নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের বিষোদগার করে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান বলেন, আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের নিষিদ্ধপল্লী উঠিয়ে দিয়েছিলাম। ওই নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ এক সন্তান বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকারকে হত্যা করেছিল। এই গিয়াসউদ্দিনের নির্দেশে এই হত্যাকান্ড হয়েছিল। যে গিয়াসউদ্দিন এখন অনেক বড় বড় কথা বলছেন। আপনাকে শ্রদ্ধাস্বরেই বলছি যেহেতু বয়সে আপনি আমার বড় ভাই। আপনার সম্পর্কে বলতে হলে অনেক কিছুই বলতে হবে। ওই মামলার আসামি তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঢাকায়। কারণ কিছু একটা ঘটাতে হবে। হয়তোবা টার্গেট শামীম ওসমানও হতে পারে। টার্গেটের আগেই তারা পুলিশকে টার্গেট করলো।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে তারা পুলিশকে আক্রমণ করল। বিএনপির সমাবেশে তারা পুলিশকে আক্রমণ করে। বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ প্রতিরোধ করেছিল। সেসময় একটা বাচ্চা ছেলে মারা যায়। আরেকটা গ্রুপ আছে বিএনপির অনেক মহিলা কাউন্সিলর আছে। বাবুরাইলে বাড়ি। যার স্বামী ড্রাগসের ব্যবসা করেন। দুইটা মার্ডার কেসের আসামি। মাদক ব্যবসার জন্য একসাথে দুইজনকে হত্যা করা হয়েছিল। আমি কথাগুলো পরিষ্কার বলতে চাচ্ছি। কারণ সামনে আরো ষড়যন্ত্র হবে। বিএনপির সাবেক সেক্রিটারি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ঢাকার কস্তরী হাসপাতালের সামনে আমি যখন দেশের বাহিরে ছিলাম তখন ছুরি দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। সে হয়তো মৃত্যবরণ করতো। আশেপাশের মানুষ তার উপর ঝাঁিপয়ে পড়েছিল। কেউ তাকে চিনতো না। এক মাদকাসক্ত ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল যাকে সবাই ধরে ফেলে। ওই এলাকার ডিসির নাম ছিল আহাদ সাহেব। সে অনেক চিন্তা করেছিল সে একজন অধ্যাপক মানুষ তাকে কেনো একজন হিরোনচি মানুষ হত্যা করতে চাইবে। সে তদন্ত করে দেখেছে ওই হত্যাকান্ডের পিছনে গিয়াসউদ্দিনের ছোট ছেলে রিফাত নাকি নাম তাকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছিল। এককাজে আপনার দুই কাজ হতো। এক আপনার এমপি শেষ হতো আরেকটা কাজ হচ্ছে আপনি আমাদের উপর দোষ চাপাতেন। এখন যেভাবে ত্বকী হত্যার পর এখন আমাদের ওপর দোষ চাপিয়েছে। তাই তাদের বলতৈ চাই ষড়যন্ত্র করছেন করেন, কিন্তু সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন সত্যের সাথে মিথ্যা কখনো জয়লাভ করে না। শয়তান শয়তানই করতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কারিমশার সাথে পারে না।
সূত্রমতে, ২০০৩ সালের শুরুর দিকে অপারেশন ক্লিন হার্ট চলাকালীন একটি অনুষ্ঠানে প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে সাব্বির আলম নিজের জানাযায় সকলকে শরীক হওয়ার আহবান জানিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্য প্রদানের কয়েকদিনের মাথায় ১৮ ফেব্রুয়ারী ভোরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হয় সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান, তার ভাই জিকু খান ও মামুন খান, শাহীন ওরফে বন্দুক শাহীন, রায়হান, মনির, এরশাদ, মনিরুল ইসলাম সজল, অহিদুল ইসলাম ছক্কু, সাঈদুর রহমান, সাঈদ হোসেন রিপন, রিয়াজুল ইসলাম, হালিম, টুক্কু মিয়া, কাওসার, মামুন, নাদিম হোসেন, মঙ্গল ওরফে লিটন, মোক্তার হোসেন, মনিরুজ্জামান শাহীন, নাজির ও আঃ আজিজ সহ ১৭ জনকে আসামী করে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামী উল্লেখ করা হয়। মামলার প্রধান আসামী গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেয়ায় মামলার বাদি তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেয়া চার্জশীটের বিরুদ্ধে ২৪ জানুয়ারী আদালতে নারাজী পিটিশন দাখিল করেন। এতে বাদি তৈমুর আলম বলেন, গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকান্ডের মুল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি গোজাঁমিলের চার্জশীট দাখিল করেছেন। পরবর্তিতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পর থেকেই এখন পর্যন্ত মামলার না রাজী প্রদানে বাদীর স্বাক্ষী অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তীতে তৈমূর নিজেই গিয়াসউদ্দিনকে অব্যাহতি দেন।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর অন্যতম আসামী জাকির খান গ্রেপ্তারের পর মামলাটি সচল হয়। ইতোমধ্যে দুই দফায় জাকির খানকে আদালতে হাজির করে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :