নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকা- করে যাচ্ছেন নেতারা। সেই সাথে তারা কর্মসূচিতেও সফল হতে পারছেন না। সবসময় তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আসছেন। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। যে কোনো সময় চলমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আবার নতুন করে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওযাত হোসেন খানও চাচ্ছেন যেন এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। আর এই নতুন কমিটিতে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে আলোচনায় রয়েছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা। তবে সাখাওয়াতের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন আবুল কাউসার আশা। কারণ আশা সঙ্গী হলে বন্দরে সাখাওয়াতের জন্য সুবিধে হবে।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আর এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। একটি অংশের নেতাকর্মীরা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন নি। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে ১৫ জন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এসকল পদত্যাগকারী নেতাদের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপিতে আরেকটি বলয় গড়ে উঠে। সাখাওয়াত টিপুর বাইরে গিয়ে তারা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। সেই সাথে দিন দিন তাদের বলয় বড় হতে থাকে। সাখাওয়াত ও টিপুতে বিরক্ত হয়ে বিপরীতে থাকা বলয়ের নেতাদের সাথে মহানগর বিএনপির পদধারী আরও কয়েকজন নেতা যুক্ত হন।
এদিকে আহ্ববায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিও দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে জোরালো কোনো ভূমিকা দেখাতে পারছে না। দলীয় সকল কর্মসূচিতেই তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর ভরসা করে থাকতে হয়। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসলে মহানগর বিএনপির কর্মসূচির পূর্ণতা ফিরে আসে। যা মহানগর বিএনপির জন্য মানানসই হয় না।
সবশেষ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অধীনে থাকা বিভিন্ন থানা ও উপজেলা কমিটি দিতে গিয়ে সাখাওয়াত টিপুর বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। সাখাওয়াতের নাম তেমন আলোচনায় না আসলেও টিপুকে নিয়ে মহানগর বিএনপিতে অনেক আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়। তিনি কমিটির বিনিময়ে অনেকের কাছেই টাকা চেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একই সাথে টিপুর আচরণেও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরাই ক্ষুদ্ধ। নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অন্তরালে তাকে কেউই ভালো পায় না। সকলেই যেন তার আচরণে ত্যক্ত বিরক্ত।
এসকল কারণে আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানও চাচ্ছেন যেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। টিপুকে বাদ দিয়ে যেন মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। আর এক্ষেত্রে সাখাওয়াত হোসেন খানের পছন্দ হচ্ছে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও আবুল কাউসার আশা। তবে তার প্রথম পছন্দ হচ্ছে আবুল কাউসার আশা।
কারণ আশাকে দায়িত্ব দেয়া হলে বর্তমানে বিদ্রোহী বলয়ে থাকা নেতাকর্মীদের সমর্থন পাবেন। মহানগর বিএনপিতে কোনো বিদ্রোহী থাকবে না। আর যদি আশাকে না দেয়া হয় তাহলে মাকছুদুল আলম খোরশেদকে চান। খোরশেদকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি শক্তি খুঁজে পাবেন।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ টিপুর নেতৃত্বে বন্দর থানা ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।
আর এই কমিটির বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক হাজী মো. নুরউদ্দিন আহম্মেদ, যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল, যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সবুর খান সেন্টু ও যুগ্ম আহবায়ক এম. এইচ মামুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা, বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলা বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ঘোষিত প্রথম কর্মসূচি ছিলো মানববন্ধন কর্মসূচি ছিলো গত ১১ মার্চ বিকেলে। তারই অংশ হিসেবে এদিন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
একই সাথে শহরের মন্ডলপাড়ায় মহানগর বিএনপির আরেকটি অংশের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। আর এই মানববন্ধন কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হাজী নুরউদ্দিন এবং বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল।
সেই সাথে এই দুইটি কর্মসূচিই নির্ধারিত সময়েই শুরু হয়। তবে সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচির চেয়ে এগিয়ে ছিলেন মুকুল ও নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদের সূত্র বলছে, এদিন দুপুর তিনটার মধ্যেই শহরের মন্ডলপাড়া এলাকায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একের পর এক মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। সদর থানা, বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা ব্যানারে মিছিল নিয়ে কর্মসূচিস্থলে আসেন। সেই সাথে অন্যান্য অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের নেতৃত্বে আলাদা আলাদা শোডাউন করেন।
আর এভাবে একের পর এক মিছিলের মধ্য দিয়ে মুকুল ও নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি বিশাল লোক সমাগমে পরিণত হয়ে যায়। ঐক্যবদ্ধ সমাগমের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকেই আলাদাভাবে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দেন।
তাদের বিপরীতে সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচি তেমন পূর্ণতা পায়নি। নেতাকর্মীদের তেমন অংশগ্রহণ তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। প্রতিবারের মতো এবারও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপড় ভরসা করতে হয়েছে। আর এদিন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তেমন শোডাউন দেখাতে পারেননি। ফলে সবশেষ এই কর্মসূচিতেও সাখাওয়াত ও টিপু তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
আর তাই কেন্দ্রীয় বিএনপি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির চলমান কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। হয়তো যে কোনো সময় ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :