আবির হোসেন। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। সাইকেল চালাচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গে জানালো এই নতুন সড়কে (চাঁদমারী রেললাইন হতে হাজীগঞ্জ মাজার) তারা প্রতিদিন বন্ধু বান্ধবরা মিলে সাইকেল চালায়। এত বড় রাস্তা ওই একটা মার্কেট আড়াল করে রেখেছে। চাঁদমারীতে লিংকরোডের পূর্বপাশে গাড়ির যন্ত্রাংশ সহ ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর কয়েকটি দোকান। এই দোকানগুলোর পেছনেই দুই লেনের চমৎকার নতুন সড়ক। অথচ সামনের মার্কেটের কারণে সড়কটি মানুষের চোখে পড়ে না। ওদিকটায় না গেলে বোঝার উপায় নেই চাঁদমারী রেললাইন ধরে হাজীগঞ্জ মাঝারের সামনে দিয়ে নতুন সড়কটি নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়কে গিয়ে ঠেকেছে। এ সড়কটির নাম প্রয়াত ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়ক।
চাঁদমারীতে মার্কেট এর পেছনেই সড়কের উত্তর পাশেই বিশাল রিক্সার গ্যারেজ। দু একজন রিক্সাচালকের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, ‘চাঁদমারী এলাকা বদলাইয়া গেছে। শুনছি মেয়র আইভী বেবাকতেরে (অবৈধ দখলদার) উঠাইয়া দিছে। পরে সরকার আইয়া সড়ক বানাইছে। কামডা খুবই ভালা অইছে। নাইলে আবার কোন নেতাখেতায় সরকারি জায়গা দখল করতো। ঘর বা দোকান বানাইয়া ভাড়া খাইতো। আমাগো মতন গরিব মাইনষে ভাড়া নিতাম। উচ্ছেদের সময় পুলিশের লাথি খাইতাম। নেতাগো পুলিশে পায় না। সরকার রাস্তা বাইনাইয়া অনেক ভালা করছে।’
মাউরাপট্টি মসজিদ সংলগ্ন মহল্লার বাসিন্দারা ও একই ধরনের কথা বলেছেন। তাদের মতে, এখন এই এলাকায় মাদকের আড্ডা কমছে। সরকার বিশাল রাস্তা তৈরী করে দিয়েছে জনগণের চলাচলের জন্য। রাস্তার দুই পাশ এখনো খালি আছে। জানিনা কয়দিন খালি থাকবো। নেতারা এলাকায় ঘোরাফেরা করতাছে। সড়কটা পুরাপুরি চালু অইবো কবে, কে জানে ? ওই একটা মার্কেট সামনে থাকায় লিংক রোডের গাড়িচালকরা এই সড়ক দেখতে পায় না। মার্কেটটা ভাঙ্গলেই রাস্তার মুখ দেখা যাবে।
তল্লা ছোট মসজিদ এলাকার ব্যবসায়ী ফজুলল হক বলেন, রেললাইন উঠিয়ে সরকার এতবড় রাস্তা তৈরী করেছে। আমরা খুবই খুশি। এলাকার পরিবেশ পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে। তল্লা সবুজবাগ এলাকার জমির দাম বেড়ে গেছে। তবে অনেক পুরনো লোক উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত। দীর্ঘদিন দোকানপাট করে সংসার চালাতো। এখনতো রাস্তার পরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। অনেকেই বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করবেন। অন্ততপক্ষে অবৈধ কোন কারবার আর নেই। নেই নেশাখোরদের আড্ডা।
হাজীগঞ্জ বাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার এতবড় সড়ক তৈরী করলো। অথচ এদিক দিয়ে এখনো খুব একটা গাড়ি চলাচল করে না। এক সময় এই রেললাইনের দু’পাশেই ছিল অবৈধ দখলদারদের দোকান পাট। কেউবা দোকান। কেউবা ক্লাব ঘর। আবার কেউবা ঘর তুলে থাকতেন সড়কের ঢালে। ঘরগুলো থাকতো অনেকটা দোতালা টাইপের। পাটাতনের নীচে ফ্যামিলি বাসা। উপরে দোকান। এই ব্যবসা এখন আর নাই। সকালে এলাকার লোকজন মুক্ত বায়ু সেবন করে। মর্নিংওয়াক করতে দল বেঁধে বের হন।
তবে সবচেয়ে ইতিবাচক কথা বলেন, খানপুর বৌবাজার ও উত্তর চাষাঢ়ার বাসিন্দারা। তাদের মতে, আমরা সারা বছর খানপুর রেললাইন এলাকা, মাউরাপট্টি, শিক্সন বাড়ি ও আশপাশ এলাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতো। ওই পয়েন্টগুলোতে দেদারছে বিক্রি হত মাদক। চলতো জুয়ার আড্ডা। অনেক অভিযান চালিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই এলাকার মাদক নির্মূল করতে পারেনি। কিন্তু সড়কটি হওয়ার পর মাদক বিক্রেতারা এলাকা থেকে সরে গেছে। আগে চানমারী দিয়ে রেললাইন ধরে খানপুর পর্যন্ত যেতে রাতের বেলায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হত। এখন সে সমস্যা নাই। যে সড়কটি এলাকার পরিবেশ আমূল পরিবর্তন করে দিল সেই সড়কটির মুখেই কিনা মার্কেট এর প্রতিবন্ধকতা। এ যেনো গোড়ায় গলদ!
আপনার মতামত লিখুন :