News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রেকর্ড ভোটে পরাজয়ের শঙ্কা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ১১:০৯ পিএম আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রেকর্ড ভোটে পরাজয়ের শঙ্কা

৩০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন আইনজীবী সমিতির সেলিম ওসমান ভবনের নিচ তলায় সকাল ৯ টা থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। আর এবারের নির্বাচনেও রেকর্ড সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীদের। সেই সাথে তাদের কাছে পূর্ণ প্যানেলেই শোচনীয় পরাজয় করতে যাচ্ছেন জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত প্যানেলের বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

আদালতপাড়া সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে গেল ৮ বছর ধরেই কান্ডারীবিহীন রয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। ২০১৪ সালের পরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপির কোন প্রার্থী জয়ের দেখা পায়নি। অথচ ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩ বারের নির্বাচনে সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে দাপুটে জয় ছিল বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হচ্ছে অথবা নির্বাচনে থেকে মার খেতে হচ্ছে। সেই সাথে তাদের শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হচ্ছে।

সবশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক (২০২১-২০২২) নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ব্যাপকভাবে পিটুনি খেতে হয়েছে। আইনজীবীদের অঙ্গনে বহিরাগত এসে পিটিয়ে গেছেন। আর সেটা তাদের নিরবে সহ্য করতে হয়েছে। সেই সাথে গত তিন বছর ধরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কোনো পদই জয়ী হতে পারছে না বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়ে এককভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা।

সেই সাথে প্রতি বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পরাজয়ের পথে রয়েছেন। অন্যবছর ভোটের ব্যবধান কম থাকলেও এবারের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান আরও বেশি হবে বলে মনে করছেন সাধারণ আইনজীবীরা।

এবারের নির্বাচনে বিএনপির সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব শাহীন একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাকে নিয়ে বিএনপিপন্থী অনেক আইনজীবীরই আপত্তি রয়েছে। সেই সাথে বিএনপিপন্থী প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধানকে নিয়ে বিএনপির অনেক আইনজীবী আপত্তি রয়েছে। তারা দুইজনই যোগ্যতার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।

বিএনপিপন্থী প্যানেলের কোষাধ্যক্ষ পদে থাকা অ্যাডভোকেট শেখ আনজুম আহম্মেদ রিফাত, আপ্যায়ন সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট লাইব্রেরী সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো রোকন উদ্দিন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট সারোয়ার জাহান, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিবকে বিএনপির আইনজীবীরা মেনে নিতে পারেনি।

এছাড়াও সদস্য পদে থাকা অ্যাডভোকেট ফাতেমা খাতুন, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট মো. সুমন মিয়া ও অ্যাডভোকেট সাজিয়া আক্তারও যোগ্যতার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাদের বাহিরে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকা আইনজীবীদের যোগ্যতা থাকলেও প্যানেলের কারণে তাদেরও পরাজয় বরণ করতে হবে।

এদিকে এবারের নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সাথে এখন কোনো সিনিয়র আইনজীবীদের দেখা মিলছেন না। প্রচারণায় দেখা মিলছে না আইনজীবী সমিতির অনেকবারের নির্বাচিত সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ও জেলা আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাষানী, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সহ তাদের সমবয়সী অনেক আইনজীবীরা। সেই সাথে বিএনপিপন্থী অনেক সাধারণ আইনজীবীরও দেখা মিলেনি।

কিন্তু তাদের বিপরীতে থাকা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনীত প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অ্যাডভোকেট মোহসীন মিঞা যোগ্যতার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তাদের সাথে বিএনপির প্যানেলের কোনো আইনজীবীই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার মতো যোগ্যতার অভাব রয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, জেলা আইনজীবী সমিতিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নেতা হলেন জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তার নেয়া যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। বিশেষ করে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পুরানো বার ভবন ভেঙ্গে ফেলে নতুন ডিজিটাল বার ভবন তৈরীর উদ্যোগ জেলা বারের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

আইনজীবী সমিতির বহুতল বিশিষ্ট ডিজিটার বারভবন নির্মাণ করেছেন। যে ভবনটি ইতোমধ্যে ৪র্থ তলার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। প্রতিপক্ষ বিএনপির আইনজীবীদের সাথে নিজ দলের একটি পক্ষেরও ঘোর বিরোধীতার মুখে যে অবিচল ধৈর্য আর সাহসীকতার সাথে নতুন ভবন তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন জুয়েল, তা দলমত নির্বিশেষে সকল আইনজীবীর কাছে ছিলো প্রশংসনীয়।

একইভাবে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির টানা দুইবারের সাধারণ সম্পাদক এবং টানা দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর এই সময়ে তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যা সাধারণ আইনজীবীদের কল্পনার বাইরে ছিল। বিশেষ করে তার কিছু কিছু পদক্ষেপ আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সবশেষ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে গত মেয়াদে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া সমিতির ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করেছেন। সেই সাথে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় সাধারণ আইনজীবীদের বসার স্থান ও মসজিদের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যেখানে গিয়ে সাধারণ আইনজীবীরা নামাজ আদায় করতে পারে। এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও তার জোরালো ভূমিকা ছিল।

পাশাপাশি বিচারপ্রার্থী স্বজনরা নারায়ণগঞ্জ আদালতে এসে যেন কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয় যেজন্য তিনি আইনজীবী সমিতির লগো সম্বলিত সদস্যদের আইডি নাম্বার সহ সীল সরবরাহ করেছেন। শিক্ষানবীস আইনজীবীদের লাল টাই পরিহিত পোষাক নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও কল্যাণকর বেলোভোলেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রেও অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়ার ভূমিকা রয়েছে। আইনজীবীদের বিরোধীতা থাকা সত্বেও তারা সফল হয়েছিলেন। যা এখন সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে সবচেয় গ্রহণযোগ্য বিষয় হিসেবে পরিনত হয়েছে।

সেই সাথে সিনিয়র সহ সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো আলাউদ্দিন আহমেদ, সহ সভাপতি পদে রবিউল আমিন রনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট স্বপন ভূইয়া, আপ্যায়ন সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট অঞ্জন দাস, লাইব্রেরী সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. এরশাদুজ্জামান ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. আব্দুল মান্নান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রাজিয়া আমিন কাঞ্চি, সমাজসেবা সম্পাদক পদে মানজুদুল রশিদ রিফাত ও আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন সুজন প্রধান রয়েছেন। তারা বিএনপি প্যানেলের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন।

পাশাপাশি সদস্য পদে রয়েছেন, অ্যাডভোকেট আলী আকবর, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, নূরী নাজমুল আলম, হালিমা আক্তার ও ফাহিমা রহমান পায়েল। এরাও বিএনপিপন্থী প্যানেলের তুলনায় যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য। সাধারণ আইনজীবীদের মাঝে তাদের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এরই মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনীত প্যানেলের প্রচারণা শেষে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, এই বছরটা হচ্ছে বাংলাদেশের সবেচেয়ে ক্রাইসিসের বছর। সমস্ত অশুভ শক্তি এক হয়েছে ওরা কামড় দিবে। আর আমরাও প্রস্তুত আছি সমস্ত অশুভ বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। আগামীতে নারায়ণগঞ্জ নেতৃত্ব দিবে। নারায়ণগঞ্জ বার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, নেতৃত্ব এক জায়গায় বসে থাকলে হবে না। নেতৃত্ব ছিটাতে হবে। নতুন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। আমি ৩০ তারিখে থাকবো। মিষ্টির দোকান বুক করেন। রাতের বেলা সবাই মিলে মজা করে মিষ্টি খাবো। বারে পুরোপুরি নির্বাচিত হওয়ার পরে আমরা আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠান করবো। আশা করি ফুল প্যানেলে আমরা তো গতবারও পাশ করেছি। এবার যাতে আরও ব্যবধানে পাস করতে পারি।

Islams Group
Islam's Group