News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
আনোয়ার খোকনের তলব সভা বাতিল

‘ভুতুড়ে’ কমিটির গোপন ফাঁস


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম ‘ভুতুড়ে’ কমিটির গোপন ফাঁস

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে তলব সভা বাতিল করা হয়েছে। ১৮ মে তাদেরকে নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সভা করার কথা থাকলেও সেটা বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য কোনো সময় হয়তো তাদের বসা হতে পারে। তবে এদিনের সভা কি কারণে বাতিল করা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।

মহানগর আওয়ামী লীগের একটি শীর্ষস্থানীয় সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার ১৮ মে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম তলব করেছিলেন। সেখানে দুইজনের সাথে মহানগর আওয়ামী লীগের বিগত দিনের সকল কর্মকাণ্ডে সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে বলা হয়েছিলো। ওই আলোচনায় উঠে আসতো মহানগর আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রসঙ্গ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের প্রসঙ্গও উঠে আসার কথা ছিলো।

আর এ সকল বিষয়ে আলোচনার পর সন্তোষজনক উত্তর না আসলে সেগুলো আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হতো। পরে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দিতেন।  একই সাথে যে কোনো দিন মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গেও দেয়ার সিদ্ধান্তও আসার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু সভার একদিন আগে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহাকে সভাটি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে বাতিল করা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সভাটি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবার হয়তো ডাকা হতে পারে।

তবে সভা হোক বা না হোক নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের চলমান কমিটি টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। দুইজনের আলোচনা করে বাতিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও এখন হয়তো আলোচনা ছাড়াই যে কোনোদিন বাতিলের ঘোষণা আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একটি শীর্ষস্থানীয় সূত্র বলছে।

এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে ২৭ টি ওয়ার্ডের একটি কমিটি পৌছানোর জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এই কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়নি। কার্যত কমিটি ঘোষণা না দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার বিষয়টি যে কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জেনে গেছেন। ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের এই ‘ভুয়া’ কমিটির বিষয়টিও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে অসন্তুষ্ট করেছে।  

দলীয় সূত্র বলছে, দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর শহরের ইসদাইর এলাকার ওসমান পৌর স্টেডিয়ামে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আর এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। সেই সাথে সম্মেলনের শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে আবারও পুনর্বহাল করা হয়েছিলো।

একই সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের একদিন পর ২৫ অক্টোবর একই জায়গায় একদিন পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলন স্তগিত ঘোষণা করা হয়। আর এই সম্মেলন স্থগিতের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার উপক্রম হয়। পরবর্তীতে মহানগর আওয়ামী লীগের ১ম সদস্য শামীম ওসমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে মিলে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থেকে কমিটি ভেঙ্গে দেয়া থেকে রক্ষা করেন।

সেই সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে নতুন করে সময় বেধে দেয়া হয় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন করার জন্য। সেই সাথে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে সম্মেলন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

এরই মধ্যে গত ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সভায় সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা প্রত্যেক ওয়ার্ডের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দেন। একই সাথে সাথে প্রত্যেক ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। আর প্রত্যেক ওয়ার্ডে পদাধিকার বলে দায়িত্বে ছিলেন সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

তারই ধারবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের শহর ও বন্দরের ১৮টি ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়। সবশেষ ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারি তোলারাম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের ১৩নং ওয়ার্ডের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্যে শহরে ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬ জন স্থলে ১০জন ও বন্দরে ৯টি ওয়ার্ডে ১৮জন স্থলে ১জনকে নির্বাচিত করতে পেরেছেন মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

জানা যায়, ১৩ জানুয়ারী থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের ১৮টি ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হয়। ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে প্রথম সম্মেলনের পতাকা তুলেন। সেখানে ওই অনুষ্ঠানে ২৬নং ওয়ার্ড সভাপতি মেছবাহউদ্দিনকে ছাড়া কাউকে ঘোষণা ছাড়া সম্মেলনের অতিথিরা চলে আসেন।

এনিয়ে শুরু থেকে বিতর্কে পড়ে যান মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের মধ্যে শক্তিশালী সংগঠক না হওয়ায় এমন শিকারও হতে হয়ে বলে নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন। কোন কাউন্সিলর তালিকা ছাড়াই সম্মেলনগুলো করেছেন মহানগরের নেতারা। এটা কোন নিয়মের ছিলো না দলের গঠনতন্ত্রে।

শহরে অঞ্চলে ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে এখানো ঘোষণা হয়নি। সেখানে সেলিম আহম্মেদ হেনা ও কামাল হোসেনের মধ্যে ঝিমিয়ে আছে। এই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন।

১২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলন আজ। সেখানে সভাপতি পদে রয়েছেন রবিউল হোসেন ও হারুণ অর রশিদ। সেক্রেটারী পদে রয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন ও শামীম খাঁ।

১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এম এ পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির। ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক প্রতীক ঘোষাল পাল। ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী পদে ঘোষনা হয়নি। এই ওয়ার্ডে সভাপতি পদে মনোয়ার হোসেন মনা ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম চঞ্চলের নাম শোনা যায়। ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে আনিস মাহমুদ ও আব্দুর মন্টু প্রার্থীতায় রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আসাদউল্লাহ। ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কামরুল হাসান মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক কবির হোসাইন।

এদিকে শহর ও বন্দর এলাকায় কয়েকটি ওয়ার্ডের নাম ঘোষণা হলেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় যেতেই পারেননি আনোয়ার হোসেন। কারণ সেখানে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে শামীম ওসমান। তিনি যেভাবে যখন চাইবেন ঠিক সেভাবেই সে সময় কমিটি গঠন করতে হবে। এর বাইরে যেন যাওয়ার সুযোগ নেই আনোয়ার হোসেনের।

এভাবে দীর্ঘদিন পর সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা সম্মেলনের আয়োজন করলেও তারা পুরোপুরি প্রাপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি। সেই সাথে এই অপ্রাপ্তির মধ্যেই সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়ে যায়। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গ ত্যাগ করে আসছেন।

সঙ্গ ত্যাগ করার পাশাপাশি এবার তারা একে অপরের শত্রু হিসেবেও নিজেদের আবির্ভাব করছেন। গত ১৪ এপ্রিল মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের ২২নং ওয়ার্ডের আয়োজনে অসহায় মানুষের পাশে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

আর এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খোকন সাহা বলেন, আনোয়ার ভাই বলেন পঁচাত্তরের পর তিনি জেল খেটেছেন। পঁচাত্তরের পরে তো অনেকেই জেল খেটেছে। কে কী পেয়েছে। নেত্রী তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। আপনি অনেক পেয়েছেন। যারা পায়নি তাদের সুযোগ করে দেন। তিনি দলটিকে বিশ টুকরো করেছেন। আজ তিনি নৌকা মার্কা চান। তার দেখাদেখি অনেকেই পোস্টার লাগাচ্ছে। আনোয়ার ভাইয়ের জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি। তাকে সিটি করপোরেশনের মেয়র করার জন্য কাজ করেছি। চন্দন শীলের সেক্রিফাইসে তিনি ২০১৬ সালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলেন। কষ্ট লাগে যখন আনোয়ার ভাই পদের জন্য তার কমিটির এক নম্বর সদস্যকে খুনী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি দল ভাঙার মিশন নিয়ে নেমেছেন।

অথচ এর আগে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা একমঞ্চে থেকে বক্তব্য রেখেছেন। তারা একে অপরকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহার মধ্যে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় আওয়ামী লীগে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এই সময়ে তাদের বিরোধ কাম্য ছিলো না। আর এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেরও হয়তো নজরে এসেছে। যার ফলে তাদেরকে ডাকা হয়েছে। হয়তো আগামী দিনে তাদেরকে মহানগর আওয়ামী লীগে রাখতে চাইবেন না।

তার আগে ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তৎকালীন শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

আর এই কমিটি গঠনের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

Islams Group
Islam's Group