News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০

টেনশন গ্রুপের লিডার সীমান্ত ও বাবা শফিকের দায় নিবে না আওয়ামী লীগ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩, ১১:২৪ পিএম টেনশন গ্রুপের লিডার সীমান্ত ও বাবা শফিকের দায় নিবে না আওয়ামী লীগ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের কার্যালয় ভাঙচুর এবং বাড়িতে একাধিকবার হামলা ঘটনায় এবার মুখ খুলেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এর আগে কাউন্সিল ইকবালের বাড়িতে ও কার্যালয়ে হামলা চালায় ২নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃতাধীন টেনশন গ্রুপের সদস্য। কাউন্সিলর ইকবালের দাবি, বিষয়টি থানা পুলিশকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পান নি। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে পুলিশ কোনো অভিযোগ না নিয়ে উল্টো তার লোকজনকে হয়রানি করেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলর ইকবালের স্ত্রী বাধ্য হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃতাধীন টেনশন গ্রুপের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। তবে শফিকুল ইসলাম শফিক স্বেচ্ছাসেবকলীগের কোনো পদবীতে নেই বলে দাবি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু সর্বশেষ গত ১১ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের এম ডব্লিউ স্কুলে অনুষ্ঠিত এক দলীয় কর্মীসভায় তিনিসহ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পাশে দেখা যায় অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম শফিককে। যা নিয়ে নানা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে একাধিকবার রাইসুল ইসলাম সীমান্তকে এমপির সঙ্গে দেখা যায়। এমপির সঙ্গে এইসব ছবি ব্যবহার করে সীমান্ত এলাকায় আরও বিশৃঙ্খলা করার সাহস পাচ্ছেন বলে অভিযোগ কাউন্সিলর ইকবালের।    

সামগ্রিক বিষয় জানতে কথা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের সঙ্গে। এ বিষয়ে হাজী ইয়াসিন মিয়া বলেন, শফিক স্বেচ্ছাসেবকলীগের কোনো পদে নেই। তাই তাকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বলা যুক্তিযুক্ত নয় বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি হামলার বিষয়ে আমি অবহিত নই। শুধু পত্রিকায় দেখেছিলাম। আমার দলের কেউ যদি এই হামলার ঘটনায় জড়িত থাকে তাহলে আমাকে জানালে আমি এর সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিবো। আর তার ছেলে সীমান্ত আমাদের দলের কেউ নয়। তাকে কখনো আমাদের মিটিংয়ে মিছিলে দেখি নাই। তাই তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই।

শামীম ওসমানের পাশে শফিকুল ইসলাম শফিক এবং রাইসুল ইসলাম সীমান্তের অবস্থান করার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আমি একদিন পত্রিকায় দেখেছি শফিকের ছেলে সীমান্ত কাউন্সিলর ইকবালকে ডিস্টার্ব করছে। আমার সরাসরি স্পটে যাওয়ার সুযোগ হয়নি এবং ইকবালও আমাকে কিছু বলেনি। তিনি আমাকে জানালে অবশ্যই দেখবো। তিনি বিএনপির করে বিষয়টা তা নয়। সে তো আমার আত্মীয় স্বজন, এলাকার মানুষই। কাউন্সিলর ইকবাল আমাকে বিষয়টি জানালে আমি শফিকের সঙ্গে কথা বলবো। তার ছেলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সে যেহেতু মামলা করেছে তাহলে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এর সমাধান হবে। আর এটা অমানবিক। ইকবাল এমনিতেই পালিয়ে থাকে। তার উপর বাসায় আক্রমণ করার দরকার কি। ইয়াসিন মিয়া এর আগে দুইবার কাউন্সিলর ইকবালের নির্বাচন করেছে। তাই ইকবাল তো তাকেই বিষয়টা জানাতে পারে। যেহেতু এক এলাকাতেই তারা পাশাপাশি থাকে।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর ইকবালের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। বিক্ষোভ শেষে স্থানীয়রা জানান, কাউন্সিলর কার্যালয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। হামলার পর থেকে কাউন্সিলর কার্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে পারছি না। আমরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলে আসা বয়স্ক এক বৃদ্ধা জানান, প্রতিমাসে এই অফিস (কাউন্সিলর) থাইকা কিছু সহযোগীতা পাইতাম অহন আর পাই না। কাউন্সিলর অফিস নাকি কারা ভাঙচুর করছে। তাই এই অফিসে কেউ অহন আর আসে না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও তার ছেলে সীমান্ত সন্ত্রাসী বাহিনী লালন পালন করেন। শফিকের নির্দেশে তার ছেলে সীমান্ত একের পর এক হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘর, অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছেন। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই হামলা কাউন্সিলর কার্যালয়ে করা হয়নি, করা হয়েছে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের উপর। হামলা পর থেকে ভয়ে অফিসে কোন কর্মকর্তা আসে না। বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে এই কার্যালয়। আমরা এখন কোন সুবিধা নিতে পারছি না।

এদিকে থানায় মামলা না নিলে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী ইকবালের স্ত্রী রোজী ইকবাল (৪০) নিজে বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম  সফিক (৪৫), শফিকুল ইসলামের ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্ত (২৮) একই পিতার ছেলে তাহসিন ইসলাম সিমন (২০),গিয়াস উদ্দিন টুলুর ছেলে সাং মুঈন (২১), ফেরদৌস হাসান শাওন ওরফে টেনশন শাওন (২২), পিতা- ল্যারা আক্তারের ছেলে মাঈন উদ্দিন (২৩),বাচ্চু মিয়ার ছেলে নাঈম ওরফে পাগলা নাঈম (২২), অন্তর তাপদার ফাহাদ (২০), মজিবুর রহমানের ছেলে মিঠু (২৩) আবুল হোসেন আবুলের ছেলে সাইদুল (২৪) হারুনের ছেলে শামীম (২৩), জলিল ক্বারীর ছেলে আব্দুল্লাহ (২৪), শুকুর আলীর ছেলে সায়েম (২২), মুন্না মিয়ার ছেলে রিয়াদ মাহমুদ রুদ্র (২৪), কুঠি মহাজনের ছেলে সৌরভ (২৩), নুরুল ইসলামের ছেলে সাগর (২৩),পারভেজ (২৩), কামরুল (২১)।

মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, বাদী রোজী ইকবাল এবং আসামিরা একই এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) কাউন্সিলর ২নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। স্বামীর রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রোগ্রামের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছে। এরই সুযোগে আসামিরা তার বসতবাড়িতে মোটরসাইকেল যোগে সশস্ত্র মহড়া ও তাদের বসতবাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ককটেল ও বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। পরবর্তীতে আবার বিভিন্ন দেশীয় তৈরী অস্ত্র ও এসএস পাইপ, বাঁশের কঞ্চি, কাঠের ডাসা, লোহার রড, হকিস্টিক, ইত্যাদি নিয়ে বাদীর স্বামীর ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে জোরপূর্বক ভাবে প্রবেশ করে অফিসে থাকা চেয়ার-টেবিল, দরজা-জানালা, জানালার থাইগ্লাস ও বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং কম্পিউটার ভাংচুর করে যার মূল্য অনুমান ১২ লাখ টাকার ক্ষতি করে এবং অফিসের ভিতরে থাকা আলমারীতে নগদ ৮ লাক্ষ  টাকা ও বিভিন্ন মূল্যবান দলিলপত্র নিয়ে যান। ওইসময় রোজী ইকবালের স্বামীর অফিসে থাকা অফিস সচিব অর্থাৎ এই মামলার ২নং সাক্ষী আসামিদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ৭ ও ৩ নং আসামি ২নং সাক্ষীকে লোহার রড দিয়ে এলোপাথারী ভাবে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক নীলা-ফুলা জখম করে। সেসময় ৪নং আসামি ২নং স্বাক্ষীর হাতে থাকা ১টি ভিভো মোবাইল যাহার মূল্য ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।এবং ৫নং আসামি তার প্যান্টের পকেটে থাকা নগদ ১২ হাজার৫'শ টাকা নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই স্বাক্ষী প্রান বাঁচানোর জন্যে ডাক-চিৎকার দিলে প্রথম আসামি তাকে গলা চেপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরে তার চিৎকার শুনে স্বাক্ষীরা ও আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসলে আসামিরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। যাওয়াকালীন সময়ে ১, ৮ ও ৯নং আসামির হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষণের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন সময়ের নারায়ণগঞ্জকে জানান, গত শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও  তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী আমার কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এসময় অফিসের সচিবসহ বেশ কয়েকজনকে অফিসে না বসতে হুমকি দেয় তারা। এর আগেও এই বাহিনীটি মধ্যরাতে আমার বাড়িতে হামলা করে। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ কোন অভিযোগ না নিয়ে উল্টো আমার লোকজনদের হয়রানি করেন। পরবর্তীতে আমি নারায়ণগঞ্জ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করতে বাধ্য হই। এ ঘটনায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

Islams Group
Islam's Group