প্রায় ৯ বছর পর ভেসে উঠল নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের সন্দেহভাজন জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম ভূইয়া পারভেজ। তাকে নিয়ে এখন চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথাবার্তা। ২২ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহর থেকেই ফেসবুকে দেখা মিলে পারভেজের বিগত দিনের নানা ধরনের ছবি। সেখানে কমেন্ট করেন অনেকেই।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতর পিতা রফিউর রাব্বির দেয়া খুনীদের অবগতি পত্রে যুবলীগের ক্যাডার জহিরুল ইসলাম ভূইয়া পারভেজ এর নাম ছিল। এরপর ২৮ এপ্রিল চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের একটি অনুষ্ঠানে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় পারভেজ। সেদিন তাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। এরপর থেকেই অনেকটা আত্মগোপনে ছিল পারভেজ। ত্বকী মঞ্চের উপর হামলার পরেই পারভেজকে জেলা যুবলীগের কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
এরপর ৬ জুলাই পারভেজ ও তার স্ত্রী সোহানা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে আসছিলেন। গুলশানের ২নং সেক্টরে গাড়িটি আসা মাত্র একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে আসা ১০-১২ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি গাড়িটি গতিরোধ করে। তখন ব্যক্তিরা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে পারভেজকে তার গাড়ি থেকে নামিয়ে ওই মাইক্রেবাসে তুলে নেয়। এর পর থেকেই পারভেজ নিখোঁজ রয়েছে। ওইদিন রাতেই নারায়ণগঞ্জে কয়েক ঘন্টা সড়ক অবরোধ রাখে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। পারভেজ গুমের পরে এমপি শামীম ওসমান ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। এছাড়া জাতীয় সংসদেও পারভেজের সন্ধান দাবি করে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান।
ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পারভেজের স্ত্রী খুরশীদ জাহান সোহানা বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামী করা হয় বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানকে। মামলার অন্য আসামীরা হলো মেয়র আইভীর ছোট ভাই নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী রেজা উজ্জ্বল, আইভীর মামাতো ভাই চিত্র শিল্পী রেজাউল ইসলাম রনি, আইভীর ভাগ্নে ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল কাদিরের ছেলে মিনহাজুল কাদির ওরফে মিমন, জেলা কৃষক লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে কারমেল, বিএনপি নেতা মাহবুব উল্লাহ তপন, সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম ওরফে শকু।
এরপর ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারী ঢাকা ডিবি পুলিশ নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট এলাকা থেকে আবু সুফিয়ান, তার দুইজন সহযোগি কমল ও সাখাওয়াতকে আটক করার পর তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল আহম্মদ আলী রেজা উজ্জল, আইভীর মামাতো ভাই চিত্র শিল্পী রেজাউল ইসলাম রনি, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল কাদিরের ছেলে মিনহাজুল কাদির ওরফে মিমন, জেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে কারমেল ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণ করে। দীর্ঘ প্রায় এক মাস কারাভোগের পর তারা জামিনে বেরিয়ে আসে।
এদিকে ২২ সেপ্টেম্বর ছিল পারভেজের জন্মদিন। এ ধরনের প্রচুর পোস্ট হয়েছে ফেসবুকে। সেখানে দেখা গেছে নানা ধরনের ছবি। পারভেজ থাকা সময়ে তাঁর অনেক ছবি সেখানে দেখা গেছে। ৯ বছর পর ভেসে উঠে পারভেজ।
এদিকে পারভেজ গুমের দীর্ঘ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পারভেজের স্ত্রী সোহানা ও ছেলে গল্পকে কিছুদিন তার সন্ধানে সক্রিয় থাকলেও এরপর তাদেরকেও সক্রিয়তা দেখা যায়নি। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরকেও দীর্ঘদিনে কোন ধরনের কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে পারভেজের নামও উচ্চারণ করেন না কেউই। যেকারণে আলোচিত পারভেজ গুম এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :