তিনি পাকা খেলোয়ার নাকি কাঁচা খেলোয়ার। সে বিষয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন। প্রতিপক্ষ টিমের টিম লীডারের নাম ঘোষণা হতেই বিরাট ধামাকা হয়ে গেল নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রতিপক্ষের খেলোয়ারদের নাম ঘোষণাতেই মাঠ গরম। সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র উত্তেজনা। পাকা খেলোয়ার দাবিদারের সমর্থকরা সংশয়ে পড়ে গেছেন। ভীরু মনে ভাসছে শত সহ¯্র আকাশ কুসুম কল্পনা। অবস্থা এমন দাঁড়াতে চলেছে যে, সংশয়ে সংকল্প সদা টলে। ওদেরকে যেনো সামনে ও পিছনের লোকজন কিছু বলে! কেউ কিছু বলুক বা না বলুক। ওরা বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা গল্প ফেঁদে বসে। এরপর দেশজাতি রক্ষার রক্তিম শপথ। মাঠ গরম। নেতাকর্মীদের জড়ো করে মাইকের সামনে গলা ফাটানো। এবার না হয় সে বার খেলা হবেই। হবে ! এসব বলে দিনের বেলায় সমর্থকদের মন জয়ের চেষ্টা করে রাতে চলে কাঁপাকাঁপি। ওরে কি হবে রে ! পল্টি বেটা টিম লীডার। খেলাতো ওরাই খেলবে। আমরা কি শুধুই দৌড়াবো। কারণ ওই তিনি পাকা খেলোয়ার। ২০০১ সালে খেলেছিলেন চমৎকার। আমরা শুধু দৌড়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে পেরেছিলাম। আজো রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন এ নিয়ে টিপ্পনী কাটতে ছাড়ে না। এমন পরিস্থিতি যখন চাষাঢ়া ব্লকে, তখন এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তরজার শেষ নেই।
রাজনৈতিক অঙ্গনের অভিজ্ঞমহলের মতে, নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান নিজ দলেই খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই। মাঠে তাঁর বিপরীতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। মেয়রের পাশেই আছেন ওসমান পরিবারে রাজনৈতিক গুরু বলে খ্যাত আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, জিএম আরাফাতসহ দেওভোগ ব্লকের নেতৃবৃন্দ।
নিজদলের বাইরে এতদিন শামীম ওসমান একাই প্রভাবশালী নেতা হিসেবে গণ্য হতেন। কিন্তু ১৫ নভেম্বর থেকে শামীম ওসমান এককভাবে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজের অবস্থানচ্যুত হলেন। কেননা, প্রতিপক্ষ দল বিএনপি’তে পদ পজিশন নিয়ে রাজনীতির মাঠে হাজির হলেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনও একজন প্রভাবশালী ও একই সঙ্গে ঝানু রাজনীতিবিদ। রাজনীতির খেলাতে তিনি ‘গ্র্যান্ড মাস্টার’।
কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে বিএনপিতে যোগদান করে ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে পাশা খেলায় ‘গ্র্যান্ড মাস্টার’ খ্যাত গিয়াসউদ্দিন রাজনীতি থেকে একেবারে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শামীম ওসমানকে। যার জন্য আজো শামীম ওসমানকে বিদেশ পালিয়ে যাবার বদনাম বয়ে বেড়াতে হয়! তাঁর নিজদলের প্রতিপক্ষ ব্লকের লোকজন তাঁকে বীর পুরুষ এর উল্টো খেতাবে ভূষিত করেন। এ কারণেই শামীম ওসমান সুযোগ পেলেই দেওভোগ ব্লকের বিরোধীতা করার বিন্দুমাত্র সুযোগকেও সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ছাড়েন। এসব করতে গিয়েই তিনি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছেন। হয়ে পড়েছেন দলের এক্সট্রা খেলোয়ার।
কোন টিমের এক্সট্রা খেলোয়াররা খেলার শুরুতে মাঠের বাইরে বসে থাকে। কোন খেলোয়ার অসুস্থ বা অন্য কিছু হলে এক্সট্রা খেলোয়ারের ডাক পড়ে। শামীম ওসমানের দশা হয়েছে ঠিক এমন। দলে এই মুহূর্তে মুল খেলোয়ারের অভাব নেই। কিন্তু শামীম ওসমানকে এক্সট্রা হিসেবেই রাখা হয়েছে বলে দাবি দেওভোগ বলয়ের আওয়ামীলীগ নেতাদের। যারা একই দলের লোক। কিন্তু শামীম ওসমানের কঠোর সমালোচক।
অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের মতে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০০৩ সালে দেশে ফিরে রাজনীতির হাল ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। একটা সময়ের ব্যবধানে তিনি আজ সোনার ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে কাজ এনে বঙ্গবন্ধুর পছন্দ ও স্মৃতি বিজড়িত নারায়ণগঞ্জকে আজ সত্যিকার অর্থেই স্বপ্নের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ ওসমান পরিবারের রাজনীতির কারণে এই নগরীতে আওয়ামীলীগ সম্পর্কে মানুষ ভুলবার্তাই পেয়ে এসেছে বেশি। যেটা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোবেদনার কারণ। কিন্তু পৌরপিতা চুনকার কন্যা ডা. আইভী সে ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে নিজেকে ও দলকে জনগণের কাছে প্রমাণ করে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। এতেকরে মানুষ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগেরই দুরকম রূপ দেখতে পেয়েছে। যার একপিঠ উন্নয়নের আরেক পিঠ হতাশার।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যখন শামীম ওসমান এক্সট্রা খেলোয়ারের মত আচরণ করতে শুরু করেন, তখন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির পাকা খেলোয়ারেরা সময় সুযোগের অপেক্ষা করছিল। ওসমান পরিবার নিজেদের শক্তি বাড়াতে নিজদলের লোকেরই বিরোধীতায় অভ্যস্থ। এর খেসারতও দিতে হয়। যেমন ২০০১ সালে তিনি দাঁড়াতে পারেননি। এবার সেই ২০০১ সালের পাকা খেলোয়ার মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন মাঠে নামতে যাচ্ছেন। শামীম ওসমানের খেলার কি হবে ? এই প্রতীক্ষায় সকলে। শামীম ওসমান নিজদলের লোকদের খুঁচিয়ে কিভাবে মাঠে টিকে থাকবেন-এখানেই সবার ওৎসুক্য কাজ করছে। নিজদলের একটি বড় অংশই তাঁকে সাপোর্ট করবে না। দলের বাইরে বিএনপিতে যাদেরকে প্রতিষ্ঠা করে নিজ গোয়ালের গরু বানাতে চেয়েছিলেন-তারা বিএনপিতে আছেন কিন্তু পদে নেই অবস্থায় উপনীত। অতএব খেলা এবার জমতে কতক্ষণ।
আপনার মতামত লিখুন :