News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

শামীমকে মিথ্যাবাদী বললেন গিয়াস


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ১১:২১ পিএম শামীমকে মিথ্যাবাদী বললেন গিয়াস

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বাকযুদ্ধ বেড়েই চলেছে। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে একেএম শামীম ওসমান জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। সর্বশেষ কয়েকটি বক্তব্যেও তিনি গিয়াসকে ইঙ্গিত করে তির্যক মন্তব্য রেখেছেন। তা নিয়ে গিয়াস উদ্দিন তেমন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেন। তবে নীরবতা কাটিয়ে শামীম ওসমানের প্রত্যেকটি মন্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন গিয়াস। সময়ের নারায়ণগঞ্জকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই জবাব দেন। “মামু ভালো হয়ে যান” শামীম ওসমানের এমন মন্তব্যে গিয়াস বলেন, সে আসলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো কথা কিভাবে বলবে তা জানেন না। এক কথায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। তাই তিনি একবার আমাকে ভাই বলেন, মামা বলেন আবার মামা শ^শুরও বলেন। তিনি যদি এইসব বলে খুশি থাকেন তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তার খুশিতে আমার খুশি।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে জনসভা করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দল বিএনপি স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধের লক্ষ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার করার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রত্যেকটি কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছি। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি তাদের বুকে কম্পন সৃষ্টি করে দিয়েছে। সে কারণে তারা বারবার একই কথা বলে দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এগুলো করছি। তো এখানে তারা অশান্তির কি দেখলো? তারা যেহেতু জনগণের ভোটে ভয় পাচ্ছেন তাই আমরা আতঙ্কিত আছি তারা যেকোনো সময় একটা অঘটন ঘটাতে পারে। অতীতেও নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যাকান্ডসহ অনেক খুনের সঙ্গে ওসমান পরিবার ও তার লোকজন জড়িত। তার সঙ্গে বিপথগামী হয়ে অনেক নেতাকর্মী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। শুধুমাত্র তার ব্যবহারের কারণে। তবুও সে থেমে নেই। একই সন্ত্রাসী মনোভাব নিয়ে হুমকি ধমকি দেওয়া, ক্ষমতার দাপট দেখানো এগুলোই করে যাচ্ছে। আরেকটা বিষয় সে সবসময় শক্তিকে নিজের কাজে ব্যবহার করার জন্য চেষ্টা করে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এনে জনসমাবেশ করলো। সমাবেশে তিনি বারবার বলেন, আমাদের বরদাস্ত করা হবে না। এর মাধ্যমে তিনি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বুঝান তিনি তো তার জন্য নয় নেতাকর্মীদের জন্য বলেন। আর প্রশাসনের লোকদের বুঝান, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কিন্তু আমার সঙ্গে। যেনো প্রশাসন তাকে ভয় পায়। এরকম পরিস্থিতি সে সবসময় সৃষ্টি করে থাকেন। কারণ তার ভীত নাই। নারায়ণগঞ্জের মাটিতেও তার ভীত নাই। সেজন্য একটা জনসমাবেশ করার জন্য বিভিন্ন থানা এলাকায় গিয়ে গিয়ে কর্মীসভার আয়োজন করে হাত তুলে শপথ করায়, আমার জনসমাবেশে আসবেন কিন্তু। আসবেন কিনা ওয়াদা করেন তো? আর আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রেস রিলিজ দিয়ে সভার ঘোষণা দেই। তবুও হাজার হাজার মানুষ আমাদের সমাবেশে আসেন। তারা বাস ভাড়া করে, বিরিয়ানি খাওয়াইয়া, টাকা দিয়ে গার্মেন্টের লোক, হকারদের ভয়ভীতি দেখাইয়া জনসমাবেশে নিয়ে যায়। আর আমাদের জনসমাবেশগুলোতে নিজ উদ্যোগে পয়সা খরচ করে আসে। আবার প্রশাসন বাধা দিলে পায়ে হেঁটেই তারা জনসমাবেশে আসেন। মূল পার্থক্য তো এখানেই। তার কাছ থেকে যারা লুটপাট করে কিছু সুবিধা নিয়েছে এই মানুষগুলো ছাড়া আর কেউ তার সঙ্গে নাই। কারণ কেউ তার খারাপ বিষয় নিতে চায় না। তাই সে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। সেই দুশ্চিন্তা থেকে আজ সে একেবারে দিশেহারা। সে কারণে সে বারবার পাগলের প্রলাপ করে যাচ্ছেন। আমরা আগেও একাধিকবার বলেছি আমরা সকলে দলমত নির্বিশেষে যেনো সবাই যার যার কর্মসূচি পালন করতে পারি সেজন্য আমরা সবাইকে আহবান জানাই। আমরা তাকেও বলবো যে ভীতি থেকে তিনি আজ বিলাপ শুরু করেছেন তা করা বাদ দিতে হবে। আর এই ভীতি থেকে একমাত্র উপায় জনগণের পাশে থেকে সুখ দু:খের সাথী হওয়া। তাহলেই জনগণ তার উপর আস্থা রাখবে। হুমকি ধমকি দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। ফতুল্লা তার নির্বাচনী এলাকা যে এলাকাটি সবসময় পানির নিচে থাকে। তারপর অনেক টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্টেডিয়ামটি জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। একজন শিশু থেকে শুরু করে কোনো মানুষই পানির কারণে চলাচল করতে পারে না। কতো কষ্ট করে তারা পানির মধ্যে বসবাস করছে। তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যাথা নেই। তিনি সবসময় বিভিন্ন কর্মসূচিতে কয়েকজনকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখেন। তার আশেপাশে যারা টেন্ডারবাজি করে, চাঁদাবাজি করে, নেশার সঙ্গে জড়িত থেকে অর্থ উপার্জন করে, বিভিন্ন ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে জোর করে ঝুট নামায়, সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলে শুধুমাত্র তারাই তার জনসমাবেশে যায়। জনসমাবেশে না গেলে এইসব অবৈধ সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হবে তাই তারা বাধ্য হয়ে যায়। আমরা চাই সুস্থ ধারার রাজনীতি চাই। জনগণ আমাদের উপর আস্থাশীল। আমরা যদি সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্টা না করি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম অসুস্থ রাজনীতির মধ্যে বড় হবে।

আর “দুবাইতে গিয়ে এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে গিয়াস বৈঠক করেছেন” শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি হয়তো ওই মিটিংয়ে ছিলেন তা না হলে তিনি কিভাবে বললেন? ওনার আজগবি সব বক্তব্য সবাই এখন বুঝে। আমি গত কয়েক মাস আগে কেনো গত ৩ বছরেও দুবাইতে যাই নাই। ওনাকে (শামীম ওসমান) আমি বলেছিলাম, বিদায় ঘন্টা যেহেতু বাজছে মাথা ঠিক রেখে কথাবার্তা বলতে। তিনি এসব কথা বলছেন এক প্রকার ভীতি থেকে। তিনি ভীতি থেকে বারবার গাজীর গীত গান। যা তিনি অনবরত করে যাচ্ছেন। ছোট কোনো অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন আবার বড় কোনো অনুষ্ঠানের জন্য আগে হাতজোড় করে নেতাকর্মীদের এনেও তিনি এসব কথা বলেন। আমি এর আগেও এক বক্তব্যে বলেছিলাম, তিনি যেভাবে সবকিছু আগে জেনে যান তাহলে তাকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বানানো হোক। তারপরও তিনি থেমে নেই। তিনি মিথ্যাচার করেই চলেছেন। কারণ জনগণ যেহেতু তাকে পছন্দ করে না তাই তার মধ্যে ভয় কাজ করছে। এর আগের দুই নির্বাচনেই তিনি ভোট ছাড়া জয়যুক্ত হয়েছিলেন তাই তখন তার মধ্যে কোনো ভীতি কাজ করে নি। তাই আগামীর নির্বাচনে যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ হয় তাহলে আমাকে তিনি প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করছেন। কারণ ২০০১ সালে তিনি আমার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। যার গ্লানি, দু:খ, ব্যাথা তিনি আজও ভুলতে পারে নি। তাই যখনি নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে তখনি তিনি আমাকে সামনে দেখেন। তাই তখন তার মুখে যা আসে তখনই মিথ্যা, উদ্বট কথা বলেন। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। জনগণ জানে আমরা কেমন প্রকৃতির লোক। আমরা কেমন বংশের লোক। আমরা কিভাবে জনগণের জন্য রাজনীতি করি। সে কারণেই আমি এখন তার কথায় কোনো ব্যথিত কিংবা দু:খিত হই না। এই যে একজন মানুষ দুশ্চিন্তায় আছেন, পেরেশানিতে আছেন। এসব গল্পগুজব করে যদি তিনি শান্তি অনুভব করেন, আত্মতৃপ্তি লাভ করেন তাহলে করুক না। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের জনসভা সফল করার লক্ষ্যে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেন, বিএনপির গিয়াসউদ্দিন এক সময়ে একেক দল করে। তাকে বলা হয় রাজনৈতিক প্রস্টিটিউট মানে বেশ্যা। কয়েকমাস আগে দুবাই গিয়ে এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে মিটিং করেছেন। জানি কিন্তু। জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছে। নারায়ণগঞ্জে অরাজকতা করবে। মামু ভালো হয়ে যান। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। জনগণ যদি ক্ষেপে যায় তাহলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না। রাজনীতি করতে এসেছেন রাজনীতি করেন কোন সমস্যা না। গত ৬ মাস ধরে নারায়ণগঞ্জে যেভাবে কথা বলছেন সবাই কিন্তু ক্ষেপে আছেন। বড় বড় নেতারা আছেন তারা কিন্তু চুপ। স্বাধীনতা মানে শেখ মুজিব, আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা আমরা কি পরাধীন, আমার মা আমাকে জবাব দিতে পারে নাই, মা মাথা নিচু করে রেখেছন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই আল বদর জামাত রাজাকাররা দেখিয়ে দিতো একে ধর্ষণ করেন, আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ করতো। এভাবে ত্রিশ লাখ লোক মরলো, ধর্ষণ করলো, এরকম করেও এখন এদেশে সেই শক্তি এখন কিভাবে কথা বলে, আমার বুঝে আসে না। বঙ্গবন্ধু এই গোলামের জাতিকে স্বাধীন করেছেন, তাকেই হত্যা করা হয়েছে। কত নিষ্ঠুর এই মোস্তাকের বংশধররা। অন্যদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে আয়োজিত জনসভায় শামীম ওসমান বলেন, এই জনসমাবেশের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করার নামে আর কোনো অরাজকতা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এখন থেকে আমরা রাজপথে থাকবো। জনগণ যদি চায় তাহলে আমরা তাদের নিয়েই বিএনপিকে মোকাবেলা করবো।

Islams Group
Islam's Group