News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

কোন আসনে চোখ তৈমূরের!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি : প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ১১:০৮ পিএম কোন আসনে চোখ তৈমূরের!

তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েই দলটির শীর্ষ পদ মহাসচিব হওয়ায় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জেও শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃনমূল বিএনপির নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন লাভ এবং এতে বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী ও বহিস্কৃত হেভীওয়েট নেতাদের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হওয়াকে ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করেছেন সচেতন মহল। অনেকেই বলছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী ও বহিস্কৃত নেতারা পাড়ি জমিয়েছেন তৃনমূল বিএনপিতে। বিগত দিনে যেমন মহাজোটের শরীক দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ আসন ভাগাভাগি করেছিল এবারও তেমন কিছুই ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আর তেমনটি হলে এবার কার আসনে ভাগ বসাবেন তৈমূর এমন জল্পনা গুঞ্জন শুরু হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। অর্থাৎ এবার কার আসনের দিকে চোখ রয়েছে তৈমূরের এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী তথা সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

জানা গেছে, নব্বইর দশকের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে পদার্পন ঘটে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের। শুরুর দিকে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও পরবর্তীতে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে আসীন হন তৈমূর। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তাকে নিরাশ করেনি বিএনপি। তাকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে জেলা বিএনপির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এরপর একাধিকবার তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ও আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। ওয়ান এলেভেনের পর যখন দেশে এক সঙ্কটকাল তখন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলে আদালতে প্রথম আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়ে তখনকার সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রোষানলে পড়েন তৈমূর আলম খন্দকার। পরবর্তীতে তৈমূরকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দিলেও বেঈমানী করেননি তৈমূর যিনি বিএনপি সরকারের আমলে সুপ্রীম কোর্টের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও বিআরটিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নব্বইর দশকের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলি থেকে রক্ষা পাওয়া এ নেতাকে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগেই সরিয়ে দেওয়া হয় তাকে যাকে তিনি আখ্যা দেন ‘গোছল ছাড়া কোরবানী’।

জেলা বিএনপির গতি ফেরাতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। আর এতে আহবায়ককরা হয় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে। আর এই কমিটি ঘোষণার আগে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চলে নানা হিসেব নিকেষ। সকল হিসেব নিকেষ মিলিয়ে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের উপরই জেলা বিএনপির দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটাতে থাকে। প্রায় প্রত্যেকটি কর্মসূচি নেতাকর্মীদের দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। নেতাকর্মীরা ফিরে পান মনোবল। যেন এমন নেতৃত্বের অপেক্ষাতেই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রত্যেক কর্মসূচিতেই নজরকাড়া শোডাউন চলে জেলা বিএনপির।

এরই মধ্যে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ায়ী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার মেয়র প্রার্থী হন। দল তাকে প্রথমে ইঙ্গিত দিলেও পরবর্তীতে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেন। কিন্তু এই নির্দেশনা না মেনেই তৈমূর নির্বাচনী মাঠে থেকে যান। সেই সাথে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্লোগান হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে। তারপরেও দল এসকল বিষয় গুরুত্ব না দিয়েই নির্বাচন শেষে তৈমূরকে দল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

নির্বাচনের দুইদিন পর অর্থ্যাৎ ১৮ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিস্কার করা হলো।

সবশেষ তৈমূল আলোচনায় এসেছিলেন চলতি বছরের এপ্রিলে। তখন প্রায় ১০ মাস পর বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। গত ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের রাতে গুলশানের বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির আট সদস্য। রাত ৮টা থেকে এক ঘণ্টার কিছুটা বেশি সময় তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। আর ওই সময়ে কারাগারে আটক দলের নেতাকর্মীদের বিষয়েও জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিএনপির বহিস্কৃত নেতাদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেন বেগম খালেদা জিয়া। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমার তৈমূর কই? তাকে কেন বহিস্কার করা হলো? কার কাছে জিজ্ঞাসা করে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে? বিএনপিতে তার কোনো অবদান ছিলো না? কেন তাকে বহিস্কার করা হলো?

আর এই খবর বিএনপি নেতাদের মাঝে প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের দারস্থ হতে থাকেন। সবাই তৈমূরের কাছে ভীড় করতে থাকেন। বিএনপির নেতাদের মাঝে ফের তার কদর বেড়ে যায়। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে তৈমূরের সাথে দেখা করে বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

এদিকে দীর্ঘদিনেও বহিস্কারের তকমা না ঘোচায় অবশেষে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৃণমূল বিএনপির প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটে তৈমূর আলম মহাসচিব নির্বাচিত হন। এছাড়াও বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী শমসের মবিন দলের চেয়ারপারসন এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা দলটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন মো. আক্কাস আলী খান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপির এই সম্মেলন শুরু হয়।

এদিকে বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী শমসের মবিন ও বিএনপি থেকে বহিস্কৃত অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার তৃনমূল বিএনপিতে যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। বিএনপির অনেক নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেও মন্তব্য করছেন। তবে অনেকেই আবার বলছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই শমসের মবিন ও অ্যাডভোকেট তৈমূরের মতো হেভিওয়েট নেতারা তৃনমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। কারণ বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির যে ধারা তাতে অ্যাডভোকেট তৈমূর কিংবা শমসের মবিনদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ না নেয় তাহলে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বিগত দিনের ন্যায় মহাজোট সরকার গঠন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হবে তৃনমূল বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদেরও। আর আসন ভাগাভাগি হলে শমসের মবিন ও তৈমূরের সম্ভাবনা থাকবে সবচেয়ে বেশী। তবে তেমনটি হলে তৈমূর কোন আসন থেকে লড়বেন সেটা নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা। কারণ বিগত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে সেসময় মহাসচিবের কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। তৈমূরের মতো সিনিয়র নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির প্রতি কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। যে কারণে অনেকেই বলছেন তৈমূরের প্রতি সরকার প্রধানের যেহেতু নেক নজর রয়েছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জোট বাধলে কোন আসনে তৈমূর নির্বাচন করবেন সেটা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। কারণ তৈমূরের নারায়ণগঞ্জের যে দু’টি আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেদু’টি আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) ও  নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসন। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বর্তমানে এমপি পদে রয়েছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনে এমপি পদে রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা ও বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমান। ফলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হলে কার আসনে ভাগ বসাবেন তৈমূর এমন জল্পনা কল্পনা চলছে সাধারণ মানুষের মাঝেও।

Islams Group
Islam's Group