News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০

মামুন মাহমুদের মারধরের ভয় কাটেনি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২, ১০:২৮ পিএম মামুন মাহমুদের মারধরের ভয় কাটেনি

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নব ঘোষিত কমিটির প্রথম কর্মসূচিতেই দেখা মিলেনি ১নং যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক সদস্য সচিব মানুন মাহমুদের। তবে তার এই কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকার কারণ হিসেবে জনরোষের ভয়কেই ধরে নিয়েছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কারণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেক বিতর্কিত কর্মকান্ড করেছেন যা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে ছিল। আর সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি বর্তমানে জনরোষের ভয়ে রয়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন গোলাম ফারুক খোকন। সেই সাথে কমিটিতে ১ম যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মামুন মাহমুদ।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ঘোষিত এই কমিটির প্রথম কর্মসূচি ছিল মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদল নেতা নয়ন হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। আর এই কর্মসূচিতে একমাত্র মামুন মাহমুদ ছাড়া আহবায়ক কমিটির সকল সদস্যরাই বিশাল মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন। মামুন মাহমুদের এই অনুপস্থিতি জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো প্রভাব না পরলেও তিনি কেন উপস্থিত হননি তা নিয়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা কথা বলছেন।

তবে বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের ধারণা জনরোষ থেকে বাঁচার জন্যই মামুন মাহমুদ কর্মসূচির বাইরে রয়েছেন। জেলা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে তার প্রতি।

জানা যায়, নানায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব থাকাকালীন সময়ে চলতি বছরের গত ২১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অধীনে থাকা ৫টি থানা ও ৫টি পৌরসভায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়ার কথা শুনা যায়। জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি অনুমোদনের কথা জানানো হয়। এসকল আহ্বায়ক কমিটি ৩১ সদস্য বিশিষ্ট করা হয়।

আর এই কমিটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। ১০টি ইউনিটের প্রত্যেকটিতেই লাখ লাখ টাকা বিনিময়ের অভিযোগ উঠে। বিগত সময়ে যাদের আন্দোলনে দেখা যায়নি যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই রয়েছে ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতা টাকার বিনিময়ে তারাই হয়ে যান সং্িশ্লষ্ট থানা কিংবা পৌরসভার শীর্ষ পদের অধিকারি হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

একই সাথে গত ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। উপজেলার গ্র্যান্ড তাজ পার্টি সেন্টারে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সে অনুযায়ী নেতাকর্মীরাও অনুষ্ঠানস্থলে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। সেই সাথে সম্মেলন পন্ড হয়ে যায়।

কিন্তু সম্মেরন পন্ড হওয়ার পর মামুন মাহমুদ জেলা বিএনপির পদে থাকা অন্যান্য নেতাদের সাথে কোনো রকম আলোচনা করেননি। আর এ নিয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক পদে থাকা নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছিল।

এদিকে গত ২৫ এপ্রিল ইফতারের পর নয়াপল্টন এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর হামলার অভিযোগ উঠে গিয়াস উদ্দিনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। একই বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানও। তিনি একাধিক সমাবেশে এ হামলার কথা উল্লেখ করে গিয়াসউদ্দিনকে দোষারোপ করেন। পরবর্তীতে গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবী বারী ভূইয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলে ছিলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে এমপি প্রার্থী গিয়াসউদ্দিনকে ঠেকাতেই ক্ষমতাসীন দলের সাথে আঁতাত করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গিয়াসউদ্দিনের নামে অপপ্রচার চলছে।’

দলের একাধিক সূত্র জানায়, মামুনকে ছুরিকাঘাতের পরেই বিষয়টি নিয়ে বিএনপির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতেই গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। পরবর্তীতে একজন গ্রেপ্তারের পর তিনি যে ‘রিফাত’ নামের একজনের নাম প্রকাশ করেন এবং সেই রিফাত গিয়াসউদ্দিনের ছেলে বলেও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হয়। সেই আলোকেই গিয়াসের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালালেও পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে প্রকৃত সব তথ্য।

তারা জানিয়েছেন, ছুরিকাঘাতের পরেই গিয়াসউদ্দিনকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে ছুটে যান দলের নেতাদের কয়েকজন। এর সঙ্গে আড়াইহাজারের একজন নেতা যিনি নিজেকে জেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রক দাবি করতেন তিনি মূলত সকলকে সমন্বয় করেন। কিন্তু দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ শীর্ষ নেতারা সাফ জানিয়ে দেন এখনই কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি না।

মামুনকে ছুরিকাঘাতের বিষয়টি বেশ সিরিয়াস ভাবেই নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি এ ব্যাপারে শুরুতে এও জানান, তারা অভ্যন্তরীণ তদন্ত করবে। সেটার আলোকেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে। যদি গিয়াসউদ্দিনের দোষ ত্রুটি পাওয়া যায় তাহলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। নতুবা অন্যরা এটা থেকে নেতিবাচক শিক্ষা নিবে। আর যদি গিয়াসউদ্দিন জড়িত না থাকে তাহলে ধীরে বিষয়টি নিয়ে আগানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, তারেক রহমানের নির্দেশে গঠিত ওই তদন্ত টিম পুরো বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করতে থাকেন। তারা ঘটনার পর পারিপার্শ্বিকতা জানার চেষ্টা করেন। কথা বলেন গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গেও। নজর রাখেন পল্টন থানার মামলা ও এর গতিপথে। তারা শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টিও মাথায় আনেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিগত নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করা শাহআলম সরে যাওয়াতে এখন সুগম পথ গিয়াসউদ্দিনের সামনে। কর্মীবান্ধব এ নেতাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেও আছে চরম ভয়। ফলে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের সঙ্গে গিয়াস ঠেকাতে আগে থেকেই সম্পর্ক আছে মামুন মাহমুদের। আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেন থাকতে তিনিও গিয়াসকে ঠেকাতে মামুনকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতো। মামুনের সঙ্গে নূর হোসেন ও তার পরিবারের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে।

একইসাথে ছুরিকাঘাতের পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার অফিসে বসে কিভাবে গিয়াসউদ্দিনকে চাপে রাখা যায় সে নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সেখানে যোগ দেন কুতুবপুরের একজন জনপ্রতিনিধিও। পেছনে কলকাঠি নাড়েন সরকার দলের একজন প্রতাপশালী নেতা। এসব বিষয়গুলোও ইতোমধ্যে বিএনপির হাই কমান্ড ওয়াকিবহাল।

এর আগে, ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পরই বাণিজ্যকরণের অভিযোগ উঠে। ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠনের এক মাস পেরুতে না পেরুতেই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মানুন মাহমুদের ১৮ লাখ টাকা মূল্যের নতুন একটি প্রাইভেটকার কেনার সংবাদ প্রচার হয়। মূলত মামুন মাহমুদকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এই গাড়ি উপহার দেয়া হয়ে ছিল। এছাড়াও আড়ালে আবডালে চলছিল নানা ধরনের উপঢৌকন বিতরণ।

শুধু তাই নয়, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে শাহ আলমের ইচ্ছেতে এক রাতের মধ্যেই ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ছিলেন মামুন মাহমুদ। এর আহ্বায়ক করা হয়ে ছিল আওয়ামী লীগ ঘেঁষা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে। এ নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ছিলেন মামুন মাহমুদ।

এভাবে একের পর এক নানা ঘটনায় মামুন মাহমুদের প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে। এতদিন এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ না ঘটলেও এবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি আপাতত জেলা বিএনপির কর্মসূচি থেকে দূরে থাকছেন।

Islams Group
Islam's Group