প্রতিবারের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে চরম বিশৃঙ্খলা ও নিজেদের মধ্যেই মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আর এই বিশৃঙ্খলা ও মারামারির ঘটনার পিছনে বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। যাদেরকে ঘিরে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে থাকে। কেউ কারও কোনো রকমের নির্দেশনা মানেন না।
আর এই নেতারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান রনি, যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। আর এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
তারই অংশ হিসেবে ২৩ মে বিকেলে শহরের খানপুর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেই সাথে পদযাত্রা পূর্ববর্তী সমাবেশে বক্তব্য শুরু হয়।
বক্তব্য শুরু হওয়ার সাথে সাথেই যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন। এসময় তাকে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহেদ স্বাগত জানিয়ে থামাতে বলেন। আর এতেই জোসেফের লোকজন শাহেদের উপর ক্ষেপে যায়। এসময় শাহেদ ও জোসেফের অনুসারীদের সাথে বাকবিতন্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
পরে অন্যান্য নেতারা এগিয়ে এসে তাদের শান্ত করেন। তাদের থামাতে গিয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের মোবাইল চুরি হয়ে যায়। আর এই চুরির দোষ পড়ে জোসেফের অনুসারীদের উপর। পরে আবার দ্বিতীয় দফায় তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। রাজীব শাহেদ জোসেফ বারবার তাদের অনুসারীদের থামার কথা বললেও তারা থামছিলো না।
এসময় সমাবেশস্থলে আসেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর এসময়ে রিজভীর পাশে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমনের লোকজনদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ঘটে। সুমনকে ধাক্কা দেন আজাদের এক অনুসারি।
তখন সুমনের পক্ষে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির লোকজন মিলে আজাদের লোকজনদের উপর চড়াও হলে শুরু হয় ফের মারামারি। প্রধান অতিথি রুহুল কবির রিজভী মাইক হাতে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তারা শান্ত হন।
পদযাত্রা শেষে ওই মারামারির ঘটনার রেস ধরে শহরের মিশনপাড়া এলাকার বৈশাখী হোটেলের সামনে সাখাওয়াত ও টিপুর সাথে কথা বলার সময়ে মশিউর রহমান রনিকে মারতে আজাদের অনুসারি রফিক। পরে রফিককে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তারপর রনির অনুসারীরা রফিককে একা পেয়ে রাস্তায় ফেলে বেদম মারধর করে। সেই সাথে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে।
খানপুর হাসপাতালে ছাত্রদল নেতা আতা-ই-রাব্বীকে রনির অনুসারি মনে করে রাজীবের অনুসারীরা মারধর করে। এভাবে পুরো ঘটনাজুড়েই এই কয়েকজন নেতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়ে থাকে।
সেই সাথে মহানগর বিএনপির অন্যান্য কর্মসূচিতেও এসকল নেতাদের অনুসারীরা উগ্র ভূমিকায় থাকেন। কেউ কারও নির্দেশনা মানতে চান না। এমনকি সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনাও তারা মানেন না। গত ১৯ মে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির যৌথ কর্মসূচিতেও এরকম বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছিলো।
নজরুল ইসলাম আজাদ ও মাহমুদুর রহমান সুমন আড়াইহাজার এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য জেলা পর্যায়েও বলয় গড়ে তুলার চেষ্টা করছেন। আর এই বলয়কে ঘিরেই প্রত্যেক কর্মসূচিতে চরম বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :