নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ৫ মাস অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার কোন ইঙ্গিত পাচ্ছে না প্রত্যাশীরা। অপরদিকে ২৭টি ওয়ার্ড সম্মেলন করতে গিয়ে ১৭টি ওয়ার্ড সম্মেলন পর অঘোষিত স্থগিতের ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিও ঝুলে রয়েছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দুই মেরু ও নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে কমিটি আটকে আছে।
২৩ অক্টোবর জাকজমভাবে ওসমানী স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে সভাপতি ও আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়ারও আশাব্যক্ত করেন তিনি। কিন্তু ৫ মাস চলে গেলেও স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
এদিকে সম্মেলনের আগে আব্দুল হাই ও শহীদ বাদলের সু-সম্পর্ক দেখা গেলেও সম্মেলনের পর তাদের মধ্যে আবারো দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
এর মূল কারণ হিসেবে নেতারা জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটি তালিকা একে অপরের মধ্যে দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। এতে দলীয় কর্মসূচিতেও তাদের একত্রে দেখা যাচ্ছে না। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাত ২টায় দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের পক্ষে তার কর্মী পারভেজ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অপর দিকে সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা সাবেক নেতৃবৃন্দের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সভাপতি আব্দুল হাই। এর মূলত কারণ একজন মেয়র আইভী ও অপরজন এমপি শামীম ওসমানপন্থী। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি চলতি বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হচ্ছে কি না সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সাবেক কয়েকজন নেতা।
তাঁরা আরও জানান, জেলা কমিটিতে অনেক নবীন নেতাদের নাম রয়েছে। তাদের কখনো রাজপথে বা দলীয় কর্মসূচিতে কখনো দেখিনি। অপরদিকে এক পক্ষকে বেশি পদের কোটা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কয়েক ভাগ হয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
২৫ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মহানগরের সম্মেলন স্থগিত করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকে সম্মেলন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ হলেও ১০ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আয়োজন করা হয়। সেখানে ২৭টি ওয়ার্ডকে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করার কথা জানান সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও কার্যকরী সদস্য এমপি শামীম ওসমান। ওই সময় আবারো মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শামীম ওসমান এমপি।
প্রায় দুই মাস পর ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি টানা ১৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন সম্পন্ন করেন। এ সময় সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার মধ্যে ঐক্য প্রকাশে রূপ নেয়। কিন্তু ১২নং ওয়ার্ড সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অস্ত্রধারী একজন সন্ত্রাস নির্বাচিত হলে তাদের ঐক্য ফাটল ধরে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। এ সময় সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে ভূষি খাওয়া নেতা আখ্যা দেন তার কমিটির সদস্য এমপি শামীম ওসমান। এরও পাল্টা জবাব দেন আনোয়ার হোসেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহানগর সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে আলাদা আলাদা ডেকে তাদের অবস্থান জানেন এবং সম্মেলন স্থগিত করেন। এও বলেন, চলতি বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই কোন দ্বন্দ্বের কারণে যেন নির্বাচনের উপর কোন প্রভাব না পড়ে সে জন্য সম্মেলন এভাবেই থাকার নির্দেশ দেন।
আনোয়ার হোসেন, এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী এই তিন মেরুর কারণে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি আটকিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রত্যাশী নেতারা। নারায়ণগঞ্জে প্রভাব বিস্তার নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থানে তাদের দ্বন্দ্ব দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :