সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে হবে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছেন। তাই দলীয় সভানেত্রীর এমন নির্দেশের পর দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাদেরই নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে এক টেবিলে বসতে দেখা যাচ্ছে। যেমন গত তিনদিন আগে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের (রূপগঞ্জ) সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত রূপগঞ্জের অপর এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক এক মঞ্চে বসেছেন। এ সময় তারা আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে জেতাবেন বলে সবাইকে জানান।
অথচ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নিজ দলে তার কঠিন প্রতিপক্ষ বা সমালোচক হিসেবে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে একের পর এক ঐক্যের প্রস্তাব দিয়েও কাছে টানতে পারছেন না। তাই নির্বাচনের আগে কি কারণে শামীম ওসমান আইভীকে পাশে চেয়ে পাচ্ছে না, সেটি নিয়ে এখন সকল মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, বিগত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনগুলোতে আইভী শামীম ওসমানকে কাছে পায়নি; তাই সংসদ নির্বাচনেও শামীম ওসমান আইভীকে কাছে পাবেন না। যদিও সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে গত ১৯ অক্টোবর একটি দলীয় সভায় শামীম ওসমান সে সময়ে তার অবস্থানের কথা পরিষ্কার করেছেন।
আইভীকে পাঠানো একটি মেসেজের অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, তোমার মনে আছে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি আপার কথামতো নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের আগে আমার চোখের সামনে যা ঘটার ঘটেছিল এবং আমার পরামর্শেই সব হয়েছিল। তখন কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু ছিল। আমাকে বলা হয়েছে তৈমূর আলম খন্দকার বসে গেলে তোমাকে সরে যেতে হবে। আমি কথা রেখেছিলাম। নির্বাচনের আগে এ কারণেই বলেছি হেরেছি আমি জিতেছে শেখ হাসিনা। প্রমাণ হয়েছে সেনাবাহীনি ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এগুলো লিখেছি, দ্বিতীয় তৃতীয় নির্বাচন নিয়ে বললাম না।
জানা গেছে, শামীম ওসমানের সাথে ঐক্য নিয়ে মেয়র আইভীর নীরবতায় শামীম ওসমান তেমন ক্ষিপ্ত না হলেও তার অনুসারীরা কিছুটা হতাশ। কারণ এরই মধ্যে আইভীকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন কথা বলতে শোনা গেছে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দনশীলকে। তবে অনুসারীরা এক-রকম আচরণ করলেও, আইভীর সঙ্গে ঐক্য নিয়ে শামীম ওসমান অনেকটা ইতিবাচক মনোভাব ও কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন।
গত রোববার সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আয়োজিত একটি সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দেন। এরপর সভায় উপস্থিত বিভিন্ন জেলার সংসদ সদস্যরা দলীয় কোন্দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিল শামীম ওসমান হয়তো আজ আইভীকে নিয়ে কোনো কথা বলবেন। তবে তা হয়নি। শামীম ওসমান বলেন, হাজার বছরে বঙ্গবন্ধু এসেছেন একজন। ভবিষ্যতে লাখ বছরে একজন বঙ্গবন্ধু আসবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু এখন জেলায় জেলায় খন্দকার মোশতাকরা আছেন। ওরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। ওদের চিহ্নিত করতে হবে। সাবধান থাকতে হবে।
গত ১৯ অক্টোবর সার্কিট হাউসে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবু চন্দনশীল বলেন, অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আছে অনেক ক্ষোভ আছে। একজন তো বলেই ফেললেন ওনি (মেয়র আইভী) কেন আসেন না। যতই দিন যাবে ওই সিনারিটা আরও পরিষ্কার হবে। ওই মিরজাফরদের আপনারা খুঁজে পাবেন না। এই লড়াইয়ে তাদের খুঁজে পাবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :