নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ১২ নম্বর সহ সভাপতি তপু চন্দ্র ঘোষ। সোনারগাঁয়ের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই নেতা রাজনীতির পাশাপাশি হাল ধরেছেন ছিনতাইকারী দলের। হাতে ওয়াকিটকি ও পুলিশি বেশভুষা ধারণ করে ডিবি পরিচয়ে করেন ছিনতাই। সম্প্রতি এক প্রবাসীর ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে গ্রেপ্তার হন তপু সহ চারজন।
তপু চন্দ্র ঘোষ সোনারগাঁয়ের অর্জুনাদি গ্রামের সাধন চন্দ্র ঘোষের ছেলে। তারা বাবা পেশায় মিষ্টান্ন বিক্রেতা। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসলেও পাঁচ মাস পূর্বে একটি ছিনতাইকারী দল পরিচালনা শুরু করেন। ইতোমধ্যে অন্তত পাঁচটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল সৌদি প্রবাসী উজ্জ্বল হোসেন স্বর্ণ বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বন্দরের হাজী বাড়ি মোড় এলাকায় পৌঁছালে তার থেকে ১৭ লাখ টাকা ও ব্যবহৃত মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় ডিবি পরিচয়ে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পর ৬ এপ্রিল বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। ১৩ মে পুলিশ তপু সহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
বাকি তিন গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সোনারগাঁয়ের অর্জুনদি গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে রোহান (২২), বড়নগর এলাকার শুভঙ্কর চন্দ্র রাজবংশীর ছেলে কৃষ্ণচন্দ্র রাজবংশী (৩২) ও বগুড়ার শেরপুরের খাজা আশ্রমপাড়া এলাকার চান মিয়ার ছেলে এরশাদ (২৪)। আসামীদের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্র একজন স্বর্ণ দোকানের কর্মী। বাকি দুজন তপুর সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
গ্রেপ্তারের পর ১৪ মে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তপু সহ তার সহযোগীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর ফাঁড়ির পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, গত পাঁচ মাস পুর্বে তপু একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার মিমাংসা করে দেয়। সেখান থেকে তার মাথায় পরিকল্পনা জাগে নিজেই ছিনতাইকারী দল গঠন করবে। এক্ষেত্রে কৃষ্ণচন্দ্র তাকে জানায়, যেসব লোকজন স্বর্ণ দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে যাবে তাদের টার্গেট করে দিবে সে। এরপর মাঝপথে ডিবি পরিচয়ে স্বর্ণ বিক্রির নগদ টাকা ছিনিয়ে নিতো তারা। গত পাঁচ মাসে প্রায় পাঁচটি ছিনতাই করেছে বলে স্বীকার করেছে জবানবন্দিতে।
তিনি আরও বলেন, আসামীরা মূলত বন্দর এবং সোনারগাঁ এলাকাতেই ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই করতো। এই চক্রের সাথে আরও দুজন রয়েছে যারা পলাতক। পুলিশ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য হাতে একটি ওয়াকিটকি ব্যবহার করতো। সেই ওয়াকিটকি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।
এদিকে স্থানীয় সূত্র জানায় ছাত্রলীগ নেতা তপু সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের অনুগামী। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে কালাম বলেন, ‘তপু গত দুই বছর ধরে আমার কাছে ভিড়ে না। আমি একটু রাজনীতিতে ব্যাকফুটে আছি বলে আসতে চায়না। আমার সাথে যতদিন ছিলো আমি ততদিন শাসনে রাখতাম। শহরে ঢোকার পর সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে গেছে। আগে ফুলটাইম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতো। এখন শুধু তপু নয়, ওর মত অনেকেই শহরে গিয়ে বিগড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও বন্দরে গোলাগুলির ঘটনায় বেশ কয়েকজন সোনারগাঁয়ের ছেলেকে গ্রেপ্তার হতে দেখলাম।’
জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, 'তপুর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ বিব্রত। তপুর শক্ত কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এমপি সাহেবের ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় আগে-পরে ছাত্রলীগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকলেও সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। পদ দেবার সময় ব্যাকরাউন্ড চেক করে নিলে দলের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না।'
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিব্রতবোধের কথা জানিয়ে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য নেয়ার পরামর্শ দেন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধানকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :