অভিনেতা হিসেবে টেলিভিশনে বেশ জনপ্রিয় হাসান ফেরদৌস জুয়েল। ছোট পর্দায় নাটকের সিরিয়াল, খন্ড নাটকে দর্শকেরা তাকে চিনে না এমন সংখ্যা খুবই কম। নাটকগুলোতে তিনি একজন পাকা অভিনেতা। কিন্তু সেই অভিনেতা এবার বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছেন এক ইতিহাস। তাঁর হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে যে বিপ্লব ও আমূল পরিবর্তন শুরু হয়েছে সেটার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বিজয়ের মাসের প্রাক্কালেই।
১ ডিসেম্বর উদ্বোধন হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন ভবন। এছাড়া এদিন উদ্বোধন হবে ল ইয়ার্স ডাইরেক্টরী মোড়ক উন্মোচন, লাইব্রেরী সফটওয়্যার উদ্বোধন।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ বারের উন্নয়নের বানী শুনিয়ে প্রতিবারেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেন আইনজীবী নেতারা। কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়নের সুফল পাচ্ছিলেন না সাধারণ আইনজীবীরা। বিশেষ করে একটি আধুনিক বার ভবন নির্মাণ ও দুই কোর্ট একত্রে রাখার বিষয়ে বছরের পর বছর সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন কিন্তু কেউ বাস্তবায়ন করেননি। স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তবে রূপ দিতে হয় তা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন হাসান ফেরদৌস। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানের অর্থায়নে নির্মিত আইনজীবী সমিতির জন্য ডিজিটাল ভবন এখন দৃশ্যমান। যার মধুর পরিসমাপ্তি তার স্বপ্ন দ্রষ্টার হাতেই হওয়ার অপেক্ষায়।
আদালতপাড়া সূত্র বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও অ্যাডভোকেট মোহসীন মিয়া। হাসান ফেরদৌস জুয়েল তৃতীয় দফায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর তার সাথে দুই দফায় সাধারণ সম্পাদক হিসেব সঙ্গ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট মোহসীন মিয়া।
হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও মোহসীন মিয়ার সূত্র ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে উন্নয়ন ও মাইলফলকের যাত্রা শুরু হয়। জুয়েলের অনুপস্থিতিতে সেই যাত্রা অব্যাহত রাখেন মোহসীন মিয়া। তিনি টানা দুইবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর আবার সভাপতির দায়িত্বে আসেন জুয়েল। আর দায়িত্বে এসেই তিনি চমক দেখানো শুরু করেছেন।
আইনজীবীরা বলছেন, জেলা আইনজীবী সমিতিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নেতা হলেন জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তার নেয়া যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। বিশেষ করে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পুরানো বার ভবন ভেঙ্গে ফেলে নতুন ডিজিটাল বার ভবন তৈরীর উদ্যোগ জেলা বারের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রতিপক্ষ বিএনপির আইনজীবীদের সাথে নিজ দলের একটি পক্ষেরও ঘোর বিরোধীতার মুখে যে অবিচল ধৈর্য আর সাহসীকতার সাথে নতুন ভবন তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন জুয়েল, তা দলমত নির্বিশেষে সকল আইনজীবীর কাছে ছিলো প্রশংসনীয়।
এক সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কোন ফান্ড ছিলো না, ছিলো না মৃত্যুর পরে সে আইনজীবীর পরিবারের জন্য কোন বরাদ্দ। ঠিক মতো বার কাউন্সিলের টাকা পরিশোধ না করায় সুলতানউদ্দিনের মতো আইনজীবীর পরিবারও বার কাউন্সিলের বরাদ্দকৃত ৫ লক্ষ টাকা থেকে হয়েছিলেন বঞ্চিত। এসব বিষয় মনিটরিং করার কথা এবং সঠিক ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কখনো। নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীদের বসার জন্য ছিলো জরাজীর্ণ একটি তিনতলা ভবন। সে ভবনে ঠাঁই হতো না সবার, ফলে পাশে টিনশেডের মধ্যে গাদাগাদি করে বসতেন আইনজীবীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিল্পাঞ্চল ও শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল শ্রম আদালত। শ্রম সংশ্লিষ্ট বিচারের জন্য তাদেরকে ছুটতে হতো ঢাকায়। ঢাকার যানজট আর নানা দুর্ভোগ মাড়িয়ে তাদের উপস্থিত হতে হতো শ্রম আদালতে। আর সেটার উপলব্ধি থেকেই হাসান ফেরদৌস জুয়েলের হাত ধরে নারায়ণগঞ্জে শ্রম আদালত চালু হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালে সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক মোহসীন মিয়ার মাধ্যমেই শ্রম আদালতের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তারপর তারা দুইজন সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের মাধ্যমে আইনমন্ত্রীর নজরে আনেন বিষয়টি। যার ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জবাসী শ্রম সংশ্লিষ্ট বিচারের সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে সেই সাথে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের পরিসরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জুয়েল আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ আদালত, শ্রম আদালত, বিদ্যুৎ আদালত ও মেরিন আদালত ছিল না। অথচ এই সবগুলোই নারায়ণগঞ্জে দরকার। পরিবেশ আদালত চালু হয়ে গেছে। শ্রম আদালত চালু হতে যাচ্ছে। এরপর বিদ্যুৎ আদালত এবং মেরিন আদালতও চলে আসবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও জনসাধারণের সুবিধার কথা চিন্তা করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং জুডিশিয়াল আদালত একসাথে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট জুয়েল। প্রতি মুহূর্তেই তিনি এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন।
এভাবে একের পর এক সারা জাগানো কাজের মধ্য দিয়ে আইনজীবী বান্ধব হওয়ায় হাসান ফেরদৌস জুয়েল আছেন সকলের মনিকোঠায়। সঙ্গে আইনী লড়াইয়েও যথেষ্ট হার মানার পাত্র না। বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলাতেও তিনি লড়েছেন সূক্ষ্মপথে। শুধু আইনী লড়াই না বরং আইনজীবীদের সঙ্গে হাস্যোজ্জল ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই চলেন জুয়েল। হোক বিরোধী, প্রতিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বি ঠোটের গোড়ায় হাসি রেখেই কথা বলেন তিনি। অনেকেই বলেন অভিনেতার যোগ্যতায় এ কাজটি হাসিল করেন। নারী আইনজীবীদেরও পছন্দ জুয়েল।
আপনার মতামত লিখুন :