News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

বিএনপিতে ক্রমশ বিশৃঙ্খলা : কর্মী সামলাতে অযোগ্য নেতারা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩, ১০:৫২ পিএম বিএনপিতে ক্রমশ বিশৃঙ্খলা : কর্মী সামলাতে অযোগ্য নেতারা

দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্র্মীরা। প্রতিটি কর্মসূচিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষ, মারামারি ঘটনার ফলে কর্মসূচিগুলোতে যেমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে একইভাবে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপিকেও তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আসা কেন্দ্রীয় নেতারাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তবে এসব নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপই করছেন না বিএনপির কর্মী ও সমর্থকরা বরং বিশৃঙ্খলা চলা অবস্থায় নেতৃবৃন্দেরকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। দিন যতোই যাচ্ছে কর্মসূচিগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ততোই তাদের উচ্ছৃঙ্খল মনোভাব প্রকাশ করছেন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৩ মে) ছিল কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগর বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। এদিনও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। এদিন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে শহরের খানপুরে হাসপাতাল রোডে কয়েক দফা মারামারির পর পদযাত্রা শেষ করে ফের শহরের মিশনপাড়া এলাকায়ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বিকেল ৪টায় সভা শুরুতেই যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ মিছিল নিয়ে প্রবেশের সাথে সাথেই মহানগর যুবদলের আহবায়ক মমতাজউদ্দিন মন্তুর লোকজনদের সঙ্গে বাকবিত-া ঘটে। ওই সময়ে বিএনপির জেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটলে দোষ পড়ে জোসেফের সঙ্গে থাকা লোকজনদের। বাকবিত-া থামাতে গেলে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহেদ আহমেদের উপর চড়াও হয় জোসেফের লোকজন। শুরু হয় মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা। একই সময়ে রিজভীর পাশে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সুমনের লোকজনদের মধ্যে বাকবিত-া ঘটে। তখন সুমনের পক্ষে যুবদলের জেলার সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির লোকজন মিলে আজাদের লোকজনদের উপর চড়াও হলে শুরু হয় ফের মারামারি। প্রধান অতিথি রুহুল কবির রিজভী মাইক হাতে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এর আগে, গত ১৯ মে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী লীগের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির যুগপৎ সমাবেশেও মারামারি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।  কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে বিএনপির এই কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটলেও চরম বিশৃঙ্খলায় জনসমাবেশটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়। কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে থেকেই পুরো কর্মসূচি জুড়েই বিশৃঙ্খলার ছাপ দেখা গেছে। জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দেরও এ নিয়ে উদাসীন মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। শুধুমাত্র জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবকে একাধিকবার কর্মসূচির শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এদিন জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন, যুগ্ম আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মাসুকুল ইসলাম রাজিব, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ওইদিন কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সমর্থকদের মধ্যে তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটে। মূলত দুজনের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করলে মঞ্চের সামনে কারা আগে অবস্থান করবে এ নিয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যকার তর্কবিতর্ক একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরবর্তীতে দুই গ্রুপের সমর্থকরা একে অপরের উদ্দেশ্যে চেয়ার ছুড়ে মারেন। তখন মঞ্চে বিএনপির এক নেতা বক্তব্য প্রদান করছিলেন। এমন হট্টগোল দেখে তিনি তার বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু মাইকে তাদেরকে বারবার শান্ত হতে অনুরোধ করেন। প্রায় ৬-৭ মিনিট এমন হট্টগোলের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে কর্মসূচি আবারও শুরু হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শহীদ মিনারে এসে উপস্থিত হন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কর্মসূচিস্থলের এমন বিশৃঙ্খলা দেখে তাকে বিরক্ত হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে তার বক্তব্যেও এ নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এদিকে পুরো কর্মসূচি চলাকালীন মঞ্চে থাকা নেতারা বারবার মঞ্চের সামনে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান করতে এবং স্লোগান দিতে মানা করলেও কেউ তাদের কথা বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য করেননি। এমনকি প্রধান অতিথি যখন বক্তব্য দেওয়া শুরু করবেন তখনও নেতাকর্মীরা বিভিন্ন নেতার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এ নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, কোনো অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের স্লোগান এখানে চলবে না। স্লোগান দিতে চাইলে শুধু বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিবেন। এই কথা বলার কিছুক্ষণ পর নেতাকর্মীরা স্লোগান দেওয়া বন্ধ করেন।

এ নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনও। ওইদিন সময়ের নারায়ণগঞ্জের এ প্রতিবেদককে বলেন, কিছু নেতাকর্মীর বিশৃঙ্খলার কারণে আজ পুরো কর্মসূচির সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয়েছে ঠিক তেমনি আমাদের দলের ভাবমূর্তিও এতে করে নষ্ট হচ্ছে। মূলত যে স্থানটিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে এতে মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থান দেওয়া অসম্ভব ছিল। স্থানটি যতোটুকু মানুষ উপস্থিত হতে পারে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ সেদিন সমাবেত হয়েছিলেন। এ নিয়ে প্রধান অতিথিও রাগান্বিত হয়েছেন। এতো ছোট স্থানে নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই অসম্ভব ছিল। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন ছোট স্থানে মহানগর ও জেলা বিএনপি একসঙ্গে কোনো সমাবেশ পালন করবো না।

এদিকে, গত ১৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই আহবায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর প্রথম কর্মসূচিতে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছিলেন, সামনে দাঁড়ানো নিয়ে কিংবা বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান দেওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবেন না। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি সম্মান দেখাবেন এবং তাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন। এই মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। গিয়াস উদ্দিনের এ বক্তব্যের পর ওই কর্মসূচি কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটা ছাড়াই পালিত হয়। জেলা বিএনপির কয়েকটি কর্মসূচিতে কিছু বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। তবে মহানগর বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই মারামারি, দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে কখনো কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না বরং মিডিয়ার সামনে তাঁরা নিজেদের ফোকাস করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

বিএনপির কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া এটা এখন চিরায়ত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের মতে, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থেকেই যেভাবে কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে ক্ষমতায় থাকলে তাঁরা কি যে করবে? তাদের এই সময়টায় যেখানে ঐক্যবদ্ধ থাকা বেশি প্রয়োজন ওই সময় তাঁরা নিজেদের স্বার্থে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। যা নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনবে।

Islams Group
Islam's Group