চলছে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় দফায় অবরোধ। আজ এর দ্বিতীয় দিন। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা কদাচিৎ বের করছেন মিছিল। ভাঙচুর করছেন গাড়ি, দিচ্ছেন আগুন। তাদের কর্মসূচী অনেকটাই ফটোসেশন কেন্দ্রীক। নিজেরা ক্যামেরায় ছবি ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কখনো গণমাধ্যম কর্মীরা খবর পেয়ে সেখানে যাচ্ছে। বিপরীতে আওয়ামী লীগের লোকজনও পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে মহড়া দিচ্ছে। কখনো মিছিল কখনো গাড়ি নিয়ে ঘুরছে সড়ক মহাসড়ক। এত কিছুর পরেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে চলা দুটি মহাসড়কে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলছেই না। পণ্যবাহী কিছু ট্রাক চলছে সেটাও দিনে। সকাল ৮টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওইসব বাহন চললেও অনেকের মধ্যে চরম আতঙ্ক আছে।
জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের তথ্য মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৩৫টি জায়গায় কাজ করছে পুলিশ। এছাড়া দিন রাত মিলিয়ে ৮৪টি মোবাইল টিম কাজ করছে। আমাদের অফিসাররা এটা তদারকি করছে। গোয়েন্দা ও ডিবিও কাজ করছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার ৭টি থানায় নাশকতার অভিযোগে ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮৮ জনকে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের সকলস্তরের নেতাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বিচ্ছিন্নভাবে পিকেটিং কমেনি। ৫ নভেম্বর অবরোধের আগের রাতে সাইনবোর্ডের কাছে কদমতলী থানা এলাকাতে অনাবিল পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। রাতেই সে খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক ছড়ায়।
রবিবার ভোরে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা শহরে হাজীগঞ্জ এলাকাতে মিছিল বের করে। সেখানে তারা একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করেছিল। সকাল ৮টায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে জেলা যুবদল, রূপগঞ্জে বাইপাসে যুবদল মিছিল বের করে একটি ট্রাক ভাঙচুর করে। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডেও ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল করে গাড়ি ভাঙচুর করে। এর আগে শহরের কালীরবাজার এলাকাতে সবশেষ অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর করেছিল বিএনপির লোকজন।
পুলিশও বলছেন, আপনারা যে খবর পাচ্ছেন সেটার সাথে আমাদের খবর মিলছে না। অনেক সময় একসাথে পাঁচ ছয়জন একসাথে হৈ-হুল্লোড় করে চলে যায়। আমরা গিয়ে পাইনা। আমাদের যেসকল মূল সড়ক আছে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। ছবি তো ঘরের উঠানেও তুলতে পারে, গলিতেও পারে। তবে যেখানে সাধারণ জনগণ চলাচল করে পন্য পরিবহন হয় সে সড়কগুলো আমরা নিরাপদ রেখেছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যম বিশেষ করে টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টাল বা পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের আগেই ভাঙচুর মিছিলের খবর ছড়ানোর কারণে অনেকে মধ্যেই আতঙ্ক কাটছে না।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তারা অনেক সময়ে গণমাধ্যমকে আর খবর দিচ্ছেন না অবস্থান যাতে প্রকাশ না পায়। সেজন্য তারা নিজেরাই ভিডিও ও ছবি তুলে সেটা ফেসবুকে প্রকাশ করে দিচ্ছে। সেখান থেকেই অনেকে এ ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি এখন প্রায়শই ভোরে পিকেটিং করছেন। তাদের পিকেটিং মূলত ফটোসেশন কেন্দ্রীক কিন্তু সেটার রেশ ছড়িয়ে থাকে দিনব্যাপী।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এখন বেশ সক্রিয়। জেলার সবগুলো থানা এলাকাতেই দিনব্যাপী মিছিল হচ্ছে। তাদের মিছিলও অনেকটা বেলা গড়িয়ে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীনদের মিছিলগুলো হচ্ছে সকাল ১০টার পরে। কিন্তু বিএনপি মাঠে থাকছে সকাল ৬টা হতে সর্বোচ্চ ৮টার মধ্যে। এছাড়া পুলিশও ওই সময়টাতে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকায় বিএনপির লোকজন বিভিন্ন অলিগলি হতে বের হয়ে কয়েক মিনিটের জন্য টায়ারে ও গাছের গুড়িতে আগুন দেয়। একটি সড়কে যখন ভাঙচুর হয় তখন ওই সড়কের দুই পাশের লম্বা একটি স্থানজুড়েও সে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেক পরিবহন সহসাই সেখান দিয়ে চলাচল করতে চায় না।
আপনার মতামত লিখুন :