নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল ৭টায় ফতুল্লা বিসিক প্যানটেক্স গার্মেন্টসের সম্মুখে শোকসভা ও শহীদ আমজাদ হোসেন কামালের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই শ্রমিক অভ্যুত্থানের অন্যতম শ্রমিক নেতা ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা নুর ইসলাম এবং অন্যান্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিক আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ২০০৩ সালে এই নারায়ণগঞ্জে লাখো লাখো শ্রমিকের প্রতি কর্মদিবসে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য হতো। আজ আমরা শ্রমিকেরা ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস পালন করি। মালিকেরা এখন ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করা শ্রমিকদের ওভার টাইম দিতে বাধ্য হয়, কিন্তু ২০০৩ সালে গার্মেন্টস মালিকেরা শ্রমিকদের এই ৮ ঘণ্টা কাজের জায়গায় ১০-১২ ঘণ্টা করতে বাধ্য করতো। এরই প্রতিবাদে শ্রমিকেরা দাবি জানিয়েছিল আমাদের কর্মদিবস ৮ ঘণ্টা করতে হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ এই আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে এবং শ্রমিকদের দাবি মেনে না নিয়ে পুলিশি নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছিল। ঐ সময় পুলিশ বাহিনী শ্রমিকদের উপর তা-ব চালায় এবং প্যানটেক্স গার্মেন্টসের শ্রমিক শহীদ আমজাদ হোসেন কামালকে গুলি করে হত্যা করেন। অতঃপর নারায়ণগঞ্জের লাখো লাখো শ্রমিক ১৫ দিনের জন্য নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে অচল করে দেন। তখন প্রশাসন বাধ্য হয় শ্রমিক আন্দেলনের উপর চালানো তাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের খরগ থামিয়ে দিতে। অবশেষে শ্রমিকদের আন্দোলনের দাবি মালিক পক্ষ মেনে নিতে বাধ্য হয়।
আজকে শ্রমিকদের রক্তের বিনিময়ে দাবি অর্জিত হলেও মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করে না। দ্রব্য মূল্য বাড়ছে কিন্তু মজুরি বাড়ছে না। শ্রমিক পরিবার নৃত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিভাবে কিনবে? তাই শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দরকার। শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি দ্রব্য প্রদান করা দরকার এবং শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্র প্রদান করার দরকার। প্রতিটি কারখানায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ের অধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে যেহেতু বিসিকে যে স্থানে আমজাদ হোসেন কামালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সে স্থানে শ্রমিকেরা প্রতি বছর শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তাই সে স্থানে শহীদ আমজাদ হোসেন কামালের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে। এই দাবি জানিয়ে সকল শ্রমিকবৃন্দ বিসিকে একটি শোক মিছিল প্রদক্ষিণ করে।
আপনার মতামত লিখুন :