নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান এ মর্মে ২৭ জানুয়ারী বিভিন্ন এলাকাতে সভা হয়েছে। এসব সভাতে আকবর সোবহানের রাজনৈতিক এপিএস পরিচয় দেওয়া শেখ সাঈদ ওই ঘোষণা দেন। তখন পাশেই বসা ছিলেন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
শেখ সাঈদ বলেন, অনেকে অনেক কিছু বলে। কিন্তু আমার সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের সরাসরি একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন আগামীতে তিনিই রূপগঞ্জে এমপি নির্বাচন করবেন।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই রূপগঞ্জে হঠাৎ করেই আহমেদ আকবর সোবহানের পোস্টার ছেয়ে গেছে। সেখানে তার পাশাপাশি রফিক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়ার ছবি শোভা পাচ্ছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারী মেট্রোরেলের ডিপোর কাজের উদ্ধোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপগঞ্জের পূর্বাচলে আগমন সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ওই পোস্টারিং করলেও সেখানে উঠে এসেছে এমপি নির্বাচন ঘিরে।
এদিকে হঠাৎ করেই রূপগঞ্জের রাজনীতিতে ইউটার্ন আসতে শুরু করেছে। সেখানকার এমপি ও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে এতদিন কাজ করা নেতাদের একটি বড় অংশ এখন রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। আর রফিকের মাধ্যমে সরাসরি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সান্নিধ্য পেতে যাচ্ছেন। এসব ব্যক্তিদের অনেকেই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও ভেতরগতভাবে রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গত ১৬ জানুয়ারী এক সভার পর সেখানকার চিত্রও পাল্টে যেতে শুরু করেছেন। সেদিন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে এক মতবিনিময় সভা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোহবান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া, আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক লিয়াকত হোসেন, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য রফিকুল ইসলাম রফিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু, দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ছালাউদ্দিন ভূঁইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কামাল হোসেন কমল, উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল আহমেদ, তরুণ ব্যবসায়ী ও কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগ নেতা তারিকুল ইসলাম মোঘল।
ওই সময়ে নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব সংগঠন যখন অপ্রতিরোধ্য আর গতিশীল তখন সঠিক নেতৃত্ব আর পৃষ্টপোষকতার অভাবে রাজধানীর উপকণ্ঠের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা রূপগঞ্জ তখন দ্বিধাবিভক্ত। পাশাপাশি নেতাকর্মীরা দলীয় অন্তকোন্দলের কারণে মামলায় জর্জরিত। আমরা চাই সংগঠন দরদি একজন সঠিক ও দায়িত্বশীল নেতার নেতৃত্বে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ঘটাতে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় নানা ইস্যুতে সেখানকার সরকার দলীয় এমপি এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে কায়েতপাড়ার চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নানা ইস্যুতে দ্বন্দ্ব বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধ গড়ায় মাঠ পর্যায়ে রক্তক্ষয়েও। সবশেষ সংসদ নির্বাচনের পর এ বিরোধ তেমন দৃশ্যমান দেখা না গেলেও সবশেষ ইউনিণ পরিষদের নির্বাচন ঘিরে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। রফিকের ভাই মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে মন্ত্রী গাজী সমর্থিত জাহেদ আলী কাছে পরাজিত হোন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বসুন্ধরা গ্রুপের পূর্বাঞ্চল পরিচালক (ল্যান্ড), রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিকের হাতে নৌকা তুলে দেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। ওই নির্বাচনে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদ আলী নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কায়েতপাড়ার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম রফিক। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতেও পৃথকভাবে শোডাউন দেখান এমপি গাজী ও কায়েতপাড়ার চেয়ারম্যান রফিক সমর্থকরা। এছাড়া কিছুদিন পরপরই উভয়গ্রুপের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে। পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন বিক্ষোভও চলতে থাকে।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই যুগ ধরে কোন্দলে জর্জরিত জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ। আর এ কোন্দল এখন আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠনের ভিতরেও। ছড়িয়ে পড়েছে থানা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগেও। ৮০ দশকের পর থেকে এ কোন্দল বেড়েই চলছে। কোন্দলের এই ঝড়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক ত্যাগী সৈনিক অকালে ঝরে গেছে। অনেকে আবার রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর নাম বুকে নিয়ে নীরবে দিন কাটাচ্ছে। আবার কেউবা নিরবে বাচাঁর সংগ্রাম করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :