসাথে জড়ো হওয়া বেশি জরুরি। সেই লক্ষ্যেই নেতারা ঢাকায় আত্মীয় স্বজনদের বাসায় কিংবা পরিচিত কোন স্থানে অবস্থান নেয়ার জন্য চলে আসবেন।
মহানগর বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকভাবে বলা হয়ে ছিল যে যেভাবে পারবেন ঢাকায় চলে আসবেন। এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি ১০টি মামলা দায়ের হয়ে গেছে। সামনে যে আরও মামলা হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এমনকি আমরা অতীতে দেখেছি পথে ঘাটে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরার জন্য। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হতে পারে এমন আশঙ্কা করছি আমরা। সেজন্য চাচ্ছি ৫ ডিসেম্বর থেকেই যে যার মত ঢাকায় চলে আসতে।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিনের নামে মামলা না হলেও তার বাসায় পুলিশি তল্লাশির ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পরায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে। মামলায় আসামী না হয়েও তার বাসায় পুলিশের অভিযানকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে দেখছেন কর্মীরা। এমন অবস্থায় রাতে বাসায় থাকাকেই অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করছেন তারা।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাকি বিভাগীয় সমাবেশের মত ঢাকার সমাবেশেও ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু উজার করে দিয়ে ঢাকার সমাবেশ সফল করবেন তারা। সেজন্য যত বাধা বিপত্তি আসুক, তারা স্ব স্ব কৌশলে এগিয়ে যাবেন। তারই অংশ হিসেবে সমাবেশের ছয়দিন পূর্বেই নিজেদের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন :