অনেক আগেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সে হিসেবে এতদিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু নানা কারণে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়ে উঠেনি। তবে এবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অতি শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার আগে আগামী ১ অক্টোবর শহরের দুই নং রেলগেইট এলাকার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। আর এই সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
সেই সাথে এই বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলা হবে। বড় পরিসরে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেরর আয়োজন করা হবে। কাউন্সিলের সম্ভাব্য তারিখ হচ্ছে ২২ অক্টোবর। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সম্ভাব্য এই তারিখ ধরে নিয়েই কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র অনেক নেতাই আলোচনায় রয়েছেন। আর তারা হলেন সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল কাদির ও আরজু রহমান ভূইয়া।
সেই সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
তবে জেলা আওয়ামী লীগে যদি আগের কমিটিকেই বহাল রাখার চিন্তা করা হয় তাহলে হয়তো এবারও সভাপতি পদে আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল জায়গা করে নিবেন। আর যদি নবায়নের চিন্তা করা হয় তাহলে হয়তো জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবেন আলোচনায় থাকা নেতাদের মধ্যে থেকে কেউ। এখানে আবার নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুইটি শক্তিশালী বলয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে সমন্বয় করা হতে পারে।
যদিও এসকল বিষয়গুলো পুরোপুরি নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গণ্য করা হবে। এখানে অন্য কারও দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরেই এসকল বিষয়গুলো ফাইনাল করবেন।
এর আগে, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি, সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ সভাপতি এবং আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল একের পর এক নানা ঘটনায় বিতর্কিত হতে থাকেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদেরকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। জেলা আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা বিভিন্ন থানা উপজেলা কমিটি গঠনেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল তৃণমূলের মন জয় করতে পারেনি। তারা তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা দেখাতে পারেনি। সবসময় প্রভাবশালী নেতাদের মতামতের উপরই নির্ভর করতে হয়েছে।
প্রতি মাসেই ওয়ার্কিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলেও আব্দুল হাই ও আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ সেটা পারেনি। বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো সময় সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল দুইজন দুইদিকে রয়েছেন। বিশেষ করে গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সভাপতি সেক্রেটারীর মতের ভিন্নতা প্রকাশ পেয়েছিল।
তাদের এসকল বিতর্কিত কর্মকান্ডের দিক বিবেচনা করতে গেলে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল নতুন কমিটির বাইরে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। যাদের স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে এবং অনেকদিন ধরে না পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন তাদেরকেই হয়তো নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে আনা হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :