নারায়ণগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নে চিহ্নিত রাজাকারের উত্তরসূরীরা দোর্দান্ড দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের ছেলে শুভ বেপরোয়া হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
সবশেষ বন্দরে এক সাংবাদিকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে শুভ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ২ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার লাঙ্গলবন্ধ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার ভুক্তভোগী সাংবাদিকের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে বাদী রুমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী নুরুজ্জামান সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী। শুক্রবার সন্ধ্যায় লাঙ্গলবন্ধ এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে রাজু আহম্মেদের সাথে কথা বলছিলো। এসময় একটি সাদা হাইএস গাড়ি নিয়ে শুভ ও তার অনুসারীরা চায়ের দোকানে ঢুকে আমার স্বামীকে গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার স্বামী ও রাজুকে মারার জন্য লোহার পাইপ, লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ব্যবসার জন্য আনা ২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এর আগে বন্দরে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চাওয়ায় মদ খেয়ে গভীর রাতে টহল ডিউটি পুলিশের ওপর হামলা চালায় এক ইউপি চেয়ারম্যান পুত্র ও তার বাহিনী। এ ঘটনায় ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুড়িপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যান পুত্র মাহমুদুল হাসান শুভকে (৩২) গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ।
রাত ১২টায় কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই শফিউল্লাহ সহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে টহল ডিউটি পুলিশের গাড়ি লাঙ্গলবন্দ বাসস্ট্যান্ড অবস্থান নেওয়ার পর রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে একজন যাচ্ছে। এসময় টহল ডিউটি পুলিশ মোটরসাইকেল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন এবং তার পরিচয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান পুত্র শুভর লোক পরিচয় দেয় এবং বিয়ে বাড়িতে আসেছেন বললে তাকে পাঠিয়ে দেন। মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ'র নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল পুলিশের ওপর উপুর্যপরি হামলা চালায়। এসময় পুলিশের গাড়ি চালক কনেস্টবল সহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। এঘটনায় পুলিশের এএসআই শফিউল্লাহ বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
বন্দরে টোটাল ফ্যাশনে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এক ইউপি সদস্যকে কারখানা থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা চেষ্টার অভিযোগে রাজাকারের নাতি হিসেবে পরিচিত মুছাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাকসুদের ছেলে মাহমুদুর হাসান শুভর বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে গুরুতর আহত করাসহ ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে।
বন্দরে হুমকি-ধমকি দিয়ে ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবারকে গ্রামছাড়া এবং স্বজনদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজাকারের পুত্র মাকসুদ হোসেনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ওই কিশোরী বন্দর থানায় এই মামলা করে। ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ ছাড়াও আমিনুল শেখ, ধর্ষক আলমগীর, তার ভাই আল আমিন, বাবা শুকুর আলী, মা নাসিমা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ধর্ষক রকির ভাই আসলাম, জিয়াদ, শরিফ, আরিফ, রনি, অনিক, সুমন, নিলুফা, আবু তাহের ও শামীমকে মামলায় আসামি করা হয়। শবেবরাতের রাতে বন্দরের লাঙ্গলবন্দ চিড়ইপাড়া নন্দনকানন কলোনীতে গণধর্ষণের শিকার হয় ওই কিশোরী।
ামতাল এলাকার এসএইচকে নামে এক গার্মেন্টে থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের জিম্মি করে রাজাকারের নাতি হিসেবে পরিচিত চেয়ারম্যান মাকসুদের ছেলে মাসুদুর রহমান শুভর নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল গোডাউন থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার ঝুট মালামাল কাভার্ডভ্যানে করে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে মুছাপুরের চিহ্নিত রাজাকারের উত্তরসূরীদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হলেও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়না। বরং রাজাকারের উত্তরসূরীদের পক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। যে কারণে রাজাকারের উত্তরসূরীরা দিন দিন যেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তেমনি তাদের হাতে স্থানীয় লোকজন নির্যাতিত নিষ্পেষিত হওয়ার সংখ্যাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বিজয়ের মাসেও তাদের দাপুটে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে অনেকটাই হতবাক সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে কঠোর অ্যাকশন নেয়ার দাবি জানিয়েছেন মুছাপুর ইউনিয়ন তথা বন্দরের সাধারণ মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন :