News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯

নারায়ণগঞ্জে পুরানো বাহিনীর নতুন গডফাদার


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি : প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ১১:২৫ পিএম নারায়ণগঞ্জে পুরানো বাহিনীর নতুন গডফাদার

নারায়ণগঞ্জে এক সময়ে হোন্ডাবাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান। তিনি না থাকলে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আকতার নূর, লিমন, নাসির, আমির, বারিশ সহ কয়েকজনকে সেই নেতৃত্বে দেখা গেছে। তবে এবার সেই নেতা বদলেছে। পুরোনো সেই বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম। তিনি এখন নতুন গডফাদার হিসেবে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করছেন। আজমেরী যেসব লোকজনদের এখন আর পাত্তা দিচ্ছেন না তাদেরকে দিয়ে ওই বাহিনী চালাচ্ছেন শামীম। প্রতিদিন তার নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন স্থানে হানা দেওয়া হচ্ছে। তার গাড়িতে চড়ে বিভিন্ন জনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে। তার বাড়িতে নিয়মিত লোকজন যাচ্ছে নানা ধরনের বিচার শালিস নিয়ে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি এক পক্ষের হয়ে কাজ করে দিচ্ছেন।

সবশেষ বন্দরে জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে সাবেক চেয়ারম্যান পুত্র ও তার স্ত্রীকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এতে প্রধান আসামী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম সহ ৪১ জনকে। হামলার শিকার পরিবারের অভিযোগ, পিজা শামীমের নেতৃত্বেই হামলাটি হয়েছে। তার বহর থেকেই প্রকাশ্য গুলি ছোড়া হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফরাজিকান্দা এলাকায় জেলা জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা রাইসুল হকের মালিকানাধীন ৬৬ শতাংশ জমিতে একটি বাজার আছে। বাজারটি তাঁর ছেলে মঈনুল হক দেখাশোনা করেন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের বহর ও দুটি হাইয়েস গাড়ি নিয়ে ওই জমিটি দখল করতে যান ফরাজিকান্দা শামীম হায়দার ওরফে পিজা শামীম। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জমি পরিমাপ করে বাঁশের খুঁটি পোতা শুরু করেন। খবর পেয়ে মঈনুলসহ তাঁদের স্বজনেরা সেখানে গিয়ে তাঁদের কাছে জমিতে খুঁটি লাগানোর কারণ জানতে চান। ওই সময়ে এলাকাবাসী তাদের প্রতিহত করেন।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও পিজা শামীমকে সকলে চিনতো ডিস ব্যবসায়ী হিসেবে। পরবর্তীতে একটি ক্লাবে জুয়ার ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি জুয়ারীদের গডফাদার বনে গিয়েছিলেন পিজা শামীম। তবে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের আজমেরী ওসমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চাঁদাবাজী, জমি দখল, ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন, মাদক ব্যবসা, পাওনা টাকা উঠানোসহ সকল প্রকার অপরাধ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন পিজা শামীম। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা শহর ও শহরতলী সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করেছেন তিনি। অবৈধ অস্ত্রসহ শহর দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন এসকল সন্ত্রাসীরা। বঙ্গবন্ধু সড়কের একতা সাইনের গলির একটি ভবনের তিন তলায় পিজা শামীম টর্চার সেলে প্রতিদিন সকাল ১১ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কাজ নিয়ে যান। কাজ শেষে টাকার ভাগ দিয়ে যান পিজা শামীমকে। এছাড়াও বিভিন্ন অবৈধ কাজ সফল করতে তার নিজস্ব বিশাল হোন্ডা বাহিনী রয়েছে। জমি দখল কিংবা চাঁদাবাজী যে কোন কাজে আগে হোন্ডা বাহিনী পাঠান তিনি। কাজ না হলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী সাথে নিয়ে নিজেই অভিযানে নামেন।

জানা গেছে, গেল কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়েই আলোচিত হোন্ডাবাহিনী। প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমানের অনুগামী এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। সৃষ্টি করেছে ত্রাসের রাজত্ব। দীর্ঘদিন ধরে প্রায় রাতেই একদল যুবক শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শহরময় ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি। নারায়ণগঞ্জে ‘হোন্ডা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। আলোচনায় হোন্ডা বাহিনী। শহরে প্রায়শই দাপিয়ে বেড়ায় অর্ধশতের অধিক মোটরসাইকেল। দিনের চেয়ে রাতে এদের বেশী দেখা যায়। শহরের কলেজ রোড এলাকা থেকে বের হওয়া ওই বহর সাইরেন বাজিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে সড়ক ধরে। কদাচিৎ যায় খানপুর হাসপাতাল রোড। তবে যেসব এলাকাতে প্রয়োজন দাপট খাটানো সেখানেই যৌথ মহড়া চলে। কখনো সেটা হয় কোন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের সামনে। দলবল নিয়ে ওই বহরে সাধারণত একজন মটরসাইকেল চালায় আর পেছনে থাকে অন্য একজন। এখন মটরসাইকেল বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে প্রাইভেটকারও। প্রায়শই এ বহর আর মহড়া থাকলেও নির্বিকার প্রশাসন। নেই কোন উদ্যোগ, দেয় না কেউ অভিযোগ। কারণ এসব বহরের নেতৃত্বে থাকে প্রভাবশালীরা।

এদিকে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, বর্তমানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলের জন্ম হয়েছে এখানে সেখানে আবার নেত্রীর কথা বলা হয়। সেই নেত্রীকে আবার বলে ‘হাম্মাজান’। হাম্মাজান যেই হোক না কেন কোনো অবস্থায়ই কোনো ব্যবসায়ীর ক্ষতি করা যাবে না। ব্যবসায়ীরা যদি হাম্মাজানের ডরে পকেট থেকে পয়সা দিয়ে দেন আপনাদের থেকে বড় দোষী আর কেউ হবে না। আবার দাঁড়িয়েছে আরেক গ্রুপ ভাইজান গ্রুপ। মোটরসাইকেল দেয়া হয়। কে কিভাবে কোথা থেকে মোটরসাইকেল কিনল, কিভাবে মোটরসাইকেল রাস্তায় নামে কিভাবে বিকেএমইএর ফ্যাক্টরি ফ্যাক্টরিতে ঝুট ব্যবসার সৃষ্টি হয় যেটা নাকি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল। আমি এখনও মরি নাই ভয় পাবেন না। ও যদি আমার বাপও হয় তাকে কোনো রকমের ছাড় দেয়া হবে না। মোটরসাইকেল বাহিনী চলবে না। ওসমান পরিবারের সদস্য হাতের পাঁচটা আঙ্গুল কাউকে একরকম করে দেয়নি। ওসমান পরিবারের পাঁচটা আঙ্গুল আলাদা আলাদা আছে সবগুলি সমান না। সুতরাং আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নাই।

Islams Group
Islam's Group