News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০

শামীম ওসমানকে ভদ্রলোকের খোঁচা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম শামীম ওসমানকে ভদ্রলোকের খোঁচা

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে খোঁচা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ। যাকে শামীম ওসমান নিজেই ভদ্রলোক হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে মামুন মাহমুদকে নিয়ে প্রশংসা করে আসছিলেন। সেই সাথে মামুন মাহমুদের বিপরীতে থাকা বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিনকে ইঙ্গিত করে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন।

কিন্তু শামীম ওসমানের এই ভদ্রলোক খ্যাতি পাওয়া নেতা মামুন মাহমুদ ঠিকই তাকে ছাড় দিচ্ছেন না। তার বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন। সেই সাথে তাকে ইঙ্গিত করে খোঁচা দিয়েও বক্তব্য দিয়েছেন।

জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগর এলাকাস্থ গ্রীন গার্ডেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আর এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মামুন মাহমুদ বলেন, হাঁচি-কাশিতে আমরা ভয় পাই না। আমরা বুলেট, রাবার বুলেট, কাদানে গ্যাস, টিয়ারশেল ও লাঠি চার্জকেই ভয় পাই না। গত বছর পহেলা সেপ্টেম্বর আমাদের চোখের সামনেই শাওন প্রধান মৃত্যুবরণ করল। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরাইতো ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধ করে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ আমরাই করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য কারাগারে যাই, নতুবা এ বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে যাই কিন্ত আমরা পালিয়ে বিদেশে চলে যাই না। আন্দোলন সংগ্রাম নারায়ণগঞ্জেও করি, ঢাকায় গিয়েও আন্দোলন-সংগ্রাম করি। পালিয়ে যাওয়ার রেকর্ড বিএনপিতে নাই। যারা পালিয়ে যান তারাই কিন্তু লম্বা লম্বা কথা বলেন। আবারও বুঝি পালিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।

এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। আর এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, সকালে ঠিকমতো জোরে কাশি দিলে নারায়ণগঞ্জ শহর অর্ধেক ফাঁকা হয়ে যাবে। আমি পুলিশের কাছে অনুরোধ করছি আপনাদের যত পুলিশ আছে, সব তাদের পক্ষে যান। সব নিয়ে ঘোষণা করেন পুলিশ আমাদের পক্ষে আছে, তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করে দেবো।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাদের ব্যাপারে শামীম ওসমানের কোনো সময়ই কোনো মাথাব্যথা থাকতো না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর থেকেই তিনি যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না। শামীম ওসমানের সমস্ত মাথা ব্যথার কারণ যেন তিনিই হয়ে দাঁড়িয়েছেন। একের পর এক সভা সমাবেশে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে তীর্যক বক্তব্য দিয়েই আসছেন।

একই সাথে আবার বিএনপির মামুন মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে ভালো কিংবা ভদ্রলোক হিসেবে সম্বোধন করে আসছেন। একই দলের একজনকে ভালো আরেকজনকে খারাপ আখ্যা দেয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেন।

২০২২ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় শামীম ওসমানের উদ্যোগে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আর এই সমাবেশে তৎকালীন বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে ভদ্রলোক হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন শামীম ওসমান। আর এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বিষয়টিকে শামীম ওসমানের স্থানীয় বিএনপি নেতা প্রীতি হিসেবে দেখছিলেন।

এদিন দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেছিলেন, জেলা বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহমুদ। ভদ্রলোক মানুষ তিনি। কিছুদিন আগে তাকে ঢাকার রাস্তায় ছুরিকাঘাত করা হয়। আশেপাশের লোকজন দ্রুত তার ঘাতককে আটক করে পল্টন থানায় সোপর্দ করে। সেখানে স্বীকারোক্তিতে সে জানায়, নারায়ণগঞ্জের একজন এক্স এমপির ছেলে তাকে ভাড়া করেছে মামুন মাহমুদকে হত্যা করার জন্য। যদি সেদিন কোন অঘটন ঘটে যেত, তাহলে ত্বকী হত্যার মত আমাদের উপর দোষারোপ করা হতো।

চলতি বছরের গত ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গিয়াসকে খুনির ইঙ্গিত এবং মামুন মাহমুদকে ভদ্রলোক হিসেবে সম্বোধন করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের এখানে বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের উপর ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। তার সঙ্গে আমার দুই একবার কথা হয়েছে। ভদ্রলোক মানুষ শিক্ষিত লোক। সিদ্ধিরগঞ্জ বাড়ি। এলাকার একজন সাবেক এমপি আছেন। ওনি অনেকগুলো খুনের সঙ্গে জড়িত। ওনার ব্যাপারে আমি বলতে চাই না ওনাকে আমি ফ্যাক্টর মনে করি না। এ সাবেক এমপির প্রতিদ্বন্দ্বী মামুন মাহমুদ। এজন্য ওই সাবেক এমপির ছেলে রিফাতসহ আরও কয়েকজন মিলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করে। তাদের পরিকল্পনায় একজন হেরোইনখোর পল্টনে মামুন মাহমুদকে উপুর্যপরি ছুরিকাঘাত করে। এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেওয়া ও আর দ্বিতীয়তা বিএনপির সেক্রেটারী মারা গেলে আমাদের উপর দোষ ফেলা। ওই ঘটনাটি মতিঝিলের পুলিশ কমিশনার বেশ গুরুত্ব সহকারে নেয়। ওনি দেখলেন একজন অধ্যাপক মানুষ বিএনপি নেতাকে কেন একজন হেরোইনখোর কেন মারতে যাবে। পরে গ্রেফতারকৃতকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

এভাবে একের পর এক সভা সমাবেশে শামীম ওসমান মামুন মাহমুদকে নিয়ে প্রশংসা করে আসছিলেন। কিন্তু এই প্রশংসার বিপরীতে মামুন মাহমুদ পাল্টা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। তাকে খোঁচা দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।

Islams Group
Islam's Group