নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় আবুল কাশেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবুল কাশেম বরগাঁও গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে। এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে আরো একজন আহত হয়েছেন।
এদিকে নিহতের স্ত্রীর দাবি, র্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক মধ্যরাতে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। পাশের বাড়ির সেলিম নামে এক প্রতিবেশীকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে র্যাব পরিচয়দানকারীরা তার স্বামীকে সরাসরি তার সামনে পেটে গুলি করে হত্যা করেন।
নিহতের স্ত্রী রমিজা বেগম বলেন, উপজেলার বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী ও তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়ে দিয়ে ঘরের বাইরে বের হন। এসময় বাড়ির পাশে রাস্তার মধ্যে কয়েকজনের চিৎকার চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। রাস্তায় গিয়ে দেখতে পান তাদের পাশবর্তী বাড়ির সেলিম নামের এক যুবককে কয়েকজন জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি পড়া লোক টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছে। বৃদ্ধ আবুল কাশেম ওই লোকদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা ওই বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে দুটি আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বৃদ্ধ উত্তেজিত হয়ে মাটি থেকে উঠে হৈ চৈ করে সাদা পোশাকধারীদের গালি দেয়। একপর্যায়ে সাদা পোশাকধারীরা বৃদ্ধের পেটে গুলি করেন। ঘটনাস্থলে সে মারা যান। পরে তার লাশ সোনারগাঁ থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা করে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সাদা পোশাকধারী লোকজন গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন। এসময় হুমায়ুন কবির নামে একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সিজান বলেন, রাত ৩টা ১০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে জানা যায় হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তার নাভির উপরে একটি বুলেটের চিহ্ন আছে।
এ বিষয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক ল্যাফট্যানেন্ট কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, সোনারগাঁয়ে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে শুক্রবার। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র্যাবের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে র্যাব বাধা দেয়। এসময় তাঁরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসামিকে আটক করে আমরা নিয়ে আসি। শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে আমরা জানতে পারি একজন মারা গেছে। তবে সে কিভাবে মারা গেছে তা আমরা নিশ্চিত না।
সোনারগাঁ থাকার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ বলেন, হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ লাশ রয়েছে। সেখানে পুলিশ আছে। কীভাবে মারা গেছেন তা জানা যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :