News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

সমবায় সমিতির নামে চার হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩, ১১:১২ পিএম সমবায় সমিতির নামে চার হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে চার হাজার গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মায়ের ছায়া শ্রমজীবী সমিতির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরেই ক্ষোভ চলে আসছে।

সর্বশেষ বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে বন্দরের উইলসন রোড এলাকার বন্দর জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকরা হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ধরে বিক্ষোভের পর বন্দর থানা পুলিশ গ্রাহকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেই সাথে তাদের টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন।

গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্দর জেনারেল হাসপাতালের মালিক নিপু দাসই হচ্ছে সমবায় সমিতির মালিক। তিনি সমিতির গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য হাসপাতালকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেই সাথে সমিতির নিপু দাস সবসময় হাসপাতালেই থাকেন। সেই সাথে হাসপাতালে থেকেই সমিতি পরিচালনা করেছেন। আর তাই তাঁরা হাসপাতাল ঘেরাও করেছেন।

সাজেদা বেগম নামে এক গ্রাহক বলেন, আমাদেরকে প্রথমে সুন্দর করে বুঝিয়ে শুনিয়ে বই করিয়েছে। আমরা বইয়ের মাধ্যমে গত এক বছর ধরে প্রতিদিন ১৩০ টাকা করে জমা দিয়েছি। গত এক বছরে আমাদের ৩৬ হাজার টাকা জমা হয়েছে। আমাদের ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেছিল। এখন টাকা উঠানোর সময় হয়েছে কিন্তু আমাদের টাকা দিচ্ছে না। দিচ্ছি দিবে বলে নানা রকমের টালবাহানা করছে।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম টাকাগুলো উঠিয়ে কোনো একটা কাজ করবো। আমার বাচ্চা অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমাদের কোনো লাভের দরকার নেই। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।

হাওয়া নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমরা খেয়ে না খেয়ে টাকা জমা দিয়েছি। সেই টাকাটা এখন ফেরত পাচ্ছি না। বিগত পাঁচ মাস ধরে আমাদের টাকা দিচ্ছে দিবে বলে ঘুরাচ্ছে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। টাকা না পেলে আমাদের মারা যাওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই। 

মায়ের ছায়া শ্রমজীবী সমিতির মাঠ কর্মী সুবর্ণা সাহা বলেন, আমাদের এই সমবায় সমিতি গত তিন বছর কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তিন বছরে সমিতির গ্রাহক হয়েছে প্রায় চার হাজার। সে হিসেবে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কয়েক কোটি টাকায়। প্রথম প্রথম ভালোই চলছিল। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে গ্রাহকদের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করছে না। আমরা গ্রাহকদের বিষয়টি জানিয়ে আসছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বিগত পাঁচ মাস ধরে আমাদের বেতনও পরিশোধ করছে না মালিকপক্ষ। বেতন দিবে দিবে বলে দিচ্ছে না। মালিকপক্ষ বলছে তাঁরা জায়গা কিনেছে। সেই জায়গা বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করছে না। যার কারণে গ্রাহকরা টাকার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন।

হাসপাতাল ভবন তথা হোসাইন টাওয়ারের মালিক মো. মামুন বলেন, বিগত পাঁচ মাস ধরে আমার ভাড়া পরিশোধ করছে না। প্রতিমাসে ৯০ হাজার টাকা করে ভাড়া দেয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে আমি তাদের কাছে ভাড়া বাবদ সাড়ে ৪ টাকা পাবো। ভাড়ার কথা বললেই নানা রকমের টালাবাহানা করছে।

সমবায় সমিতির মালিক নিপু দাস বলেন, আমার নামে একটি সমবায় সমিতির লাইসেন্স ছিল। সেই লাইসেন্সটি আমি আমার ভগ্নিপতিকে দিয়েছিলাম সমবায় সমিতি করে যেন কিছু একটা করতে পারে। এতে করে সাধারণ মানুষজনের উপকার হলো সেও কিছু লাভবান হলো। প্রথম প্রথম ভালোই চলছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে কি হলো বুঝতে পারছি না। সে নাকি গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে না। আমার সাথেও যোগাযোগ রাখছে না।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমার নামে সমবায় সমিতির লাইসেন্স। তাই আমাকেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। আমি আমার জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবো।

তবে ভগ্নিপতি ও সমবায় সমিতির ম্যানেজার দিলিপ দাস বলেন, গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা আমাদের কাছে জমা আছে। আর এই টাকাটা আমাদের মালিক নিপু দাস পর্যায়ক্রমে নিয়ে গেছেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে যে টাকাটা উঠানো হয়েছে সেই টাকাটা আর কাজে লাগানো হয়নি। যার কারণে গ্রাহকদের অনেক টাকা জমে গেছে। তাদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য গ্রাহকরা এখন বিক্ষোভ করছেন।

বন্দর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা এ বিষয়ে গ্রাহকদের সাথে কথা বলেছি। একই সাথে মালিকপক্ষের সাথেও কথা বলেছি। উভয় পক্ষের সাথে কথা বলার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

Islams Group
Islam's Group