টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও যেন অর্থ সংকটে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। অর্থের অভাবের কারণে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের স্মার্ট কর্ণারের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ফলে অকেজো অবস্থায়ই পড়ে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের স্মার্ট কর্ণারটি।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্মার্ট কর্ণারটি সচল রাখার জন্য দুইজন লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই দুই জন লোকের বেতন কে দিবে? প্রত্যেক মাসে তাদের বেতন কার মাধ্যমে আসবে? এই জন্যই মূলত এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনিতেই দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাদের মধ্যে ঠেলাঠেলি চলে টাকা নিয়ে।
দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে নেতারা অনেক টাকার মালিক হলেও দলের জন্য কেউ টাকা খরচ করতে চান না। দলের নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই। সবসময় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাদের উপড় নির্ভর করে থাকতে হয়। এখন আবার নতুন করে প্রতি মাসে দুইজন লোকের বেতন আলাদাভাবে ম্যানেজ করতে হবে। ফলে এখন পর্যন্ত ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি সেই সাথে স্মার্ট কর্ণারের কার্যক্রমও শুরু করা যায়নি।
দলীয় সূত্র বলছে, ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি ওয়ান সফলভাবে বাস্তবায়নের পর ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সারা দেশে স্মার্ট কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এই প্রয়াস। যা ডিজিটাল বাংলাদেশের আরও উন্নত রূপরেখা।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিসহ সবক্ষেত্রে ব্যবহার হবে আধুনিক অনলাইন প্রযুক্তি। সব ভোটারের কাছে সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশের সব জেলায় স্মার্ট কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও স্মার্ট কর্নার উদ্বোধন করা হয়।
গত ১৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ৩০তম এ স্মার্ট কর্নারের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্মার্ট কর্নার উদ্বোধনের সময় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার বলেছিলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষ কর্মীদের দিয়ে অনলাইন ক্যাম্পেইনকে প্রাধান্য দিয়ে এই স্মার্ট কর্নারের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৭৮টি স্মার্ট কর্নার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে। এরই মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকিগুলো আগামী দেড় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেছিলেন, রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় এ স্মার্ট কর্নারের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে উঠবেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। নেতাকর্মীদের ডাটা বেইজ তৈরির পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে তারা যে কোনো তথ্য অবগতসহ উন্নত বিশ্বের সব ধরনের শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই স্মার্ট কর্নারের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সঙ্গে তাদের সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে।
কিন্তু এই স্মার্ট কর্ণার উদ্বোধনের পর ইতোমধ্যে প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এই স্মার্ট কর্ণারের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এটিকে সচল রাখার লক্ষ্যে দুইজন লোক নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। মাঝে মধ্যে কাউকে দিয়ে কোনো রকম কাজ চালানো হয়। কবে নাগাধ নিয়োগ দেয়া হবে তাও জানা নেই কারও।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, স্মার্ট কর্ণারের জন্য লোক রয়েছে। মাঝে মধ্যে জুম মিটিং করা হয় স্মার্ট কর্ণারের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে সকল কার্যক্রম শুরু করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :