নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভা ও গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনে বার বার সামনে আসছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। প্রার্থী, স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠে এসেছে একাধিকবার। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে চিঠি আসলেও বিষয়টি তোয়াক্কাই করছেন না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। উল্টো, গা সওয়া ভাব করে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজ কর্মকান্ড।
গত দুই সপ্তাহে দুই পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে একের পর এক বিতর্ক উঠেই চলছে। শুরুর দিকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেই প্রচার প্রচারনা, ফেস্টুন পোস্টার টানানো, লিফলেট বিতরণ এবং শোডাউন করতে দেখা যায়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হবার পর রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীকে নির্বাচনবিধি মেনে চলার জন্য চিঠি প্রদান করেন। এরপর আড়াইহাজার পৌরসভায় প্রতীক বরাদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা তুলনামূলক সংযত হলেও এরপরে আবারও ফিরে গেছেন পুরোনো ভঙ্গিমায়। যা নিয়ে এখন আপত্তি তুলছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
৫ জুন বিকেলে সুন্দর আলীর পক্ষে যে মিছিল বের হয় সেখানে একটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশায় বসা ছিলেন বাবু। ওই অটো রিকশার ছাদে ছিল মাইক। বাবুকে মাইক হতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে রিকশায় বসেই। তাকে ঘিরেও ছিল লোকজনের সরব উপস্থিতি।
এর আগে আড়াইহাজার পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সুন্দর আলীর সাথে বৈঠক করেন উপজেলার বেশ কিছু স্কুল ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ। যারা ইতোপূর্বে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বাচনে। সেই বৈঠকে শিক্ষকরা সুন্দর আলীকে জেতানোর অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। এনিয়ে আপত্তি তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে শিক্ষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাদের কোন দায়িত্ব পরেনি।
গোপালদী পৌর এলাকায় সড়ক সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও গোপালদী পৌর মেয়র হালিম সিকদার। নির্বাচনী বিধিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, কোন প্রার্থী নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোন প্রকল্পের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন বা নামফলক উন্মোচন করতে পারবেন না।
আড়াইহাজার পৌর নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্ধের আগে এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও দলীয় প্রার্থী সুন্দর আলী ঝাউগড়া ইদগাহ মাঠে উঠান বৈঠকের আয়োজন করেন। বিধিমালা অনুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারনা করতে পারবেন না। এখানেও স্পষ্ট আচরণ বিধি ভঙ্গ করেন প্রার্থী ও এমপি উভয়েই। শুধু আচরনবিধি ভঙ্গই নয়। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, 'নৌকার প্রার্থী ব্যাতিত অন্য প্রার্থীদের এলাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না।' তার এই বক্তব্য সংবলিত অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অন্যদিকে আড়াইহাজার পৌরসভার স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহের আলী মোল্লা বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে বার বার দাবি জানাচ্ছি। বিভিন্ন ভাবে দেখতে পেয়েছি আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সুন্দর আলীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। একই ভাবে অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও মামুন অর রশীদও আচরনবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, একের পর এক অভিযোগ চিত্র ও ভিডিও সহ প্রকাশিত হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তারা কেবল একই মন্তব্য বার বার করে যাচ্ছেন। আর তা হচ্ছে এই বিষয়ে কিছু জানা নেই, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। এই ধরণের মন্তব্য দলীয় প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনে উৎসাহিত করে। অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে নিজ থেকে খোঁজ নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখলে উপকৃত হবেন সকল প্রার্থীরা।
আপনার মতামত লিখুন :