বেশ লম্বা বিরতির পর আবারও চাষাঢ়া শহীদ মিনারে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। নভেম্বরের পর জেলা কিংবা মহানগর বিএনপিকে শহীদ মিনারে সভা সমাবেশ করতে দেখা যায়নি। এর পেছনে ছিলো রাজনৈতিক অস্থিরতা ও একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অধিকাংশ নেতাকর্মী জামিনে বেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার ভীতি রয়ে গেছে অনেকের মাঝে। এরই মাঝে নিজেদের আবারও পুরোনো স্থানে ফিরিয়ে এনে সমাবেশ সফল করে দেখিয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।
গত বছরে ১০ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিচক্ষন এবং নেতৃত্ব দেয়ার মত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। অনেকটা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলাকালেই জেলা বিএনপির হাল ধরেন তিনি। সুসময়ে বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে অনেকে মধু খেলেও গিয়াসউদ্দিন যেন একেবারেই উল্টো। দীর্ঘদিন পর দলের দায়িত্ব পেয়েছেন একেবারেই ক্রান্তিলগ্নে। আর সেই দায়িত্ব হাতে পাবার পরপরেই একাধিক মামলা এবং গ্রেপ্তারি অভিযান চলতে থাকে।
প্রায় দুই মাস পর গত ২৫ জানুয়ারী আবারও নারায়ণগঞ্জ শহরে বিএনপিকে তুলে ধরেছেন গিয়াসউদ্দিন। জেলা ও মহানগর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচী পালিত হলেও শহীদ মিনারে সমাবেশ সফল করার পেছনে গিয়াসকেই মূল্যায়ন করছেন নেতাকর্মীরা। কারণ জানুয়ারিতে বেশ কয়েকটি সভা সমাবেশ হলেও মহানগর বিএনপি নিজেদের কর্মসুচী শহীদ মিনারে পালন করতে পারেননি। উল্টো মিশনপাড়া এবং খানপুরের গলিতে সীমাবদ্ধ করেছেন দিনে দিনে। পুলিশের ভয় ও প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে আবারও বিএনপিকে ফিরিয়ে আনায় সাধুবাদ পাচ্ছেন গিয়াস।
সূত্র বলছে, মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গত বছরের শেষ কয়েকটি মাসে অধিকাংশ কর্মসূচী পালন করেছেন আমলাপাড়া হোসিয়ারি সমিতি প্রাঙ্গনে। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রভাবশালীর এক ফোনে বন্ধ হয়ে যায় সেখানে কর্মসূচী পালন। বর্তমানে হোসিয়ারি সমিতি প্রাঙ্গনে বিএনপির কর্মসূচী পালনে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে নেতাকর্মীরা হোসিয়ারি সমিতির গলিতে, খানপুর এবং বৈশাখী রেস্তোরার পাশের ফাঁকা স্থানে কর্মসূচী পালন করতে বাধ্য হয়েছেন। এর মাঝে কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশ থাকলেও তা শহীদ মিনারে পালন করার সাহস করেননি। উল্টো গলিতেই নিজেদের গাঁ বাঁচিয়ে কর্মসূচী পালন করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, গিয়াসউদ্দিন উদ্যোগ না নিলে শহীদ মিনারে সমাবেশ করা হতো না। তিনি সাহসী ভূমিকা নিয়েছেন বলেই পুনরায় শহীদ মিনারে ফিরতে পেরেছে সকলে। মহানগর বিএনপির নেতারা কয়েকবার চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন ঠিকই ফিরিয়েছেন নেতাকর্মীদের। এর ফলে উদ্দীপ্ত হয়েছে কর্মীরা। টানা গ্রেপ্তার, মামলার পরে নেতাকর্মীরা পিঠ বাঁচাতে একটু ঝিমিয়ে পরলেও আবারও নব উদ্যোমে চাঙ্গা হয়েছে সকলে।
সমাবেশ আয়োজনের অন্যতম মধ্যমনি হয়েও সভাপতিত্ব করতে চাননি গিয়াস উদ্দিন। দায়িত্ব অর্পন করেছেন মহানগরের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানের উপর। সঞ্চালনার গুরু দায়িত্বও পালন করেছে মহানগরের সদস্য সচিব টিপু। তিনি কেবল বক্তব্য রেখে চাঙ্গা করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের।
এদিকে গিয়াসউদ্দিনের সেদিনকার বক্তব্যও দলের নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করেছে। কারণ তিনি সরাসরি সরকার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। বিগত দিনে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বক্তব্য দিলেও এখানকার নেতাদের বিরুদ্ধে কিছুই বলেনি।
বক্তব্য প্রদানকালে গিয়াস বলেন, ' সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জের ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আজ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছে। সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা মানুষের জনজীবন দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন। তাদের কলঙ্কিত করছেন। প্রশাসনকে আজ আপনারা দলের প্রচারকেন্দ্র বানিয়েছেন। তারা আপনাদের ঘৃণা করে হয়ত বলতে পারে না। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা ভাল করছেন না। একদিন আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ন্যায়ের পথে আসুন। এ দেশ কারও বাবার সম্পদ নয়। জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করবেন না। আর সরকারী দলের নেতাদের বলতে চাই, অন্যায় অত্যাচার করে অনেকদূর এগিয়ে গেছেন। আর করবেন না। আপনারা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে চলে আসেন। নারায়ণগঞ্জে আমরা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির প্রবর্তন করতে চাই।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেয়ার পরে দৃষ্টি কেড়েছে সকলের। এতদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপিকে সেভাবে মূল্যায়ন না করলেও গিয়াসউদ্দিনের কারণে মূল্যায়ন করতে বাধ্য হচ্ছে। নিয়মিত নজর রাখছে বিএনপির কার্যক্রমের উপর। সবকিছু মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে চাঙ্গা করার অন্যতম এই কারিগর যে নিজেদের ভুমিকা রাখতে শুরু করেছেন তা বেশ পরিস্কার।
আপনার মতামত লিখুন :