News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০

এক নারীতেই কুপোকাত বিএনপি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি : প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩, ১০:২৯ পিএম এক নারীতেই কুপোকাত বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার আওয়ামী লীগপন্থী নারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুইটি ইয়াসমিনেই যেন কুপোকাত হয়ে গেলেন বিএনপির আইনজীবীরা। সুইটি ইয়াসমিনের বাধায় শেষ পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে শেষ না করেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সেই সাথে তাদের গলাধাক্কাও খেতে হয়েছে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের দ্বারা। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কর্মসূচি সম্পন্নভাবে শেষ করার সাহস করতে পারেননি তারা।

আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে সমিতিতে বীরমুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান বার ভবনের নিচ তলায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। যথারীতি তাদের কর্মসূচি শুরু হয়।

কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে তাদের এই কর্মসূচি চলে। কর্মসূচির এক পর্যায়ে বক্তাদের বক্তব্য চলাকালিন সময়ে হঠাৎ করেই সভার মাইক বন্ধ হয়ে যায়। সবাই মনে করছিলেন হয়তো মাইকের সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় অ্যাডভোকেট সুইটি ইয়াসমিন সভাস্থলে এসে অপারেটরকে বলে মাইক বন্ধ করে দিয়েছেন।

তখন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন প্রধান, অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির সহ বিএনপির আইনজীবীরা ছুটে এসে সুইটি ইয়াসমিনের কাছে জানতে চান কি জন্য মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সুইটি ইয়াসমিন তখন একাই সবাইকে বাধা দিয়ে বলতে থাকেন এখন নামাজের সময় চলছে। এখন কোনো মাইক বাজানো যাবে না। তখন তার সাথে অ্যাডভোকেট মমিন সহ দুই একজন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী ছিলেন।

আর এই কয়েকজন আইনজীবী মিলে বিএনপির সকল আইনজীবীদের সাথে তর্ক করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহসিন মিয়া আওয়ামী লীগপন্থী অন্য আইনজীবীদের নিয়ে ছুটে আসেন। সেই সাথে সাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চান আপনারা এখানে প্রোগ্রাম করার অনুমতি নিয়েছেন? তখন সাখাওয়াত পাল্টা উত্তরে বলেন অনুমতি নিতে হবে না।

সাখাওয়াতের এই উত্তরে অ্যাডভোকেট মোহসিন মিয়া সহ আওয়ামী লীগপন্থী সকল আইনজীবীরা ক্ষেপে যান। সেই সাথে অনুষ্ঠানস্থল থেকে মাইক ও সাউন্ড বক্স সরিয়ে নেয়ার জন্য বলেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজে গিয়ে সাউন্ডবক্স সরিয়ে দেন। আর এসময়ে বিএনপির আইনজীবীদের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ঠেলাঠেলির ঘটনা ঘটে। বিএনপির আইনজীবীদের ধাক্কা দিতে দিতে এক কর্ণারে নিয়ে যান। বিএনপির কয়েকজন আইনজীবী পাল্টা ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করলেও পেরে উঠতে পারেনি।

এদিকে বিএনপির আইনজীবীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরকে বারবার কর্মসুচি বন্ধ করতে বলা হয়। এরই মধ্যে হৈ চৈ শুনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ছুটে আসেন। সেই সাথে বিএনপির আইনজীবীদের বলতে থাকেন আপনারা অনুমতি কেন নেননি? যেহেতু আপনার অনুমতি নেননি তাহলে এখানে প্রোগ্রাম করতে পারবেন না। আপনাদের কারণে সাধারণ আইনজীবীদের সমস্যা হচ্ছে। তারা নামাজ পড়তে পারছেন না।

এসময়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আলী আকবর স্লোগান ধরেন। তার স্লোগানের সাথে সাথে আওয়ামী লীগপন্থী অন্যান্য আইনজীবীরাও স্লোগান ধরেন। তাদের স্লোগানের বিএনপির আইনজীবীরাও স্লোগান ধরেন। এভাবে কিছুক্ষণ সময় ধরে পাল্টাপাল্টি স্লোগান চলতে থাকে।

এর মধ্যেই আওয়ামী লীগপন্থী এক আইনজীবীদের বিএনপির ব্যানার খুলে ফেলে দেন। এতে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সহ বিএনপির আইনজীবীরা ওই আইনজীবী দিকে তেড়ে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা এগিয়ে আসলে বিএনপির আইনজীবীরা থেমে যান। এভাবে কিছুক্ষণ সময় ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি চলে। পরে বিএনপির আইনজীবীরা কর্মসূচি বন্ধ করলে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের বাধার কারণে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সহ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা বাধা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তারা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা অতর্কিতভাবে এসে আমাদের কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। তারা তাদের স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এখানে প্রোগ্রাম করতে হলে অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তারাও প্রোগ্রাম করলে অনুমতি নেই না। সকল আইনজীবীরাই এই বার ব্যবহার করতে পারবে।

তবে এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সুইটি ইয়াসমিন বলেন, তারা নামাজের সময়ে মাইক বাজিয়ে সভা করছিলো। সাধারণ আইনজীবীরা বলার পরেও তার মাইক বন্ধ করছিলো না। পরে আমি গিয়ে তাদের মাইক বন্ধ করতে বলেছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহসিন মিয়া বলেন, তারা নামাজের সময় মাইক বাজিয়ে প্রোগ্রাম করেছিলো। আমাদের সাধারণ আইনজীবী প্রথমে তাদেরকে ভালোভাবে বললেও তারা মাইক বাজানো বন্ধ করছিলো না। তার আমাদের আইনজীবীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। পরে সাধারণ আইনজীবী পক্ষে আমরা এসে মাইক বন্ধ করেছি। সেই সাথে তাদের কর্মসূচি বন্ধ করতে বলা হয়।  

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, সকল আইনজীবীদের জন্যই এই বার। কিন্তু কিছু নিয়ম কানুন অনুসরণ করতে হবে। বিএনপির আইনজীবীরা সমিতির অনুমতি ছাড়াই কর্মসূচি পালন করেছিলো। সেই সাথে নামাজের সময় তারা মাইক বাজাচ্ছিলো। ইমাম সাহেব কয়েকবার গিয়ে তাদেরকে বলেছে মাইক বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তারা মাইক বন্ধ করছিলো না। তাই সাধারণ আইনজীবীদের সুবিধার্তে তাদেরকে কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে।

Islams Group
Islam's Group