১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডেকেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। তার সমাবেশকে ঘিরে পুরো শহরজুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। অনেকে মনে করছেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শক্তির মহড়া দেবেন শামীম ওসমান। কারো কারো মতে, এদিন লাখো লোকের সমাগম করতে নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হবে।
এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে চাষাঢ়া পর্যন্ত মাইক লাগানো হয়েছে। পুরো নগরীতে করা হচ্ছে মাইকিং। সমাবেশে শুধু আওয়ামীলীগ নয় সুধী সমাজ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শক্তিকে নিয়ে হাজির হবেন শামীম ওসমান।
সমাবেশের ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে নগরীর চায়ের দোকান ও মোড়ে মোড়ের আড্ডায় জমে উঠেছে আলোচনা সমালোচনা। বেশিরভাগ স্থানেই আলোচনার প্রধান বিষয় এখন শামীম ওসমানের সমাবেশ।
ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে চান এমপি শামীম ওসমান। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পর্যন্ত কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাজপথে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠায় রাজপথে নেতাকর্মীদের নিয়ে শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবেই শামীম ওসমানের এই জনসভা।
বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে জানা গেছে, শামীম ওসমানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তার মধ্যে কিছু বিষয় উঠে আসতে পারে।
প্রথমত বিএনপি ইস্যু, তাদের নারায়ণগঞ্জে সভা সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে স্লোগান দেওয়ার বিষয়টি। কমিটির সভাপতি গিয়াসউদ্দিনের ইস্যু টানা হতে পারে, তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ সহ দল পাল্টানোর বিষয়টি সামনে আনা হতে পারে। সেই সঙ্গে বিএনপিতে একটি স্বচ্ছ নেতাদের গ্রুপকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শামীম ওসমানের সাম্প্রতিক সবগুলো সভা সমাবেশে এ বিষয়গুলোকে তিনি বার বার প্রাধান্য দিয়েছেন। যদিও এর মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর শহরে মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেদিনও সরকার ও নেত্রীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে বক্তব্য। ওই রাতেই যুবদলের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শামীম ওসমানের বক্তব্যে গিয়াসউদ্দিনকে ইদানিং বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গিয়াস দুবাইতে গিয়ে জঙ্গীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে নারায়ণগঞ্জকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন শোনা যাচ্ছে তাঁর কণ্ঠে।
সভা থেকে বিএনপিকে কঠোর ভাষায় হুশিয়ারী করে দেওয়া হবে। তবে বিএনপির একটি পক্ষ যারা পদবঞ্চিত তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ নেই এ সাংসদের। মূলত বিএনপি কেন্দ্রীক নারায়ণগঞ্জে টার্গেট করা হচ্ছে গিয়াসউদ্দিনকে।
তিনি আরও বলবেন, ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আমি একা শামীম ওসমান মাঠে থাকলে কেউ লাগবে না। আমি বহুদিনের আগের খেলোযাড়। আমাকে খেলার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা বসেই রয়েছি খেলার জন্য। যে কোনো সময় খেলতে প্রস্তুত রয়েছি আমরা। তফসিলের পর খেলবো শুধু নারায়ণগঞ্জ না বরং প্রয়োজনে ঢাকা এমনকি দেশের যে কোন স্থানে গিয়ে।
দ্বিতীয়ত দেশ বিরোধী দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও সামনে আনবেন শামীম ওসমান। বলতে পারেন যে, বর্তমানে দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যে ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য ক্ষমতা পরিবর্তন করা না পুরো দেশকে ধ্বংস করে দেয়া। এই ষড়যন্ত্রে আমাদের আশেপাশেই অনেকেই জড়িত রয়েছেন। তবে যতই ষড়যন্ত্র করুক শয়তান কখনও আল্লাহর সাথে পারে না। শেখ হাসিনার উপর আল্লাহর রহমত আছে। শেখ হাসিনার জয় হবে। তাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
তৃতীয়ত সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশী প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার বিষয়কে সামনে আনা হবে। ভারতে সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে হাঁটু গেড়ে কথা বলার বিষয়টিও তুলে আনা হবে।
তৃতীয়ত নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ও দেশের স্বার্থেসবাইকে ঐক্যবদ্ধ আহবান জানিয়ে শামীম ওসমান বলবেন, আসেন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমার নেতৃত্ব দরকার নেই। আপনারাই নেতৃত্ব দিয়েন। আমি আপনাদের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাবো। ভালোবেসে দল করি। কাউকে দেখানোর জন্য রাজনীতি করি না। ঢাকায় দুটি প্রোগ্রামে গেছি আমাকে বার বার মঞ্চে ডাকা হলো যাইনি। কারণ কর্মীদের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসি। যাদের কারণে আমি কর্মী তাদের সাথে স্লোগানেই স্বস্তি পাই। এখন বিরোধের সময় না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। আমার আপনার জন্য না আগামী দিনের বাচ্চাদের জন্য তাকে ক্ষমতায় আসার দরকার। বঙ্গবন্ধুকে মেরে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমরা আর পিছিয়ে যেতে চাই না।
আপনার মতামত লিখুন :