নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম আগামী কমিটিতে নিজের পদ নিয়ে আছেন দোলাচলে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পাঠানো খসড়া কমিটিতে স্থান পেলেও জায়গা হয়নি সাধারণ সম্পাদকের খসড়ায়। অতীত ইতিহাসও তেমন সুখকর নয় তার। কথা বলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে নিজের দলের বিরুদ্ধেই মন্তব্য করে ফেলার ঘটনা জানা আছে সকলের। এমন অবস্থায় আসন্ন কমিটিতে পদ ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠছেন জাহাঙ্গীর।
গত দুদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আলোচনায় আছেন জাহাঙ্গীর আলম। সরকারি তোলারাম কলেজের সাবেক এই ছাত্রনেতা বর্তমানে মেয়র আইভীপন্থী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। আইভীর পক্ষে সর্বদা গলা উঁচু করে কথা বলে যান। কথাবার্তায় অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মত গুছিয়ে বা ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারলেও উঁচু গলার কারণে আইভী বলয়ে কদর রয়েছে বেশ। কিন্তু কেবল আইভীকে খুশি করতে গিয়ে নিজেকে সর্বমহলে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে শুরু করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। কোন কারণে আইভীর আস্থা তার উপর থেকে সরে গেলে ভিন্ন কোথাও আশ্রয় পাবেন না তিনি।
গত সোমবার কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কুকুরের বাচ্চা বলে গালি দেন। একই সাথে তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ভরা মজলিসে। সরাসরি সম্প্রচারে থাকা বেশ কিছু অনলাইন থেকে এই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিএনপির নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীর আলমের এমন বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে মঙ্গলবার মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতেও এর প্রভাব ছিল বিদ্যমান। জেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের আর কোন নেতা এই ধরনের মন্তব্য না করলেও জাহাঙ্গীর আলম একাই গালাগাল করে নিজের আলাদা পরিচয় দাঁড় করিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন তার এই মন্তব্য শুনে উপস্থিত কিছু নেতাকর্মী হেসে উঠেন। তবে একই সাথে এমন মন্তব্যের পর পেছনে বসে থাকা নেতাদের কিছুটা বিব্রত মুখে বসে থাকতে দেখা যায়। সাধারণত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই ধরনের মন্তব্য করেন না। সেখানে জাহাঙ্গীর আলমের মন্তব্য খানিকটা বিব্রত করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী।
বেশ কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘বিএনপি উগ্র মনোভাব পোষণ করলেও আওয়ামী লীগ এর থেকে বিরত থাকে। আমাদের প্রতিবাদ হয় সভ্য এবং মার্জিত ভাব বজায় রেখে। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমের ভেতর সেটা ছিল না। হয়তো তিনি অতি ক্ষোভ থেকে এই মন্তব্য করেছেন, কিন্তু উপস্থিত সবাই হঠাৎ এমন মন্তব্যে কিছুটা বিব্রত হয়ে পরেন।’
সূত্র বলছে, জেলা আওয়ামী লীগের পদ প্রত্যাশী এই নেতার কর্মী নেই বললেই চলে। কর্মী বিহীন নেতা হিসেবে রাজনীতিতে টিকে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু বেফাস বক্তব্য ও শামীম ওসমানের বিষোদ্গার করে সহজেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে টিকে থাকা যায়। আর এই মন্ত্র জাহাঙ্গীর আলম ভালোভাবেই জানেন। আর সেই কারণেই কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির মত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রতিপক্ষকে গালাগাল করে ধুয়ে দিয়েছেন।
জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম পদ পাওয়ার আশা আমাদের নেত্রীকে গালাগাল করেছে। সে কোনভাবেই যোগ্য নেতা নন আওয়ামী লীগের জন্য। কেবল পদ পাওয়ার লোভে গালাগাল করে আলোচনায় উঠে আসতে চেয়েছে। নিজ দলেও খুব বেশি স্থান পাচ্ছেন না। এই ধরনের মন্তব্য করে তার ব্যক্তিগত লাভ হলেও রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে।’
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহীর বিএনপি নেতাকে জবাব দিতে গিয়ে নিজেও ঠিক একই কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে নিজেকেও নামিয়ে এনেছেন সেই বিএনপি নেতার কাতারে। অথচ একই সময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ভদ্রোচিত জবাব দিয়েছেন। এমনকি বিদেশী রাষ্ট্র থেকেও প্রতিবাদ এসেছে বিএনপি নেতার দিকে। এসব বিষয় বিবেচনা না করে পাড়ার পাতি নেতাদের মত গলাবাজি কোনভাবেই জেলা পর্যায়ের নেতার কাছ থেকে আশা করা যায় না।
আপনার মতামত লিখুন :