News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০

মহানগরে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি, পয়সাওয়ালা নেতারা পছন্দ!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ১০:২২ পিএম মহানগরে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি, পয়সাওয়ালা নেতারা পছন্দ!

অনেকদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি আটকে রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেও সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা এসকল ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করতে পারছেন না। এবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চাপের মুখে কমিটি করতে গিয়েও তারা নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৫ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

মহানগরের ১৫ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে বহিরাগত ও হাইব্রিড নেতাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। একজনের পছন্দে সভাপতি আরেকজনের পছন্দে সাধারণ সম্পাদক এই দুই পদে দুইজনকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৫ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর আর নতুন করে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আর এই সময়ে সভাপতি পদে দায়িত্বে থাকা কাজী আব্দুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে থাকা খোকন ঘোষাল দুইজনেই মারা যান। আর তাদের অনুপস্থিতিতে সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর হোসাইন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খোকন ঘোষালের ভাই পুলক কান্তি ঘোষাল ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পুলক কান্তি ঘোষালও মারা যান।

এই অবস্থায় ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম জাহাঙ্গীর হোসাইন একাই সামাল দিয়ে দিয়ে আসছিলেন। প্রত্যেক কর্মসূচিতে তিনি সরব ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সবশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর হোসাইন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সাথে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৫ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। এভাবে এমন কোনো কর্মসূচি বাদ যেত না যেখানে জাহাঙ্গীর হোসাইনের কোনো অংশগ্রহণ থাকতো না।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চাপের মুখে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সকল কমিটিগুলো গঠন করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়। কিন্তু ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সকল কর্মসূচিতে সরব থাকা জাহাঙ্গীর হোসেন অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে কোনো রকমের যোগাযোগ ছাড়াই কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

যার ধারাবাহিকতায় ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আব্দুর রহিমকে আনার চেষ্টা করছেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। অথচ এই আব্দুর রহিম ১২ নং ওয়ার্ডের ডনচেম্বার এলাকার বাসিন্দা। তিনি ১৫নং ওয়ার্ডের ডাইলপট্টিতে ডালের ব্যবসা করেন। আর সেই সূত্র ধরেই তাকে ১৫ ওয়ার্ডের সভাপতি করার জন্য খোকন সাহা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুদিন আগেও এই আব্দুর রহিমের কোনো আলোচনা ছিল না। তাকে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যেত না। গত ১৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়েছেন। আর এতেই তাকে সভাপতি করার জন্য খোকন সাহা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রয়াত বাচ্চু ঘোষালের ৩৫ বছরের ছেলে প্রতীক ঘোষাল পলকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি আনোয়ার আনোয়ার হোসেন। প্রয়াত বাবা স্থানে ছেলে দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন তিনি। কারণ বাবার মৃত্যু পর টানবাজারে সুতার ব্যবসা ও আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে দেখাশোনা করছেন। অথচ তিনি কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবলীগের সাথে জড়িত হয়নি। গত ১৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়েছেন।

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে, এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা না বা আওয়ামীলীগের কোন সহযোগি সংগঠনের নেতা নন। এমন কাউকে ১৫নং ওয়ার্ডের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চাই না। যদি কোন পকেট কমিটি করা হয়, তাহলে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে অভিযোগ করবো। আর এ নিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে তৃণমূলের সাথে আলোচনা ছাড়া কোন কমিটি মেনে নেয়া হবে না জানিয়েছে বর্তমান নেতারা।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আমি দীর্ঘদিন এই ওয়ার্ডে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। সে হিসেবে আমি পদ প্রত্যাশাই করতেই পারি। শুনেছি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ না করেই কমিটি দেয়ার চেষ্টা চলছে। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে নেতাকর্মীদের মেনে না নেয়াটাই স্বাভাবিক।

১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের হঠাৎ আলোচনা সৃষ্টি করেছেন মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। চলতি কমিটি বিপরীতে নতুন কমিটির জন্য নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব উঠেছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডের সভাপতি এস এম পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের প্রতিদ্বন্দ্বি দিতে যাচ্ছে সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি তার প্রস্তাবে এই ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ও মহানগরের সহ-সভাপতি হান্নান আহম্মেদ দুলাল ও সাধারণ সম্পাদকে সাজ্জাদ হোসেন শীলু নাম রয়েছে। অপরদিকে বর্তমান সভাপতি পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামানকে সমর্থন করেছে সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা।

১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের পরিবর্তনে আভাস ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বিছানায় কাতরাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন রয়েছেন মহানগরের সহ-সভাপতি পদেও। এসব নিয়ে সভাপতি নাম ওঠে এসেছে রবিউল হোসেন, হানিফ সরদার ও হাবিবুর রহমান হাবিব। সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ওঠে এসেছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও মহানগরের কার্যকরি সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সুমন ও শামীম খাঁ। এদের মধ্যে আওয়ামীলীগের সক্রিয় ভাবে রয়েছে, খোকন সাহা পন্থী রবিউল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন পন্থী সাখাওয়াত হোসেন সুমন।

১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগে রয়েছে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের চোখ। এই ওয়ার্ডের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনা, তিনি মেয়র আইভী মামা। সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, তিনি একই সাথে মহানগরের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। রফিক মূলত এমপি শামীম ওসমানের পন্থী হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই অনেক প্রবীন, এর পাশাপাশি সেক্রেটারী অনেক অসুস্থ রয়েছেন। এই ওয়ার্ডের তারাই আবার আলোচনা এসেছেন। কিন্তু প্রবীনদের এমন পর্দায় তরুণ পিছিয়ে থাকতে পারে এমন আভাস শোনা গেছে। অপরদিকে তাদের সদিচ্ছায় যদি তরুণদের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে নতুন নেতৃত্বে সৃষ্টি হতে পারে শোনা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২৫ অক্টোবর মহানগরের সম্মেলন ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম এমপি। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার  কারণে সেই সম্মেলন বাতিল ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে মহানগর আওয়ামীলীগের ওয়ার্ডগুলো গঠন করতে না পারায় দলের সভানেত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় দ্রুত সময়ে ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো করার নিদের্শনা দেয়া সাংগঠনিক নেতাদের।

৩০ অক্টোবর মহানগরের কার্যকরি ১নং সদস্য এমপি শামীম ওসমানের উপস্থিতিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দ্রুত সময়ে কর্মী সভা মাধ্যমে তিনটি করে ওয়ার্ডের সম্মেলন করা নির্দেশনা ওঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে ২নং রেলগেইটস্থ মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে ওয়ার্ডের নেতাদের তলব করে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। ওই সভাগুলোতে ওয়ার্ডে কাদের দেয়া হচ্ছে এমন সম্ভাব্য নাম প্রকাশ করা হয়। এতে উপস্থিত নেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তৎকালীন শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

কমিটি গঠনের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মাঝে মাঝে কমিটি গঠন নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা আর সফলতার মুখ দেখে না। বারবার আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ।

Islams Group
Islam's Group