স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘদিন ধরে কমিটি গঠন না হওয়ায় নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলো। বিশেষ দিনগুলো ছাড়া বর্তমানে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগেরও বর্তমানে একই অবস্থা। ১৯ বছর আগের আহবায়ক কমিটি দিয়ে কোনোরকম চলছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে কোনো কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির হাত ধরে টিকে আছে। এদিকে অনেক হাইব্রীড নেতা নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করে নানা ব্যানার, ফেস্টুন টানাচ্ছে। নিজেদের যুবলীগ নেতা দাবি করে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় সাধারণ মানুষও তাদের যুবলীগ নেতাই মনে করছেন। এর ফলে সত্যিকারের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। তাই তাঁরা চান কমিটির মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হোক। এতে করে দল আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি এইসব হাইব্রীড নেতাও নিজেদের যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে জাহির করতে পারবে না।
দলীয় সূত্রমতে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সর্বশেষ ২০০৪ সালের ৪ জুলাই ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহবায়ক করা হয় মো. মতিউর রহমান মতিকে। যুগ্ম আহবায়ক করা হয় মো. মনসুর আহমেদ ও এমএ জামানকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয় মো. কবির হোসেন, মো. মোস্তাফিজ, মো. মিজান মাস্টার, মো. শাহজাহান, মো. রেজা ফারুক, মো. মিজানুর রহমান, দিন মোহাম্মদ দিনু, মো. নেকবর আহমেদ, মো. নাজমুল ইসলাম বাবুল, মো. শহীদুল্লাহ, মো. তজিম উদ্দিন, মো. আতিকুর রহমান বাবু, মো. ফারুক আজম, মো. মানিক খন্দকার, মো. রফিকুল ইসলাম বাবু, মশিউর রহমান নিরব, মো. মামুন, শাহআলম, মো. মোফাজ্জল হোসেন, মো. মহিউদ্দিন, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. শামীম আহমেদ, মো. আসলাম, মো. নাসির, মো. জাহিদ, মো. ইকবাল হোসেন, মো. রবিউল ও মো. নাছির হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের কমিটি না হওয়ায় অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন যুবলীগ পদপ্রত্যাশীরা। পাশাপাশি নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে দলটি। নাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা আর কারো নেই। সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন আগের নির্বাচনের তুলনায় আরও কঠিনতর হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে এখনই। কারণ এবার বিএনপিও ছেড়ে কথা বলবে না। পাশাপাশি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নতুন কমিটি গঠন করায় এবার বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাই বিএনপিকে মোকাবেলা করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগকে আরও শক্তিশালী করার তাগিদ নেতাকর্মীদের। সেজন্য নতুন কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। আবার বর্তমানে কদমতলী এলাকার তানজিম কবির সজু, মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকার টাইগার ফারুক, জসীম, মিলনসহ অনেকেই নিজেদের যুবলীগ নেতাক দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁরা এসব পদ পদবী ব্যবহার করছেন। যা যুবলীগের সত্যিকারের নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করছে। তাই যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের বিকল্প কিছু দেখছেন না নেতাকর্মীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সদস্য মানিক খন্দকার জানান, আমি ২০০৩ সালে ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হই। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে থানা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি সদস্য হই। তখন বিএনপির শাসনামল ছিল। সেজন্য আমাকে বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্বারা অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে তখন বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ১০টি মামলা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে আমাদের দল ক্ষমতায় থাকায় এখন নেতার অভাব হচ্ছে না। পদ না থাকার পরও অনেকেই নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। যা আমাদের অনেক পীড়া দেয়। তাই আমরা চাই নতুন কমিটি হোক। তাহলে সবাই জানতে পারবে কে আসলে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক এবং নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি আক্ষেপের সুরে জানান, আমরা কঠিন সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের যখন যুবলীগের আহবায়ক কমিটি হয় তখন কমিটির সদস্য কোনো লোক পাওয়া যায়নি। আর এখন নেতার অভাব নেই। যারা জীবনে যুবলীগের মিছিল পর্যন্ত করে নাই তারাও নিজেদের যুবলীগ নেতা দাবি করছে, যা আমাদেরকে লজ্জা দেয়। ২০০৪ সালের দলের ওই কঠিন মুহূর্তে আমাদের নেতা শামীম ওসমানের নির্দেশে আমি আহবায়ক কমিটি গঠন করেছিলাম। তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিল বিধায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা আর সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের কমিটি না হওয়ায় যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। কেন্দ্রে থেকে এ বিষয়ে আমাদের কয়েকবার ডাকা হয়েছিল। সর্বশেষ ঢাকায় যুবলীগের যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হয় তখনও শোনা গিয়েছিল সিদ্ধিরগঞ্জে যুবলীগের নতুন কমিটি হবে। কিন্তু এতোদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো কমিটি হচ্ছে না তা আমার জানা নেই। তবে আমরা যারা বর্তমানে নেতৃত্বে রয়েছি সবাই চাই নতুন কমিটি হোক। এতে করে দল আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হবে। এসব কমিটির মাধ্যমে নতুন নতুন আরও যুবলীগ নেতা তৈরি হবে। যেকোনো দলের আন্দোলন সংগ্রামে যুবলীগের ভূমিকা বেশি থাকে। তাই আমিও চাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন কমিটি হোক। তবে আমি দীর্ঘদিন যুবলীগে থাকায় এখন আর যুবলীগে থাকতে আগ্রহী না। আমি চাই আমার স্থলে নতুন কেউ এসে দায়িত্ব গ্রহণ করুক। তবে সিনিয়র নেতাদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ থাকবে যাকেই পদ দেওয়া হবে তার যেনো সিএস, আরএস, এসএ দেখা পদ দেওয়া হয়। কোনো হাইব্রীড যেনো দলে জায়গা না পায়।
শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জ্বল জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের কমিটি না থাকায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতেও আর বেশিদিন বাকি নেই। নির্বাচনের কারণে নতুন কমিটি নাও হতে পারে। তবে আমরা চাই নির্বাচনের আগে নতুন কমিটি হোক। এতে করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। দল আগের তুলনায় আরও সুসংগঠিত হবে।
শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ থেকে শুরু করে মহানগরে কোথাও দীর্ঘদিন যুবলীগের কমিটি নেই। আসলে কমিটি কবে দিবে নাকি দিবে না তা আমারও জানা নেই। আগামীতে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে দল সুসংগঠিত করতে নতুন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর নতুন কমিটির মাধ্যমে দল আগের তুলনায় শক্তিশালী হয়। আমরা রাজপথে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারি। সিদ্ধিরগঞ্জে সর্বশেষ যে যুবলীগ গঠন করা হয়েছে ওই কমিটির ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন কমিটি হয়নি। আমাদের এখন রাজপথে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আগে ছিল শহর যুবলীগ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখন মহানগর যুবলীগ হয়েছে। কিন্তু মহানগর যুবলীগ হলেও আমাদের ১৮টি ওয়ার্ডেই নতুন কমিটি নেই। মাত্র ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি নিয়ে আমাদের দল পরিচালনা করতে হচ্ছে। এর ফলে মিটিং মিছিল কিংবা রাজনৈতিক প্রোগ্রামগুলো করাটা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। কমিটি নিয়ে কেন্দ্রের সাথেও আমাদের যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁরা বলেছিল নতুন কমিটি হবে। আশায় ছিলাম, নিজেও যোগাযোগ করেছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেক জায়গায় কমিটি হচ্ছে। আশা করছি জাতীয় নির্বাচনের আগেই নারায়ণগঞ্জেও নতুন কমিটি হবে। কারণ জাতীয় নির্বাচনে আগে যুবলীগের কমিটি গঠন করা দরকার। ২৭টি ওয়ার্ডে যুবলীগের কমিটিটা থাকলে নৌকার পক্ষে আমার কাজ করা সহজ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :