News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০

সদস্য পদে ভোটের বদলে সমঝোতা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২, ১১:৫৩ পিএম সদস্য পদে ভোটের বদলে সমঝোতা

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিতের পথে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী চন্দন শীল। সদস্য পদেও ইতিমধ্যে দু’টি সাধারণ ওয়ার্ডে সমঝোতা হয়ে গেছে। বাকী সদস্য পদগুলোতেও ভোটের বদলে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেছেন, অনেকেই আমাদের কাছে সদস্য পদের বিষয়ে আসছেন। কিন্তু আমরা আগে চেয়ারম্যান পদে নিশ্চিত হতে চাই। তারপরে সদস্য বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো।

জানা গেছে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ৬১৫ জন জনপ্রতিনিধি ভোট দিবেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য সাধারণ ওয়ার্ড ২০টি থাকলেও এবছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওয়ার্ড কমিয়ে ৫টিতে নির্বাচন হচ্ছে। একইভাবে পূর্বে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ওয়ার্ড ৫টি থাকলেও এবছর কমিয়ে ২টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে ভোটার জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কিছুটা উৎসবের আমেজ দেখা দিলেও বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সেটার কিছুটা ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিতের পথে রয়েছেন ২ জন। তারা হলেন আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের সাধারণ আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী। তারা হলেন, ৪ নং ওয়ার্ড (আড়াইহাজার) থেকে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১ জন। তিনি হলেন, মিয়া মো. আলাউদ্দিন। ৫ নং ওয়ার্ড (রূপগঞ্জ) থেকে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১ জন। তিনি হলেন, আনছার আলী।

এদিকে ২টি সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বেই সমঝোতা হলেও বাকী ৩টি সদস্য পদে ও সংরক্ষিত ২টি সদস্য পদে সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। যদিও কয়েকটি ওয়ার্ডে সমঝোতা আদৌ হবে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

১ নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ৪ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মুজিবুর রহমান, বন্দরের আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন, সায়েম রেজা। তাদের মধ্যে মো: জাহাঙ্গীর আলম ও মো: আলাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর অনুগামী বলে জানা গেছে।  অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মুজিবুর রহমান এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন। এই ওয়ার্ডে ভোটার হলেন নাসিকের মেয়র ও ৩৬ জন কাউন্সিলরসহ ৩৭ জন ভোটার। তবে এই ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের বিবদমান দুই গ্রুপ মেয়র আইভী ও এমপি শামীম ওসমানের ভোটার রয়েছে।

২ নং ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন, ফতুল্লার আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, ধামগড়ের সাবেক চেয়ারম্যান মাছুম আহম্মেদ, ফতুল্লার আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোস্তফা হোসেন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, আমির উল্লাহ, মো. রুহুল আমিন, মোবারক হোসেন। এই ওয়ার্ডের ভোটাররা হলেন সদর ও বন্দর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নারী মেম্বাররা। সদর ও বন্দরের ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীদের বেশীরভাগই প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। ভোটারদের বেশীরভাগও তাদের অনুগামী বলে জানা গেছে। যে কারণে এই ওয়ার্ডের প্রার্থীরা তাকিয়ে রয়েছেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দিকে।

৩ নং ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। আবু নাইম ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান মাছুম, ফারুক হোসেন, রাসেল শিকদার, শেখ এনামুল আলম বিদ্যুৎ, আরিফুর ইসলাম আলী নূর। এই ওয়ার্ডের ভোটাররা হলেন সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নারী মেম্বাররা। তবে এই ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যেও প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের প্রভাব রয়েছে। কারণ সোনারগাঁ আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা তাদের ঘনিষ্টজন। অত্র আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতও এখন তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করছেন। ফলে এই ওয়ার্ডের প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়ণপত্র জমা দিয়েছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ড থেকে সাদিয়া আফরিন, আছিয়া খানম সুমি, নাছরিন আক্তার। এই ১নং ওয়ার্ডটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলার আওতাধীন। তবে নারী প্রার্থীদের প্রায় সকলেই প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের অনুগামী বলে জানা গেছে।

২নং ওয়ার্ড থেকে নূর জাহান, কোহিনূর ইসলাম, হাওয়া বেগম, সীমা রানী পাল শীলা, শাহিদা মোশারফ। এই ওয়ার্ডটি সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের আওতাধীন। তবে শীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা হস্তক্ষেপ করলে একক প্রার্থী হতে পারে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া রাইফেলস ক্লাবে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীলের মনোনয়নপত্র জমা উপলক্ষ্যে তার সমর্থনে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে নিয়ে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভাতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জনপ্রতিনিধি তথা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটাররাও উপস্থিত ছিলেন।

ওই সভায় নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, আজকে অনেকেই জেলা পরিষদের সদস্য বিষয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু আমরা প্রথমে চেয়ারম্যান পদের বিষয়টি নিশ্চিত করবো। চেয়ারম্যান পদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে আমরা সদস্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।

উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। এছাড়াও তৎকালে সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাফায়েত আলম সানির স্ত্রী সাদিয়া আফরীন, ৫নং ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, আড়াইহাজারের ১০নং ওয়ার্ডে খোরশেদ আলম, ১১নং ওয়ার্ডে মাহবুবুর রহমান রোমান, ১২নং ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া, সংরক্ষিত ৪নং ওয়ার্ডে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভীন আক্তার কবিতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য সাধারণ ওয়ার্ড ২০টি থাকলেও এবছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওয়ার্ড কমিয়ে ৫টিতে নির্বাচন হচ্ছে। একইভাবে পূর্বে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ওয়ার্ড ৫টি থাকলেও এবছর কমিয়ে ২টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

Islams Group
Islam's Group