জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে এমনটা ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়া ১৭টি ওয়ার্ড ও সম্মেলন বিহীন ১০টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে তিন ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি নিয়ে মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখনো মিটেনি। তার মধ্যে তাদের দ্বন্দ্বের কারণে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ওবায়দুল কাদের সংসদ নির্বাচনের আগে কোন কমিটি নয় সিদ্ধান্তে নিশ্চুপ মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দুই নেতা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগে বার বার নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে তালগোল সৃষ্টি করেছে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সেক্রেটারী খোকন সাহা। দলের স্বার্থে তারা একত্রে হলেও নিজেদের স্বার্থে দূরত্ব হয়ে পড়ে। এদিকে তাদের অনুগতদের মধ্যে ঐক্য দেখা দিলেও আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার মতানৈক্যের সময়ে আলাদা হয়ে যায়।
১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি টানা নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়। বাকি সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ১০টি ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে আবারো মতানৈক্য সৃষ্টি হয় আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার। এর মূল কারণ হলো ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম খানকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বলায় আনোয়ার হোসেনের উপর চটেন শিষ্য শামীম ওসমান এমপি। ১০টি ওয়ার্ডের সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে এমপি শামীম ওসমানের সমন্বয়ে সভার আয়োজনে দায়িত্ব দেয়া হয় খোকন সাহাকে। কিন্তু ১৭টি ওয়ার্ডের অঘোষিত পদ ও সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ডই পদে নিজের বলয় সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এতে আনোয়ার হোসেন ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়নের নেতৃত্ব সৃষ্টি করার প্রত্যয় করা হলে সব জল্পনা বন্ধ হয়ে পড়ে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্ত ১০টি ওয়ার্ড কমিটি থেকে বঞ্চিত নেতাদের সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা জন্য তাগিদ দেন তিনি। প্রয়োজনে এমপি শামীম ওসমানের সমন্বয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ১০টি ওয়ার্ডের সম্মেলন একদিনে করার প্রস্তাব করা হয়। এতে কোন পক্ষই রাজি না হওয়ায় সম্মেলন স্থগিত হয়ে পড়ে। এর ফলে ১৭টি ওয়ার্ডের ঘোষিত ও অঘোষিত নেতৃত্ব নিয়ে তালগোলে পড়ে গেছে প্রত্যাশী প্রার্থীরা। এর মধ্যে একাধিক প্রার্থীরা জানিয়েছে, মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে ওয়ার্ডগুলোতে সম্মেলনের কারণে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও আনোয়ার খোকন সাহার দ্বন্দ্বে ঝিমিয়ে পড়েছে। অপরদিকে নির্বাচিত হয়েও দলীয় কর্মকাণ্ডে দায়িত্ব নিতে পারি নাই। আমাদের সম্মেলনে নির্বাচিত করা হয়েছে, কিন্তু লিখিতভাবে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার স্বাক্ষরিত কোন কাগজ পায়নি। তাদের এই মতানৈক্য কবে শেষ হবে, আর আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্তর্ভুক্ত ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলনেও আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার অমিল দেখা দিয়েছে। আনোয়ার হোসেনকে মাইনাস করে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩টি ওয়ার্ডে তাকে প্রধান অতিথি রাখা হয়েছে। বাকি ৬টি ওয়ার্ডের প্রধান অতিথি ছিলেন বাবু চন্দন শীল ও খোকন সাহা। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্তর্ভুক্ত সদর উপজেলা শাখার সম্মেলনে উদ্বোধক জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী ভিপি বাদল ও প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর হাইকে রাখা হলেও মহানগরে উল্টো নিয়মে অতিথি তালিকা করা হয়েছে। এই নিয়েও আনোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, খোকন সাহা কোন দ্বন্দ্বে জড়াননি।
শহর ও বন্দরে একাধিক প্রার্থীতা নিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, সকলের সহযোগিতায় ১৭টি ওয়ার্ড সম্মেলন সফলভাবে করেছি। একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেকগুলো ওয়ার্ডে নেতা নির্বাচিত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বেশিভাগ ওয়ার্ডে অনেকে প্রার্থী হয়েছে। আজকে সু-দিন, আমাদের অনেকদিন ধরে, দুর্দিন আর সু-দিন মিলেই তো দল? দুর্দিনে এতগুলো মুখ (প্রার্থী) দেখতে পাই না। সু-দিনে আসলে অনেকে বসন্তের কোকিল কূ কূ করে কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। এহন তো আমাগো বসন্তকাল, আওয়ামী লীগের বসন্ত কাল। এহন অনেক বসন্তের কোকিলরা কূ কূ করে আসছে ডিম পাড়ে যাচ্ছে। আবার যখন ডিম পেড়ে যাবে চলে যাবে, দুর্দিনে খুঁজে পাবো না। দুর্দিনে ও সু-দিনে আমরা সকলকে পাইতে চাই। এখন ওয়ার্ডে ১০-১২ জন করে প্রার্থী হচ্ছে এই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের দলের। আমরা প্রত্যাশা জানাই, আপনাদের এই আগমন যেন ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। তাহলে আজকের সম্মেলনটি স্বার্থক ও সফলতা লাভ করবে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ১২নং ওয়ার্ড সম্মেলনে অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে আনোয়ার হোসেন ও শামীম ওসমানের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমে বলেছেন, এটা দলের জন্য দুঃখজনক। নিয়াজুল একটা সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজ। আমরা ভাবতেও পারিনি সে এখানে প্রার্থী হবে। তার কোনো কার্যক্রমেও ছিল না। হঠাৎ তার পক্ষে এসে একজন নাম প্রস্তাব করল। কিন্তু কোন প্রার্থী না থাকায় বাধ্য হয়ে তাকেই ঘোষণা করতে হলো। আমরা বুঝলাম যে এখানে কোনো একটা মেকানিজম হয়েছে। যা আমাদের অজান্তেই হয়েছে।
এর জের ধরে ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক প্রয়াত মফিজুল ইসলামের স্মরণ সভায় এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, খন্দকার মোশকাতের মিটিং ভাঙার ব্যাপারে নাসিম ওসমানের সঙ্গে কাজ করেছিলেন নজরুল ইসলাম সুইট। খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখানো অপরাধে জেলখানা থেকে ভান্ডাবেডি পড়া অবস্থায় বের করে গুলি করে মারা হয়েছিল। সুইটের ছোট ভাই নিয়াজুলকে অক্টো অফিসের সামনে মাটিতে শুইয়ে মৃত ভেবে গুলি করা হয়ে ছিল। পরে ২৪ দিন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বাচানো হয়েছিল। অথচ এখন আমাদের কোন কোন নেতা বলেন- কাউকে খুশি করার জন্য যারা ‘ভূষি খেয়ে অভ্যস্ত’। হাই ভাই কি যেন বলে জেলা পরিষদের সব খালি হয়ে গিয়েছিল। তারা আজকে বলেন ‘সন্ত্রাসী’।
মূলত নিয়াজুল ইসলাম খান ছিলেন প্রয়াত গোলাম সারোয়ারের একান্ত সহকর্মী। তাদের একত্রে চলাফেরা রাজনীতিতে ছিল আলোচিত। ২০১৮ সালে ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যু নিয়ে নিয়াজুল আবারো আলোচনা উঠে আসে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- তিনি মেয়র আইভীর দিক তাক করে পিস্তল উঠিয়ে ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলনে অনেকগুলো ওয়ার্ডের ২৩টি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় ১৪৫ জন প্রার্থী অপেক্ষা করছে ঘোষণা জন্য। এই পদ নিয়ে খুব দ্রুত কোন সমাধান আসছে না বলে জানিয়েছেন মহানগরের একাধিক নেতারা। এমপি শামীম ওসমান, মহানগর সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা একত্রে সমন্বয় সভায় বসলেই ২৭টি ওয়ার্ডের নেতা নির্বাচিত ঘোষণা আসবে। কবে হতে পারে সেই রকম কোন পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি।
জানা যায়, ১৩ জানুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হয়। প্রথম সম্মেলনে ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ২৬নং ওয়ার্ড সভাপতি মেছবাহউদ্দিনকে ঘোষণা দেয়া হয়। ওই সম্মেলনে ২৬নং ওয়ার্ড সেক্রেটারী পদে ৩ জন এবং ২৭নং ওয়ার্ড সভাপতি পদে ২ জন ও সেক্রেটারী পদে ৪ জন প্রার্থী হন। পরের সম্মেলনগুলোতে ২৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ২ জন ও সেক্রেটারী ৭ জন, ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ২ জন ও সেক্রেটারী ৬ জন, ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ১০ জন ও সেক্রেটারী ১৩ জন, ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ৮ জন ও সেক্রেটারী ১৫ জন, ২১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ১১ জন ও সেক্রেটারী ৮জন, ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ৭ জন ও সেক্রটারী ৮ জন, ১৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ৫ জন ও সেক্রেটারী ১০ জন, ১৮নং ওয়ার্ড সভাপতি কামরুল হাসান মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক কবির হোসাইন নির্বাচিত, ১৭নং সভাপতি ২ জন, সেক্রেটারী আসাদউল্লাহ নির্বাাচিত, ১৬নং ওয়ার্ডে সভাপতি ৫ জন ও সেক্রেটারী ৩ জন, ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক প্রতীক ঘোষাল পল নির্বাচিত, ১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচিত, ১৩নং ওয়ার্ড সভাপতি প্রার্থী ২ জন ও সেক্রেটারী ১০ জন, ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়াজুল ইসলাম খান ও সেক্রেটারী জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচিত এবং ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ২ জন ও সেক্রেটারী জসিম উদ্দিনকে নির্বাচিত করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :