নারায়ণগঞ্জে বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। হরতাল অবরোধে অশান্ত করার প্রতিক্রিয়ায় রাজপথে মন্ত্রী এমপি মেয়রা বলেছেন, আমরা ধৈর্য ধরছি কারণ আমাদের ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জকে যারা অশান্ত করতে চায় তাদের বলব এগুলো করবেন না।
এদিকে বিএনপি জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধের প্রথম দিকে শান্তি সমাবেশে মাঠে নেমেছেন নাসিক মেয়র ডা. আইভী ও জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই সময় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জামায়াত-বিএনপি হরতালের বিরুদ্ধে মেয়র আইভী বলেন, ৫ বছর পর পর যখনই নির্বাচন আসে তখন একটি গোষ্ঠী দেশের ভিতরে ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় যাতে আওয়ামী লীগকে হটানো যায়। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যেই উন্নয়নমূলক কাজ করেছে এবং সারাবিশ্বে যেভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে। আমার মনে হয় না অতীতে কোনো দল এটা করতে পেরেছে। জামায়াত যেই রাজনীতি করে তাদেরও কিন্তু সবার আগে সোচ্চার হওয়ার কথা ছিল, তারাও একটি কথা বলে নাই। সেখানে আমাদের নেত্রী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সারাবিশ্বের সামনে এই বিষয়ে কথা বলেছেন। মানবাধিকার শুধু বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য, অন্যদের জন্য নয় তা তো হতে পারে না। সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলী, জেলা যুব লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি খবিরউদ্দিন আহমেদ।
অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতের হরতাল অবরোধে প্রথম রাজপথে সোমবার (৬ নভেম্বর) সাইনবোর্ডে শামীম ওসমান বলেন, যারা লন্ডনে বসে কথা বলছে তারা সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক। তারা লন্ডন থেকে কথা বলে মানুষকে উস্কে দিচ্ছে। তাদের উদ্দ্যেশ্য কী, ওদের উদ্দেশ্য নির্বাচন না। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বর্জন করে একটা পাপেট সরকার আনা। তবে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা থাকতে ওদের এই আশা সফল হবে না। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। এই ছেলেদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মাঠে নামিয়ে এসকল নাশকতা করাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এদের কিন্তু কনভিকশন হবে। তখন কিন্তু এসকল নেতারা থাকবেন না। তারা ইতোমধ্যে দল বদলানোর জন্য চেষ্টা করছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছয় সাতজন মানুষ নিয়ে এই সাইনবোর্ডে অগ্নিসংযোগ করছেন। এতে বোঝা যায় ওদের রাজনীতি কোন পর্যায়ে গেছে। রাজনীতি করতে চাইলে আসুন গ্রেফতার হোন। আমরা ধৈর্য ধরছি কারণ আমাদের ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জকে যারা অশান্ত করতে চায় তাদের বলব এগুলো করবেন না। একটা মানুষের গাড়িতে যখন আগুন দিবেন তার যে হাহাকার সেটা সরাসরি আল্লাহর আরশে পৌঁছে যায়। এই হাহাকারের সামনে বাঁচবেন না।
তা-বের পর থেকে রাজপথে রয়েছেন আড়াইহাজারে এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। গতকালও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধবিরোধী মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ। মহাসড়কের পাঁচরুখী বাজার থেকে বাগবাড়ী পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মিছিলটি এমপির নেতৃত্বে আড়াইহাজার উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, জামায়াত বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না এজন্য তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় না। তারা আন্দোলনের নামে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়। জামায়াত বিএনপিসহ কোন ষড়যন্ত্রকারীরা কোনভাবেই যাতে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নেই।
বিএনপির অবরোধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রূপগঞ্জে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল করেছে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। রূপসী এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ মিছিলে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী গাজী বলেন, বিএনপি জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। বিএনপির নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা রাস্তায় সতর্ক অবস্থানে আছি। জনগণ বিএনপির অবরোধ মানছে না। সারা রূপগঞ্জে আমরা অবরোধ বিরোধী মিছিল করছি। জনগণের জান-মালের ক্ষতি আমরা হতে দেবো না। আমাদের নেতাকর্মীরা যার যার এলাকায় সতর্ক অবস্থানে আছে। মাঠ আমাদের দখলে। কেউ হতাশ হবেন না। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি এখন চোরাগুপ্তা হামলা করছে। এই হামলার বিচার হবে। শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমরা আবার ক্ষমতায় যাবো।
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির হরতাল ও অবরোধের প্রতিবাদের মাঠেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব কোন্দলের রূপ দেখা গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের এমন দ্বন্দ্ব কোন্দলের কারণে বিএনপিতে শক্তির সঞ্চার হয়েয়ে। ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল ও টানা অবরোধের বিরুদ্ধে মাঠে না থাকলেও দলীয় কর্মসূচি যতদ্রুত সম্ভব সমাপ্ত করা হয়েছে। এদিকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দূরত্বে যেন নেতা-কর্মীদের আঙ্গুর তুলতে দেখা গেছে।
বিএনপির হরতাল ও অবরোধের বিরুদ্ধে মাঠে থাকার নির্দেশ ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করে এর দায় মুক্ত রেখেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এক পক্ষ দলীয় কার্যালয়ে আরেক পক্ষ প্রেসক্লাবের সামনে করে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অবরোধে তিনদিনের মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে একত্রিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ওইদিন বিকালে প্রেসক্লাবের ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাপন্থী নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল। শহরে মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবরোধে মিছিল ও গাড়ি ভাংচুর করলেও আওয়ামী লীগের একজন নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। দলীয় নির্দেশনার দায় এগিয়ে সাইনবোর্ডে মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু ও শহরে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জলের নেতৃত্বে মিছিল হয়ে ছিল।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের বলয় শক্তিশালী করতে গিয়ে উল্টো নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মসূচিতে এক হলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে দ্বি-মুখিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের ধাক্কা হতে পারে উভয় দলের প্রার্থীরা। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছে, বড় দলের একটু রেষারেষি থাকবে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন কোন দ্বন্দ্ব কোন্দল দেখার কোন সুযোগ থাকবে না নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে সদর বন্দর আসনে দলীয় বা জোটের প্রার্থীর মধ্যে বিরোধ দেখা গেছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদলের দ্বন্দ্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের দখলে রয়েছে জেলা ও মহানগর। এর মধ্যে শহর থেকে মহানগর কমিটি বয়স হয়েছে প্রায় ২০ বছর সময়। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার মতানৈক্যের কারণে ৯ বছর মহানগরের দায়িত্ব থাকা পরও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে পারেনি। সিদ্ধিরগঞ্জ, শহর ও বন্দর অঞ্চলের ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের থানা কমিটি গঠন হয়নি। ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করতে না পারায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই গ্রুপে থাকবে মহানগর আওয়ামী লীগ। এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিন ভাগে বিভক্ত রয়েছে। বন্দরের উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটি জেলা শাখার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও নেতাদের নামে রয়েছে দীর্ঘ অভিযোগের পাহার। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের অধীনে রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ উপজেলা ও ফতুল্লা থানা কমিটিতে রয়েছে নেতা-কর্মীদের ঠাঁই নেয়া দেয়া নিয়ে অভিযোগ। মন্ত্রী এমপি সাবেক এমপিদের অধীনে উপজেলা কমিটি গঠনে তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।
এদিকে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ১৫ বছর পর সম্মেলন করা হয় ২০১৯ সালে। তার দুই বছর পর আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহাল রেখে যুবলীগ ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৌশলী হয়ে মাঠে থাকবে নেতারা।
আপনার মতামত লিখুন :