আগে থেকেই ঘোষণা ছিল সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অন্তর্ভুক্ত বন্দর থানা কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন হবে। কিন্তু সভাপতি প্রার্থী দুইজনের মধ্যে নূর মোহাম্মদ পনেছ ছিল মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর পছন্দের। ভোটারদের অভিযোগ পনেছকে জয়ী করাতে আগের দিন শহরের নতুন কোর্ট এলাকাতে একজন প্রভাবশালী আইনজীবী নেতার চেম্বারে কোরআন শরীফ ছুয়ে কয়েকজন ভোটারকে প্রতিজ্ঞা করানো হয়। একজন হিন্দু ভোটারকেও প্রতিজ্ঞা করানো নিয়ে বিরোধ বাধে। পকেট কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলেও গিয়ে পৌছায় মাসলম্যান খ্যাত নেতাকর্মীরাও। লক্ষ্য ছিল সম্মেলন ছাড়াই জোর করে কমিটি গঠনের।
শুক্রবার ৯ জুন সম্মেলনস্থলে সাখাওয়াত ও টিপুর বক্তব্যে পনেছের প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলর শাহেন শাহকে পরোক্ষ কটাক্ষ করা হয়। এ নিয়ে পুরো সম্মেলনস্থলে কিছুক্ষণ পর পর হৈ চৈ আর বাকবিতন্ডা ঘটে। টিপু ও সাখাওয়াত নিরপেক্ষতা হারিয়ে সরাসরি পনেছের পক্ষ নেন। কিন্তু শেষতক নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড চাপে সম্মেলন দিতে বাধ্য হন। আর ভোটে ৪৫ জনের ২৪টি পড়ে শাহেন শাহ এর ব্যালটে। বাকি ২১টি পনেছের। জিতে যান শাহেনশাহ, হেরে যান সাখাওয়াত ও টিপু।
বিকেল ৪টায় মদনপুরের ২৭নং ওয়ার্ড কুড়িপাড়া হাইস্কুল মাঠে সম্মেলন শুরু হয়। প্রধান বক্তা মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসনে খান, সম্মেলনের উদ্বোধক মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
বন্দর থানা বিএনপির আহবায়ক নূর মোহাম্মদ পনেছের সভাপতিত্বে বন্দর থানা বিএনপির সদস্য সচিব নাজমুল হক রানা সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন আনু, ফতেহ মো. রেজা রিপন, মাসুদ রানা, বন্দর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মাজহারুল ইসলাম রিপন ও সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধান।
সম্মেলনে বক্তৃতা পর্ব শেষে টিপু মাইক হাতে নিয়ে বলতে থাকেন যারা বিগত দিনে জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিল তারা যেন না দাঁড়ায়। প্রয়োজনে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করে দিবেন। তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। ওই সময়ে শুরু হয় হৈ চৈ।
তখন সভাপতি প্রার্থী শাহেন শাহ এর সঙ্গে টিপুর তুমুল বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়। তখন শাহেন শাহকে লাঙলের লোক আখ্যায়িত করেন টিপু। বিপরীতে টিপুকে বিদিশা এরশাদের লোক আখ্যায়িত করেন শাহেন শাহ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পাল্টা পাল্টি উত্তপ্ত বাদানুবাদ ঘটে। পরিস্থিতি উত্তাপ ছড়ালে আজাদ মঞ্চ থেকে নেমে যান। ওই সময়ে কাউন্সিলর তথা ভোট ছাড়া কোন ভাবেই সম্মেলন শেষ করা হবে না সাফ জানিয়ে দেন শাহেন শাহ ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে প্রবল চাপের মুখে ভোট দিতে বাধ্য হন সাখাওয়াত ও টিপু। পরে একটি গোপন কক্ষে গিয়ে আজাদ, সাখাওয়াত ও টিপু মিলে চেষ্টা করেন ভোট বাদ দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করতে। কিন্তু তখন বাইরে নেতাকর্মীদের চাপের মুখে যখন ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত হয় তখন ভোটারদের পনেছকে ভোট দেওয়ার আহবান রাখেন টিপু ও সাখাওয়াত।
গোপন কক্ষে ভোটে শাহেনশাহ পান ২৪ ভোট। আর ৪৫ ভোটারের বাকি ২১টি পড়ে পনেছের।
সাধারণ সম্পাদক পদে বন্দর থানা বিএনপির সদস্য সচিব নাজমুল হক রানা ও রাসেলের নাম উত্থাপন হলেও সভাতে রাসেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়। শেষে রাসেল প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলে রানা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যান।
আপনার মতামত লিখুন :