বিশেষ প্রতিনিধি : পুরনোদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলায় যে কজন নেতা আজো শতভাগ চাহিদাসম্পন্ন তাদের মধ্যে অন্যতম তৈমূর আলম খন্দকার দল থেকে দূরে আছেন। দলীয় কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশ নিলেও দলে তাঁর কোন পদ-পদবী আপাতত নেই। কিন্তু তাঁর অনুসারী অনেক। রাস্তায় নামলেই মানুষ তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে নেন।
সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে জেলা বিএনপি’র দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে সাবেক এমপি আবুল কালাম ক্লীন ইমেজ ধারী নেতা। তাঁর আসনে তিনি খুবই জনপ্রিয়। মানুষ বিএনপি বলতেই আবুল কালামকে চিনে থাকে। তাঁর পিতা জালাল হাজী সাহেবও জনপ্রিয় বিএনপি নেতা ছিলেন। জালাল হাজীর পর তাঁর ছেলে আবুল কালাম পরপর তিনবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপি’র রাজনীতিতে আবুল কালাম অগ্রগন্য।
জেলা বিএনপি’র আরেক শক্তিশালী নেতা ছিলেন সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। তিনি মারা গেছেন। তাঁর ছেলে ও ভাতিজারা যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। শহরের টানবাজার, নিতাইগঞ্জ, ডালপট্টি ও আশপাশ এলাকায় আজো বিএনপি’র ঝান্ডা তুলে ধরে আছে সাবেক এমপি সিরাজের ভাতিজারা। তাঁর ছোট ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা আজাহার হোসেন ও একজন জনপ্রিয় বিএনপি নেতা হিসেবেই পরিচিত। আজো লোকজন তাদের কথা শুনতে আগ্রহী।
শহরের বাবুরাইল ও পাইকপাড়া অংশের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এমএ মজিদ কাশীপুরের ডাবল মার্ডারের সাথে জড়িয়ে ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলেছেন। তারপরও এ অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনি শহরের মন্ডলপাড়ায় বিএনপি’র জেলা হাইকমান্ড অফিস তৈরী করে নিয়েছেন। দল ক্ষমতায় না থাকলেও তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি কমেনা। তবে মার্ডার কেসসহ আরো কিছু নেতিবাচক অভিযোগের কারণে এমএ মজিদ মন্ডলপাড়ার বাইরে যেতে পারেন না।
ফতুল্লা অঞ্চলে আজো অপ্রতিদ্বন্দ্বি এক সময়ের বিএনপি নেতা হচ্ছেন কিংমেকার খ্যাত মোহাম্মদ আলী। ফতুল্লার নেতাকর্মীরা তাঁর একান্ত ভক্ত। বিএনপি ও সকল অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা মোহাম্মদ আলীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। তিনি বক্তাবলী এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছিলেন। বিএনপি নেতা হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই তার সময় কাটে বেশি। তিনি নিজে এখন আর সরাসরি রাজনীতি করেন না। তবে এ অঞ্চলের বিএনপি’র রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। আজকের জেলা বিএনপি’র কান্ডারি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে বিএনপি’তে এনেছিলেন মোহাম্মদ আলী।
সোনারগাঁয়ে সাবেক এমপি অধ্যাপক রেজাউল করিমের জনপ্রিয়তা কম নয়। তবে তার কয়েকজন অনুসারী এগিয়ে গেছে। অধ্যাপক রেজাউল করিম দীর্ঘদিন মাঠে নেই। মাঠে ময়দানের বিএনপি’র জন্য কাজ করেন এমএ মান্নান। তিনি বিগত দিনে সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। কখনো পুরোপুরি সফল হয়েছেন কখনো হননি। তবে সংগঠনের হাল ধরে রেখেছেন শক্তহাতে। তবুও সোনারগাঁয়ের মানুষ রেজাউল করিমকেই বেশি ভরসা করেন।
আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে পুরনো নেতাদের পাশাপাশি তরুণ নেতাদের জনপ্রিয়তার পারদ উঁচুতে। আড়াইহাজারে সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙুর বেশ জনপ্রিয়। তিনি দলের কাজও করেন। তবে নিজেদের এলাকাতেই দলীয় কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রাখেন বলে ও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বড়ভাই বদরুজ্জামান খান খসরু মারা গেছেন। বড় ভাইয়ের ছেলে সুমন এখন চাচা আঙুরের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া নজরুল ইসলাম আজাদতো আছেই। এদিকে, রূপগঞ্জে প্রবীন নেতা কাজী মনিরের চেয়ে তরুণ নেতা দীপুর জনপ্রিয়তা বেশি।
মাঠ পর্যায়ে বিএনপি’র জনপ্রিয়তা এখনো বেশি বলে মনে করেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, বিএনপি’র সাবেক এমপি’দের অনেকেই আজ আগের মত সক্রিয় নয়। দলের রাজনীতির সাথে আছেন কোনমতে। কেননা, দলের তরুণ নেতারা সাবেক এমপি, ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যান- মেম্বারদের আজকাল খুব একটা পাত্তা দিতে চাননা। অনেকে গাঁয়ের জোরে রাজনীতি করেন।
বর্তমান তরুণ নেতাকর্মীদের ডিজিটাল রাজনৈতিক চর্চা মানুষকে আগের মত ধানের শীষের দিকে টানতে পারেনা। অধিকাংশ নেতা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেই নিজের ইমেজ গড়েন। দলের কি হলো সেসবে তাদের মনোযোগ নেই। সবাই ক্ষমতামুখি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন দল কবে ক্ষমতায় আসবে-এই খবর জানতে। মূলত: দলের প্রতি তাদের মমত্ববোধ শূণ্যের কোঠায়। অনেকে বিএনপি ঘেঁষা রাজনীতি করেন বলে আজো লেগে আছেন। বাদ বাকীরা আওয়ামীলীগ বা অন্য কোন দলে কাঙ্খিত পদ-পজিশন পাবেনা বলে বিএনপি’র রাজনীতি করছেন।
পদ-পজিশন লোভী তরুণ নেতাদের নর্তন-কুর্দনে বিএনপি’র প্রবীণ নেতারা দলে অনেক আগেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। নতুনরা তাদের খবরও নিতে চায়না। পরে যদি পদটুকু না থাকে। যোগ্যতাকে ভয় পায় তরুণ নেতারা। তাদের সবকিছুতেই মেকি প্রচারণা সর্বস্ব। দেওভোগের সিনিয়র যুবদল নেতাদেরকে আজকাল আর খুব একটা ডাকেনা জাকির খানের লোকজন। বরং জাকির খানের লোকজন এমন ভাব দেখায় যেনো সিনিয়র নেতাদের আর দরকার নাই। একজন জাকির খানই যেন নারায়ণগঞ্জ জেলার বড় নেতা। বিএনপি’র রাজনীতি টিকিয়ে রাকতে আর কাউকে দরকার নাই।
আপনার মতামত লিখুন :