News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯

আইভীর বক্তব্যে বিএনপি লাভবান!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩, ১০:২৮ পিএম আইভীর বক্তব্যে বিএনপি লাভবান!

নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের বেশ কড়া সমালোচনা করে থাকেন মেয়র আইভী। নয় শংকা নয় ভয়, শহর হবে শান্তিময় এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১১ সালে যেই সন্ত্রাস বিরোধী বার্তা দিয়েছিলেন, তা মূলত ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধেই সেটা পরিস্কার।

ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সময় ওসমান পরিবারকে সন্ত্রাস, গডফাদার, মাফিয়া, ওসমানীয় সাম্রাজ্য বলে সমালোচনা চালিয়ে গেছেন। 

রাজনৈতিক অভিজ্ঞজনদের মতে, শামীম ওসমানকে ঘায়েল করতে যেখানে বিএনপির এত জ্বালাময়ী বক্তব্য দেওয়ার কথা সেখানে নিজ দলের মেয়রের বক্তব্যে উল্টো বুমেরাং হচ্ছে। আইভীর বক্তব্যে বরং বিএনপি লাভবান হচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষ বুঝতো যে বিএনপি বক্তব্য দিলে সেটা ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে’ বিবেচ্য হতো। ফলে বিএনপির অর্ধেক কাজটি হয়ে যাচ্ছে আইভীর সমালোচনাতেই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী হিসেবে পরিচিত বিএনপির নেতারা দীর্ঘ ১৫ বছরেও শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে এতটা শক্ত বাচ্য করতে পারেন না, যতটা করে থাকেন আইভী। এর মাঝে ত্বকী হত্যার ঘটনায় ওসমান পরিবারের দিকে আঙ্গুল উঠলে আরও শক্ত হন আইভী।

সবশেষ গত ৬ মার্চ আইভী বলেন, সারাদেশের ৬৩ জেলা চলে একভাবে, আর নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। এই রাজত্বের মধ্যে প্রশাসন এখানে কিছুই না। তাদের কোন কর্মকান্ড নেই। তাদের যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেয়া হয় সেভাবেই তাদের কাজগুলো হয়। আমি বুঝতে পারি না, যারা আসেন এই শহরে প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে তারা কার হুকুম পালন করেন সরকারের? নাকি ওসমানীয় গডফাদারদের? শহরে হকার, যানজট দিনের পর দিন বাড়ছে। একের পর এক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রাস্তার উপর হকার আরেক হকারকে মেরে ফেলছে। সেই খুনী হকার নেতা আবার আমাদের নেতার পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনে। কি অদ্ভুত যে পুলিশ চোখেও দেখেনা। পুরো শহর হয়ে গেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যে বসবাস করে আমরা গুটি কয়েক মানুষ শহরের সবাইকে নিয়ে যেভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। আমার মনে হয় আর বেশীদিন নেই অত্যাচারী, জুলুমবাজদের মসনদ খুব দ্রুতই ধ্বসে পড়বে ইনশাআল্লাহ। মায়েদের কাছে অনুরোধ, আপনারা নামাজে, আর্তিতে আল্লাহর কাছে, ভগবান, ঈশ্বরের কাছে বলবেন, ত্বকীর হত্যাকারীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। আপনাদের এই প্রার্থনায় এই সমাজ থেকে জুলুমবাজ নিপাত যাবে। নতুন নতুন ইতিহাস রচনা করে শহরকে অস্তির করতে চায় তারা। মার্চ মাস আসলেই যেন পাগল হয়ে যায়, মাথা খারাপ হয়ে যায়। কি রেখে কি বলবে তাদের কোন হুঁশ থাকে না। সত্যকে চাপা দেয়ার জন্য একশত মিথ্যা সামনে এনে দাঁড় করায়। সেই মিথ্যা শুরু হয়েছে ৯৬ সাল থেকে। এমন এমন মিথ্যা বলেছে যে অনেক সত্য বিদায় নিয়েছে। অবাক লাগে, টাকার বিনিময়ে পোষা কুকুররাও সেসব অবলীলায় বলে যাচ্ছে। সবকিছুর অবসান হবে। এই শহর পজেটিভ শহর। সারাদেশের মধ্যে সমৃদ্ধশালী জেলা নারায়ণগঞ্জ। আমরা সবকিছুতে এগিয়ে আছি। আমাদের সোনারগাঁও, শীতলক্ষ্যা ঐতিহ্যে ভরপুর। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে সবাই কি জানলো? এই শহরে দিনে দুপুরে হত্যাকা- হয়। আমরা এটা পাল্টে দিতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পজেটিভ নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই। এর জন্যেই শেখ রাসেল পার্ক, চারুকলা ইন্সটিটিউট তৈরী করেছি আমরা।

এদিকে ২০১৮ সালে সাবেক ছাত্রদল নেতা মশিউর রনি শামীম ওসমানের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এর কিছুদিন পরেই দুদিনের জন্য উধাও হয়ে যান রনি। পরে পুলিশ অস্ত্র সহ রনিকে গ্রেপ্তার করে।  নিজেদের ক্রান্তিকালে শামীম ওসমানের মত প্রভাবশালী নেতার সমালোচনা এড়িয়ে চলেন সকলেই।

নতুন করে জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি কিছুটা সমালোচনা করলেও তা মেয়র আইভীর মত কঠোরভাবে নয়। বরং অনেকটা রয়ে সয়েই সমালোচনা করেন। অন্যদিকে মেয়র আইভী সরাসরি শামীম ওসমানকে তুলোধুনো করে সমালোচনা করে থাকেন প্রকাশ্যে। যেই সমালোচনার বাক্য উচ্চারণ করতে বিএনপির নেতারা সাহস পান না, সেই শূন্যতা পূরণ করে দেন আইভী।

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপির নেতারা শামীম ওসমানের সমালোচনা না করলেও কর্মী এবং ভোটারদের কাছে শামীম ওসমান সম্পর্কে যেই নেগেটিভ বার্তা পৌঁছানো দরকার তা পৌঁছে যায়। আর সেই কাজটি সম্পন্ন হয় মেয়র আইভীর মাধ্যমেই। কারণ কিছুদিন পরপরেই আইভী যেই কঠোর বক্তব্য রাখেন শামীম ওসমান তথা আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে। সেই সমালোচনা কৌশলগত কারণে সুবিধা এনে দেয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। ফলে শামীম ওসমান যে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয় স্থান থেকেই সমালোচিত তা বোঝাতে খুব বেশী বেগ পেতে হয় না তাদের।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আবারও নতুন করে উঠে এসেছেন গিয়াসউদ্দিন যিনি শামীম ওসমানকে হারিয়ে তার আসনে জয় পেয়েছিলেন। সম্ভাবনা বলছে, এবারের নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন গিয়াসউদ্দিন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন লড়াইয়ের জন্য সর্বপ্রথম তার প্রয়োজন বর্তমান এমপির দুর্বলতা এবং সমালোচনার ইস্যু তুলে ধরা। তবে গিয়াসউদ্দিনের পূর্বেই সেই কাজ সম্পন্ন করে দিয়েছেন আইভী। টানা ১৩ বছর ধরে যত ধরনের সমালোচনা রয়েছে সবই করে যাচ্ছেন তিনি। ফলে কৌশলগত কারণে গিয়াসের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে এই ক্ষেত্রে।

বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক দ্বৈরথ কিংবা অভ্যন্তরীন বিরোধে আইভী শামীমের লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশী সুবিধা যে বিএনপি পাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর ফলে শামীম ওসমানকে প্রতিনিয়ত তার নিজ দলেই জায়গা করে নিতে লড়াই করতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীন বিরোধ নিয়ে লড়াই করতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপি তার আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি নিজেদের রুটিন ওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাতিত বাকি সব খানেই ভালো অবস্থানে আছে বিএনপি।

Islams Group
Islam's Group