মাত্র কয়েকদিন হলো আওয়ামী লীগের শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেলেন মাহফুজুর রহমান কালাম। সেই বিতর্কের রেশ না কাটতেই আবারো তিনি সমালোচিত হলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই কালামের উপর ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি ওই সময়ে কালামকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনাও করেছেন।
সোনারগাঁয়ে লোক ও কারুশিল্প মেলার উদ্বোধন করতে ১৮ জানুয়ারী এসেছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি মঞ্চে উঠার আগে জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার অনুসারীদের পাশাপাশি কালামের পক্ষেও স্লোগান উঠে। এক পর্যায়ে খোকার সমর্থকেরা স্লোগান বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ‘কালাম ভাই, কালাম ভাই’ স্লোগান অবিরত চলতে থাকে।
ওই সময় কালামের উদ্দেশ্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা কি রাজনৈতিক মিটিং। তাহলে কেন ওই বেয়াদবি করতাছে? আজকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সৌন্দর্যটা নষ্ট করে দিয়েছে। কালাম ভাই কালাম ভাই এগুলো কেনো? এই স্লোগান দিয়ে কি লাভ হবে, এগুলো বন্ধ করো।’
তবে কালামের এ ঘটনা এবারই নতুন না। বরং নানা সময়ে তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। সোনারগাঁয়ে দুটি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন মাহফুজুর রহমান কালাম। দুটি নির্বাচনেই তিনি গিয়েছেন দলের বিরুদ্ধে। সবশেষ ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। সেই সময় নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মোশারফ হোসেন। নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়ার কারণে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। সম্প্রতি সেই বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ওই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির আজহারুল ইসলাম মান্নান। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হতে মোশাররফ হোসেন ও মাহফুজুর রহমান কালাম বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন চান মাহফুজুর রহমান কালাম। কিন্তু তাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতের পছন্দের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোশারফ হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। দলীয় প্রতিকে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া উপজেলা তিনি বিপুল ভোটে জয়ও পেয়ে গেছেন। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাহফুজুর রহমান শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি মোশারফ হোসেনের সাথে।
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া ও যুগ্ম আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ইতোপূর্বে লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে বাংলাদেশের আলোচিত সেভেন মার্ডারের কারিগর বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনকে সোনারগাঁও এনে ৩০টি গাড়ির বহর নিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত করে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের থ্রেড করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন কালাম। ওই কালামের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়। বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়।
সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই সোনারাগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের চলমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। একই সাথে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :