News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

মামলা খেতে হয় না মামুন মাহমুদের


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৬:১৭ পিএম মামলা খেতে হয় না মামুন মাহমুদের

এক দফা দাবিতে একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। কখনো মহাসমাবেশ, পদযাত্রা আবার কখনো হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এখন পর্যন্ত তাদের এই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এইসব কর্মসূচি জোরালোভাবে পালন করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি। তবে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের একের পর এক মামলা হজম করতে হচ্ছে। পাশাপাশি কারাবরণও শিকার হতে হচ্ছে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের থানাগুলোতে সর্বমোট ১৫টি মামলা হয়েছে। যেসব মামলায় জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দের নাম বেশি এসেছে। বাদ যায়নি বিএনপির কোনো কর্মীর নামও। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ক্ষেত্রে।

গত কয়েকদিনের কর্মসূচিতে তিনিসহ তার অনুসারীদের মহাসড়কের টায়ার জ¦ালিয়ে অবরোধ পালন করতে দেখা গেলেও তাকে এই পর্যন্ত একটি মামলাও হজম করতে হয়নি। পাশাপাশি বিএনপির অন্যসব নেতাকর্মীরা যেখানে দৌড়ের মধ্যে আছেন সেখানে তিনি রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। যা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী এক এমপির সঙ্গে আঁতাঁত করে রাজনীতি করেন তিনি। তাই তিনি বিএনপির নেতা হয়েও মামলা থেকে বেঁচে যান। পাশাপাশি তার বাসায় কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করতেও দেখা যায়নি। অর্থাৎ বিরোধী দলে থেকেও সুখে আছেন তিনি।

এর আগে, জেলা বিএনপির কমিটিতেও সদস্য সচিবের দায়িত্ব সামনে থেকে পালন করেন তিনি। কিন্তু সর্বশেষ জেলা বিএনপির কমিটিতে তাকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে এবং সদস্য সচিব করা হয় গোলাম ফারুক খোকনকে। এরপর থেকেই যেনো খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। এই কমিটি হওয়ার পর থেকে কোনো কর্মসূচিতেই মূল ব্যানারে কর্মসূচি পালন করতেন না তিনি।

সর্বশেষ গত ১৭ জুন জেলা বিএনপির সম্মেলনে তিনি সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও কেন্দ্রের চাপে তাকে সভাপতি প্রার্থী হতে দেওয়া হয়নি। এরপর থেকে জেলা বিএনপি থেকে আরও দূরে সরে যান তিনি। নিজের ব্যানারে প্রত্যেকটি কর্মসূচি পালন করতেন তিনি। মূলত জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি গিয়াসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকার কারণেই তিনি ইচ্ছা করেই কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন না। তবে গত ১১ অক্টোবর তাকে প্রমোশন দিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি হয়তো নিজ দলের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। কিন্তু সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মহানগর ও জেলা বিএনপির গণঅনশনে উপস্থিত না হয়ে তিনি আবারও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেন। তাদের মতে, মামুন মাহমুদের উচিত ছিল কেন্দ্রীয় নেতার মতো দায়িত্ব পালন করার। কিন্তু তিনি আবারও অজুহাত দেখিয়ে কর্মসূচিতে অনুপস্থিত রইলেন। তবে জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সেদিন অনুপস্থিত ছিল। অর্থাৎ গিয়াস অনুপস্থিত থাকার পরও মামুন মাহমুদ কি কারণে কর্মসূচিতে উপস্থিত হলেন না তার কারও বোধগম্য নয়।

এর আগে জেলা বিএনপির আগের কমিটিতে সদস্য সচিব থাকাকালে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের নানা অভিযোগ উঠে। বিগত সময়ে যাদের আন্দোলনে দেখা যায়নি যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, রয়েছে ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতা, টাকার বিনিময়ে তাদের সং্িশ্লষ্ট থানা কিংবা পৌরসভার শীর্ষ পদের অধিকারি করেন। জেলা বিএনপির এই কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়েছেন। সেই সাথে তাদের অধীনে থাকা ১০টি ইউনিট কমিটিও অনেক হিসেবে নিকেশ করে চূড়ান্ত করেন। কিন্তু গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের অনুপস্থিতিতে নতুনভাবে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয় নাসির উদ্দিনকে। নাসির উদ্দিন আহবায়ক কমিটির দায়িত্বে আসার সাথে সাথেই সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে নিয়ে কমিটির অনুমোদন দিয়ে দেন। যে সকল কমিটির প্রায় প্রত্যেকটি বর্তমানে বিতর্কিত কমিটি হিসেবে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে এর আগের কমিটিতেও মামুন মাহমুদ বিতর্কিত হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পরই বাণিজ্যকরণের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠনের এক মাস পেরুতে না পেরুতেই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ১৮ লাখ টাকা মূল্যের নতুন একটি প্রাইভেটকার কেনার সংবাদ প্রচার হয়। মূলত মামুন মাহমুদকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এই গাড়ি উপহার দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও আড়ালে আবডালে চলছিল নানা ধরনের উপঢৌকন বিতরণও।

Islams Group
Islam's Group