দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অংশ নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও এটিএম কামালকে বিএনপি বহিস্কার করলেও এখনো নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রয়েছেন এ দুই নেতা। এখনো রাজপথে এ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে সৌন্দর্য্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি আগের মত গতি পাচ্ছে না জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। অথচ এ দুই নেতার সরব উপস্থিতিতে এক সময়ে বিএনপির দুটি কমিটির মঞ্চ যেমন ‘ভার’ থাকতো তেমনি নেতাকর্মীরাও ভরসা পেত।
গত বছরেরর ১৮ জানুয়ারী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের প্রাথমিক সদস্য পদ সহ সকল পদ থেকে নির্দেশনাক্রমে বহিষ্কার করা হল।
জানা যায়, ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় বিএনপি সহজভাবে নিতে পারেনি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর দাপুটে জয়ে পরাভূত হয়েছেন স্বতস্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ১৯২ কেন্দ্রের সবগুলোর ফলাফলে নৌকা পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। আর হাতি প্রতীকে তৈমূর পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৬২ ভোট।
নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের পরপরেই জেলা বিএনপির আহবায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তৈমূর আলম খন্দকারকে। ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে। ৩ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ থেকেও প্রত্যাহার করা হয় তৈমূর আলম খন্দকারকে। সেদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে তৈমূর আলম খন্দকারকে জানানো হয়, ‘মাননীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য পদ থেকে আপনাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অবিলম্বে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
কিন্তু তৈমূরের বিরুদ্ধে দলের এই ঘোষণাতেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে ছেড়ে যায়নি। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে তৈমূরকে সঙ্গ দিয়েছেন। তার নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সাথে তার প্রধান এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। যার পরিণতিতে এটিএম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করে দেয়া হয়।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, নেতা হিসেবে তৈমূর ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। সংগঠক হিসেবে তার অবদান ভুলে গেলে বিএনপি অকৃতজ্ঞ আচরণ করবে। অন্যদিকে এটিএম কামালও সাংগঠনিক ভাবে বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছেন। পুলিশের হামলা মামলাকে উপেক্ষা করে তৈমুর ও কামাল যেভাবে মাঠে ছিলেন তা এক কথায় অনবদ্য। এই ধরনের সিদ্ধান্ত রাজপথের রাজনীতির বদলে গৃহবন্দি রাজনীতির দিকে ঠেলে দেবে নতুন নেতাকর্মীদের।
তৈমূর বলেন, দল আমাকে ছেড়েছে। আমি তো দল ছাড়ি নাই। গত ১০ ডিসেম্বরও রাজধানীতে আমার নেতৃত্বে বড় শো ডাউন হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের পাশে এখনো আছি।
জন্মের পর থেকে রাজনীতি করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে রাজনীতি করি। সাধারণ মানুষের সংগঠন করি, এখন সেসব নিয়েই থাকব। আর ইভিএম একটি ভোট ডাকাতির বাক্স। এই ডাকাতির ব্যাপারে সোচ্চার থাকব। আর দেশনেত্রী খালেদার মুক্তির জন্য জনমত গড়ব, কথা বলব। অন্য কোনো দলে যাওয়া কোনো চিন্তা আমার নেই। দলের সিদ্ধান্তে আমার কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি অনুগত থাকব। একজন কর্মী হিসাবে রাজনীতি করে যাব।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সঙ্গে কথা বলেন এটিএম কামাল। তিনি বলেন, অবশ্যই দল ক্ষমতা রাখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার। তবে অপরাধটা এত বড় ছিল না যে কঠিন শাস্তি আমাদেরকে দেওয়া হবে। লঘু পাপে গুরুদ-ের মতো মনে হচ্ছে। বহিষ্কারের আগে শোকজও করেনি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার তো একটা দরকার ছিল। এটা দিলে ভালো হতো, সুন্দর হতো। যে দলটার জন্য নিজের জীবন শেষ করেছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, অনেকবার কারাগারে গিয়েছি। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অনেক ক্ষত আছে সেগুলো এই দলের জন্যই। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে সেখানে আজকে দল যেভাবে ছুড়ে ফেলে দিল, সেখানে আর আমার দলের কাছে কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। তবে আমি দলের সমর্থক হিসাবে থাকব। কিন্তু আর সক্রিভাবে রাজনীতি করার মতো মানসিক অবস্থা নেই।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করবেন কিনা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য কোনো দলে যাওয়ার কোনো চিন্তাই করি না। কারণ পারিবারিকভাবেই বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। শহীদ জিয়ার সততা এবং স্বাধীনতার ঘোষণা এমনভাবে আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে যে, এই দলের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করার সুযোগ নেই। তারেক রহমানকে ভালোবাসি, খালেদা জিয়া ও শহিদ জিয়াকে ভালোবাসি-এই ভালোবাসা নিয়েই সারা জীবন থাকতে চাই।
এটিএম কামাল বলেন, দুই যুগ পর্যন্ত এই দলের রাজনীতি করি। আমারা মা শাহানা খানম চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন। জাগোদল থেকে এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মা এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
আপনার মতামত লিখুন :