ফতুল্লা থানার উত্তর মাসদাইর গাবতলী এলাকার বাসিন্দা খোন্দকার মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। চার সদস্যের একটি অপহরণকারীর দল গত ১৩ মার্চ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের এরিব্স স্কুলের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করেন। মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে তার কাছ থেকে নগদ ২৪ হাজার টাকা এবং ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল সেট কেড়ে নেয়া হয়। অপহরণ করার পর তাকে দীর্ঘক্ষন গাড়ির ভেতরে আটকে রাখা হয় এবং পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তার উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।
গতকাল মফিজুল ইসলাম নিজে এই প্রতিনিধির কাছে এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন অপহরনাকারীরা নিজেদেরকে ডিবির লোক পরিচয় দিলেও তারা আসলে একটি অপরাধী চক্র। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি গত ১৮ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনি ফতুল্লা থানায় এ বিষয়ে মামলা করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বরং তাকে মোবাইল ফোন হারিয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরী করার পরামর্শ দেয় পুলিশ এবং তিনি তাই করেন। তিনি আরো জানান, গাড়ির ড্রাইভার সহ অপহরণকারীরা চার জনই বরিশালের ভাষায় কথা বলেন। এতে তিনি বুঝতে পারেন অপরাধীরা চারজনই বরিশালের বাসিন্দা। প্রসঙ্গত মফিজুল ইসলাম টানা ত্রিশ বছর সৌদী আরবে বসবাস করেছেন। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন।
মফিজুল ইসলাম আরো জানান, ১৩ মার্চ সকাল আনুমানিক ১০টায় একটি ছেলে এসে তার কাছে একশ সৌদি রিয়েলের একটি নোট দেখিয়ে নোটটি আসল কিনা জানতে চান। তিনি নোটটি দেখে বলেন এটি আসল নোটই। তখন ওই ছেলে তাকে নোটটি ভাঙ্গিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি ছেলেটিকে মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে নোটটি ভাঙানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু ছেলেটি একেবারে ভোলাবালা সাজার অভিনয় করে তাকে বলেন তিনি যেনো নোটটি রেখে তাকে বাংলাদেশী টাকা দিয়ে দেন। তিনি তাই করেন। পরে ওই ছেলের সঙ্গে আরো একজন এসে মফিজুল ইসলামকে বলেন তার কাছে আরো দশটি একশো রিয়েলের নোট আছে। নোটগুলি আসল কিনা নকল সেটা পরীক্ষা করার জন্য তাকে তাদের সঙ্গে এরিবস স্কুল সংলগ্ন এলাকায় গেলে উপকার হতো। পরে তিনি সরল মনে তাদের সঙ্গে গেলে এরিবস স্কুলের সামনে আগে থেকে রাখা একটি মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয় দানকারী অপরাধীরা তাকে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসে তুলেই তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। এবং তার কাছে থাকা চব্বিশ হাজার নগদ টাকা এবং ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল সেট কেড়ে নেন। তারা মফিজুর ইসলামকে নির্মমভাবে প্রহার করতে থাকেন। ৬৫ বছর বয়স্ক মফিজুল ইসলামের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে অপহরণকারীরা তার দুই গালে চর মারতে থাকেন। এবং হাত পা সহ সারা শরীরে নির্মমভাবে পিটাতে থাকেন। সকাল ১১ টায় অপহরণ করার পর কয়েক ঘণ্টা তাকে মাইক্রো বাসের ভেতরে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। মাঝখানে এক পর্যায়ে মফিজুর ইসলামের ছোটো বোন মাসুমা খোন্দকারকে মফিজুল ইসলাম ফোন করে বলেন আমাকে ডিবি ধরেছে এবং মাদকের মামলা দেয়ার কথা বলে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তুমি পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে আমাকে বাঁচাও। তখন মাসুমা খোন্দকার অপরনকারীদের বলেন কোথায় টাকা দিতে হবে আমাকে বলেন আমি টাকা নিয়ে আসছি। অথবা আপনারা যদি ডিবির সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে আপনারা তাকে যেকোনো মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করুন। তখনই মাসুমা খন্দকার বুঝতে পারেন এরা ডিবির কেউ নয় বরং অপরাধী। তখন মাসুমা খোন্দকার তার পুলিশ সুপার দেবরকে বিষয়টি জানান এবং নারায়ণগঞ্জের ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানতে চান তাদের কোনো টিম এই ধরনের কাউকে গ্রেফতার করেছে কিনা। মূলত এর পরেই প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হলে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে মফিজুল ইসলামের মোবাইলে কল যেতে থাকে। এ সময় অপহরনকারীরা ভয় পেয়ে চিটাগাং রোডে নিয়ে মফিজুল ইসলামকে রাস্তায় ফেলে দেন। এই ঘটনার পর থেকে মফিজুল ইসলাম এখনো অসুস্থ্য অবস্থায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :