নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ১১ মাস পূর্তিতেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। সভাপতি আব্দুর হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের মতানৈক্যের কারণে কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় কমিটি।
এদিকে আগামী মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ১ মাস রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার সময়। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতিনিয়ত মতানৈক্যের কারণে নেতা-কর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, সহ-দপ্তর সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েক পদে সমঝোতায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
গত বছর ২৩ অক্টোবর সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বহাল রেখে কমিটি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই আবদুল হাই ও আবু হাসনাত শহীদ বাদলকে পুনরায় বহাল রেখে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় এ নেতা। এর আগে, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তাৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ৬টি পদ শূন্য রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর হাই, সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া ইতোমধ্যে দলের সভানেত্রী কাছে পাঠানো হয়েছে। ওখানে ছয়জন সহ-সভাপতি, উপ-দপ্তর সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী একাধিক সদস্য চারিত্রিক ও সামাজিক বিষয়ে উল্লেখ করে নোট দেয়া হয়েছে। দলের সভানেত্রী ওই সব যুক্তি দেখে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনের নির্দেশ দিবেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পৃথক পৃথক পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় বেশিভাগ রয়েছে নিষ্ক্রিয় ও নবীন নেতাদের নাম। এমনকি গত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েও মাঠে দেখা যায়নি তাদেরকে এবার মূল্যায়ন করা হয়েছে। স্বজন ও বন্ধুদেরকে জেলা আওয়ামী লীগের সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হচ্ছে। দলের প্রয়োজনে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমালোচকদের করা হয়েছে কোণঠাসা। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক নেতা রাজনীতি মাঠে বেফাঁস বক্তব্য দিয়েছে তাদেরকেও বাদ দেয়া হতে পারে গুঞ্জন রয়েছে।
গত বছর অক্টোবরে শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর হঠাৎ এপ্রিল ও মে মাসের শুরুতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ছুটছেন সভাপতি আব্দুর হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল ও সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এর মধ্যে আব্দুর হাইয়ের কমিটির তালিকায় গত কমিটির বেশিভাগ ও নবীনদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে কয়েকজন রয়েছে নবাগত, সাবেক ছাত্রনেতাদের টানা হয়নি। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের দেয়া কমিটিতে এমপি শামীম ওসমানসহ তার বেয়াই ও বন্ধুদের নাম রয়েছে। অন্যদিকে সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর তালিকায় জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমালোচক ও দলকে শক্তিশালী করা নেতাদের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে তিন নেতা-নেত্রীর পৃথক পৃথক পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা নিয়ে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। নিষ্ক্রিয় সক্রিয় ও মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে নেতাদের নাম জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উঠে এসেছে।
অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, কার্যনিবার্হী কমিটির ১নং সদস্য ও প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান, সদস্য খাদেম সানাউল্লাহ, এম এ রশিদ, নাজমুল আলম সজল, এহসানুল হক নিপু, জয়নাল আবদীন টুলু ও সাব্বির আহম্মেদ সাগরের নাম জেলা কমিটিতে দেয়া হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় সহ-সভাপতি পদে বাবু চন্দন শীল, খাদেম সানাউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নাজমুল আলম সজল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন টুলু, কার্যকরী কমিটির সদস্য শামীম ওসমান এমপি, এম এ রশিদ, হালিম শিকদার, এহসানুল হক নিপু, সাব্বির আহম্মেদ সাগরের নাম রয়েছে।
সমালোচনা রয়েছে, নিষ্ক্রিয় থাকা শামীম ওসমানের বেয়াই ফয়েজউদ্দিন আহম্মেদ লাভলু, বন্ধু মো. খাদেম সানাউল্লাহ, বন্ধু অনুপ কুমার সাহা ও বন্ধু মাসুদ চৌধুরী মজনুকে সহ-সভাপতি, ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, নাজমুল আলম সজল ও মীর সোহেলকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জিল্লুর রহমান লিটনকে উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। বেয়াই, বন্ধু ও শুধু কর্মসূচি পালনকারী নেতাদের জেলা কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন। এর ফলে আগামী দিনে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাজমুল আলম সজল ও সাবেক জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেলকে জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে ইতোমধ্যে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৬ সাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছাড়ার পর থেকে নিষ্ক্রিয় সময় কাটান সজল। তিনি বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তাকে সহসায় রাজনীতি মাঠে দেখা যায়নি। তাকে এবার প্রভাবশালীর নির্দেশনায় জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হয়েছে। অপরদিকে বিএনপি পরিবারের ঘেঁষা মীর সোহেলকে আবারো পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে, তাকে জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদ পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশের পর সজল ও মীর সোহেলের সমর্থকরা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ভাসিয়ে দিচ্ছেন।
২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর হাই, সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :