নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হচ্ছেন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙ্গে জেলা বিএনপির সর্বশেষ আহবায়ক কমিটিতে আহবায়কের পদ পাওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। তার হাত ধরে জেলা বিএনপি একের পর এক সফল কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না। কারো ফোনও রিসিভ করছেন না তিনি। অনেকেই আবার তার ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। এর ফলে এক প্রকার বিরাট সমস্যায় পড়েছেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সভাপতির নির্দেশনার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যক্রম। গিয়াসের কোনো অস্তিত্ব না থাকায় জেলা বিএনপি অনেকটা নিষ্ক্রীয় ভূমিকা পালন করছে। এদিকে তার বিরোধীতা করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান একের পর এক বক্তব্য রাখছেন। এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না গিয়াসের। পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে খুব শিগগিরই জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে। কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হলেও গিয়াসের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। জেলা বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা পর্যন্ত তাকে কখনো এমন নিখোঁজ হতে দেখা যায়নি। এদিকে দলের এমন দু:সময়ে গিয়াসের এমন ভূমিকা নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে।
কয়েকজন নেতাকর্মীর দাবি, তিনি অসুস্থ তাই কারো ফোন রিসিভ করছেন না। তবে অসুস্থ হওয়ার কারণে দলের শীর্ষ নেতাদের ফোনও ধরবে না এটা গিয়াসের মতো এমন একজন ঝানু রাজনীতিবিদের কাছে কাম্য নয়। তিনি নীরবতা ভেঙ্গে আবারও সক্রিয় হবেন এমনটাই প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের।
এর আগে জেলা বিএনপির সর্বশেষ আহবায়ক কমিটিতে আহবায়কের পদ পাওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এর আগে তিনি এক যুগেরও বেশি সময় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। একসময় তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের ৪০ দিন আগে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে যান এবং পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হোন। এমপি থাকার সুবাদে নানা কর্মকান্ডের কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হোন। নেতাকর্মীদের মতে, তিনি কখনো নিজের দলের জন্য নয়, সবসময় নিজের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করে থাকেন। জেলা বিএনপির আহবায়ক হওয়া থেকে শুরু করে সর্বশেষ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় তিনি একই পরিচয় বহন করে গেছেন। কেন্দ্রঘোষিত জেলা বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে তিনি পরিস্থিতি বুঝে অংশগ্রহণ করেন। অথচ বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত। অর্থাৎ যেখানে তিনি সবার আগে উপস্থিত থেকে কর্মসূচি পরিচালনা করবেন সেখানে তিনি কর্মসূচির পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেন কর্মসূচিতে যাবেন কিনা। আর এবার তিনি সবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।
এদিকে গত ১৭ জুল জেলা বিএনপির সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে গিয়াস উদ্দিন তার জায়গা আরো পাকাপোক্ত করে নেন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন হবেন তা অনেকটাই বলা চলে। এছাড়া গিয়াস উদ্দিন ক্ষমতাসীনদের জন্য আগামীতে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূলত শামীম ওসমানের সঙ্গে লড়াই করার মতো তেমন কেউ না থাকায় সবাই গিয়াসকে তার বিকল্প হিসেবে দেখছেন। কারণ এই শামীম ওসমানকেই ২০০১ সালে হারিয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া ফতুল্লা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর না হওয়ায় শামীম ওসমানের উপর ফতুল্লাবাসী অনেকটাই বেজার। তাই গিয়াসের উপর ভরসা রাখতে শুরু করেছেন। তাদের প্রত্যাশা, গিয়াস এমপি নির্বাচিত হলে হয়তো সে এইসব সমস্যার সমাধান করবে। তবে অনেক ঝানু রাজনীতিবিদদের মতে, গিয়াস উদ্দিন আগামীতে সাধারণ মানুষের জন্য নয়, তার পদ শক্তিশালী করার জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তাই তাকে শামীম ওসমানের বিকল্প হিসেবে দেখা অনেকটাই বোকামি হবে বলে মনে করেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :