নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর শেরে বাংলা সড়কে ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে আধিপত্যের জের ধরে তুষার (৩১) নামে ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষরা। অভিযোগকারীদের অভিযোগ, তাকে হত্যার উদ্দেশ্য দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে আসে হামলাকারীরা। হত্যায় ব্যর্থ হবার পর এলাকায় হাতবোমার বিষ্ফোরণ ও তুষারের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
৩ জুন শনিবার রাত সোয়া নয়টা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত এই তান্ডব চলে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধানের ভাই রাসেল প্রধানের দিকে। এই ঘটনায় নারী সহ অন্তত চারজন আহত হয়েছে। ভুক্তভোগী তুষারের পরিবার থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আহতরা হলেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ী তুষার (৩১), তার বড় বোন বৈশাখী (৩৬) ভুক্তভোগীর মামা কামাল (৫৫) ও মতিন(৭৫)।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তুষারের বড় বোন বৈশাখী (৩৬) বলেন, ‘ঘটনার আধাঘণ্টা আগে আমাদের বাসায় একটা ছেলে এসে তুষারের নাম্বার চায়। আমার মা সরল বিশ্বাসে নাম্বার দিয়ে দেয়। ওরা আমার ভাইকে ফোন করে তার অবস্থান জেনে নেয় এবং অফিসে গিয়ে হামলা চালায়। ছাত্রলীগের রাফেল আর তার ভাই রাসেল মিলে আমার ভাইকে মারধর করে। আমার মামা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আমার ভাইকে উদ্ধার করলে ওরা দৌড়ে চলে যায়। আমরা খবর পেয়ে আমরাও চলে আসি।’
এরপর কিছুক্ষন পরেই আবার তারা বড় বড় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের গেট কোপাতে থাকে। ইট ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করে। আমার ভাইকে মারার জন্য ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে আমরা সবাই বাধা হয়ে দাঁড়াই। আমার পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমার বড় মামাকে পিস্তল তাক করে গালাগালা করে আর বলে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবে। আমাদের মারধর করার পর তিনবার ফাঁকা গুলি করে আর দুইটা ককটেল ফাটায়। আমাদের ভাড়াটিয়াদের একটা মোটরসাইকেল ভেঙ্গে ফেলে। এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে পরে তারা পালিয়ে যায়।’
কেন এই হামলা জানতে চাইলে বৈশাখী বলেন, মূলত আমার ভাইয়ের সাথে রাসেল প্রধান, রাফেল প্রধানদের বিরোধ ইন্টারনেট ব্যবসাকে ঘিরে। ওরা আমার ভাইকে ব্যবসা করতে দিবে না। প্রায়ই আমাদের লাইন কেটে ফেলে। পরে উল্টো আমাদের উপর দোষ চাপায়। এগুলো নিয়ে প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে সালিশ মিমাংসা হইসে। আমার বোনের স্বামী এই বিষয়টি মধ্যস্থতা করে দিতো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে পরে আছে অসংখ্য ভাঙ্গা কাচ। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ভাঙচুর করে রাখা হয়েছে। বাড়ির ভেতরেও ছড়িয়ে আছে জানালার ভাঙ্গা কাচ। ঘটনার আকস্মিকতায় থরথর করে কাপছেন ভুক্তভোগীর মামা মতিন (৭৫)। ভেতরে আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন ভুক্তভোগী তুষার। হামলার পর আতংকে আছে পুরো পরিবার ও আশেপাশের লোকজন।
ভুক্তভোগী তুষার বলেন, রাসেল প্রধানের সাথে আমার কথা হচ্ছিলো। এর মধ্যেই রাফেল প্রধান, রাজীব লোকজন নিয়ে এসে আমার উপর হামলা করে। আর দ্বিতীয়বার যখন আবার হামলা চালাতে আসছে। তখন আমি বাসার দোতালা থেকে দেখেছি রাসেল বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা দুই ভাই মিলেই এই হামলা চালিয়েছে। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম জেড এন আইটি সলিউশন। আমি ব্যবসা শুরু করার ৩ বছর পর ওরা প্রধান কমিউনিকেশন নামে ব্যবসা শুরু করে। আমার সার্ভিস ভালো হবার প্রতিহিংসায় এখন আমাকে ব্যবসা করতে দিতে চায় না।
এদিকে ঘটনার পরপরে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ছুটে আসেন যুবলীগ নেতা এহসানুল হক নিপু, আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজ উদ্দিন লাভলু সহ অনেকে।
ঘটনাস্থলে আসা ফতুল্লা মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক মনির বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধানের ব্যবহৃত দুটি নাম্বারে একাধিকবার কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :